নির্বাচনে প্রভাব ফেলতেই জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা, মত সেনাবাহিনীর

দেশের গণতন্ত্রকেই আঘাত করতে চাইছে জঙ্গিরা। শনিবার এমন কড়া ভাষাতেই জম্মু-কাশ্মীরের জঙ্গি হামলার সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবারের ওই জঙ্গি হানায় ইতিমধ্যেই ২১ জনের প্রাণ গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল-সহ সেনাবাহিনীর আট জওয়ানও রয়েছেন। নিহত হয়েছেন দু’জন সাধারণ নাগরিকও। বাকি নিহতেরা জঙ্গি বলেই সেনার দাবি। ওই দিনই টুইটারে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছিলেন মোদী। এ দিন ঝাড়খণ্ডে এক নির্বাচনী সভায় এই প্রসঙ্গে ফের সরব হন তিনি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৩:৩২
Share:

শ্রীনগরের রাস্তায় চলছে টহলদারি। ছবি: এএফপি।

দেশের গণতন্ত্রকেই আঘাত করতে চাইছে জঙ্গিরা। শনিবার এমন কড়া ভাষাতেই জম্মু-কাশ্মীরের জঙ্গি হামলার সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

শুক্রবারের ওই জঙ্গি হানায় ইতিমধ্যেই ২১ জনের প্রাণ গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল-সহ সেনাবাহিনীর আট জওয়ানও রয়েছেন। নিহত হয়েছেন দু’জন সাধারণ নাগরিকও। বাকি নিহতেরা জঙ্গি বলেই সেনার দাবি। ওই দিনই টুইটারে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছিলেন মোদী। এ দিন ঝাড়খণ্ডে এক নির্বাচনী সভায় এই প্রসঙ্গে ফের সরব হন তিনি। তিনি বলেন, “জঙ্গিরা ভারতীয় গণতন্ত্রকে আঘাত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু, সাহসী ভারতীয় জওয়ানরা তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করেছে।”

ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরেও পাঁচ দফার নির্বাচন পর্ব চলছে। এমনিতেই শুক্রবারের জঙ্গি হামলার রেশ এখনও কাটেনি। রাজ্যে নির্বাচন চলছে বলে প্রশাসনের কাছে তা আরও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেনার আশঙ্কা, তৃতীয় দফার ভোটের আগে ফের জঙ্গি হামলা হতে পারে উপত্যকায়। এরই মধ্যে আগামী সোমবার কাশ্মীরে নির্বাচনী প্রচারে যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর। সব মিলিয়ে রাজ্য প্রশাসনের কপালে ভাঁজ দেখা দিয়েছে। এরই পাশাপাশি, ওই দিনের হামলা ভোটারদেরও প্রভাবিত করতে পারে বলেও সেনা অফিসারদের একাংশের ধারণা।

Advertisement

কিন্তু ভোটের সঙ্গে জঙ্গি হানার কী সম্পর্ক?

শীর্ষস্থানীয় এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, “ভোট বানচাল করার উদ্দেশ্যেই এই জঙ্গি হানা।” তিনি জানান, প্রথম দু’দফায় রাজ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়েছে। যদিও ভোট শুরু হওয়ার আগে থেকেই হুরিয়ত-সহ রাজ্যের বেশ কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন তা বয়কটের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু, নাশকতার যাবতীয় হুমকি অগ্রাহ্য করেই প্রথম দু’দফায় মানুষ অবাধে ভোট দিয়েছেন বলে প্রশাসনের দাবি। ওই আধিকারিকের মতে, এই নাশকতার পরে লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।

ঘটনায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী। ‘ভোটের মুখে শান্তিভঙ্গ’ লিখে টুইটারে কড়া বার্তা দেনও তিনি। এ দিন আরও এক ধাপ এগিয়ে হজারিবাগের এক নির্বাচনী সভা থেকে সন্ত্রাদবাদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেন তিনি। বিস্ফোরণের ওই ঘটনার পরে পাকিস্তানকে নিশানায় রেখে তোপ দেগেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও। পাশাপাশি, জঙ্গি হানায় নিহত জওয়ানদের পরিবারের প্রতি শোকজ্ঞাপন করে এ দিন জঙ্গি হানার তীব্র বিরোধিতা করেছে ওবামা সরকারও।

আগামী সোমবার শ্রীনগরের শের-ই কাশ্মীর স্টেডিয়ামে মোদীর নির্বাচনী সভা। তার আগেই কার্যত নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা রাজ্যকে। নিরাপত্তার খাতিরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু রাস্তা। এ দিন রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার কথা সেনা-প্রধান দলবীর সিংহ সুহাগের। নির্বাচনের যাবতীয় ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে রাজ্যে আসতে পারেন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকেরাও। তবে সেনাদের সঙ্গে জরুরি আলোচনার পরেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

রাজ্যে পাঁচ দফার নির্বাচন চলছে। ইতিমধ্যেই দু’দফার নির্বাচন শেষ হয়েছে। তৃতীয় দফার ভোট আগামী মঙ্গলবার। তার আগে এই হামলা রাজ্যে অস্থিরতা তৈরির জন্য সুপরিকল্পিত ভাবেই করা হয়েছে বলে মত সেনা বাহিনীর। শীতের প্রকোপ বাড়ার আগেই পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে জঙ্গিদের একটা বড়সড় দল ভারতে ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে তাদের দাবি। এক শীর্ষ সেনা আধিকারিকের কথায়, “প্রথম দু’দফার ভোটগ্রহণে বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে নির্বাচনের পরবর্তী দিনগুলিকে নিশানা করছে জঙ্গিরা।” এই সময়টায় রাজ্যে জুড়ে প্রবল ঠান্ডা এবং বরফ জমে থাকে। আর সে কারণেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দ্রুত যাতায়াত করতে নিরাপত্তারক্ষীদের বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়। জঙ্গি সংগঠনগুলি এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চায় বলে সেনাবাহিনীর দাবি।

শুক্রবার ভোর তিনটে থেকে শুরু করে মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে চার-চারটি জঙ্গি হামলা হয়। তার পাল্টা দেয় ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষীবাহিনীও। শ্রীনগর, উরি, সোপিয়ান ও ত্রাল-সহ রাজ্যের একটা বড় অংশ এখনও থমথমে রয়েছে। ওই দিনের সংঘর্ষে নিহত হন এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল-সহ আট জওয়ান। মারা গিয়েছেন তিন পুলিশকর্মীও। সংঘর্ষে ৬ জঙ্গির মৃত্যু হয়। প্রাণ যায় দুই সাধারণ নাগরিকেরও। পুলিশের সঙ্গে অন্য একটি সংঘর্ষে মারা যায় আরও দুই লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি। সব মিলিয়ে ওই দিন ২১ জনের প্রাণ যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন