ফের পুলিশের উপর হামলা, এ বার ইসলামপুরে

আবার আক্রান্ত পুলিশ। আবারও অভিযোগের আঙুল সেই তৃণমূলের দিকে। বোলপুর, আলিপুর, নোয়াপাড়ার পর এ বার উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর। স্থানীয় রামগঞ্জ ফাঁড়িতে ভাঙচুরের পাশাপাশি জেনারেল ডায়েরির খাতা, অ্যারেস্ট মেমো-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:৫৫
Share:

রামগঞ্জ ফাঁড়িতে ভাঙচুরের পর। ছবি: অভিজিৎ পাল।

আবার আক্রান্ত পুলিশ। আবারও অভিযোগের আঙুল সেই তৃণমূলের দিকে। বোলপুর, আলিপুর, নোয়াপাড়ার পর এ বার উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর। স্থানীয় রামগঞ্জ ফাঁড়িতে ভাঙচুরের পাশাপাশি জেনারেল ডায়েরির খাতা, অ্যারেস্ট মেমো-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার ধৃতদের তিন জনকে পুলিশি হেফাজত এবং বাকিদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Advertisement

এই ঘটনায় তৃণমূলের ইসলামপুর ব্লক সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিশ আলমকে আটক করা হয়। তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন। পরে যদিও তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিরোধীদের দাবি, তৃণমূলের উপর তলার নির্দেশেই তাঁকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

ঘটনার সূত্রপাত ওই দিন রাতে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামগঞ্জ এলাকার বেশ কয়েকটি লটারি টিকিটের দোকানে ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। তাদের দাবি, ওই দোকানগুলির কারণে এলাকার অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। খবর পাওয়ামাত্র ঘটনাস্থলে রামগঞ্জ ফাঁড়ির পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর পর ওই লটারির দোকানের মালিকেরা পুলিশের কাছে দাবি জানাতে থাকেন, যারা ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত তাদের গ্রেফতার করতে হবে। দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। অভিযোগ, এর মধ্যেই এক দল লোক কিলোমিটার খানেক দূরের পুলিশ ফাঁড়িতে পৌঁছে সেখানে হামলা চালায়।

Advertisement

গণ্ডগোল থামাতে ফাঁড়ির বেশির ভাগ পুলিশ কর্মী তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন। ফাঁড়িতে ছিলেন মাত্র এক জন কর্মী। হামলাকারীরা সেই সুযোগ নেয়। ফাঁড়ির ভেতরের চেয়ার এবং বেঞ্চ ভাঙচুর করে সেগুলি বাইরে বের করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ফাঁড়ির জেনারেল ডায়েরির খাতা, অ্যারেস্ট মেমো-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি। ঘটনাস্থলে সেই সময় হাজির ছিলেন তৃণমূল নেতা ইদ্রিশ আলম। তাঁর দাবি, গণ্ডগোলের খবর পেয়ে তিনি ফাঁড়িতে গিয়েছিলেন। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, সেই সময় ইসলামপুর থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী আসে। তারা বেধড়ক লাঠি চার্জও করে। তাঁকেও লাঠির বাড়ি খেতে হয় বলে জানিয়েছেন ইদ্রিশ।

লটারির দোকান এবং ফাঁড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন তাঁদের ইসলামপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আত্রেয়ী মান্না চৌধুরীর এজলাসে তোলা হয়। বিচারক তাদের তিন জনকে পুলিশি হেফাজতে রাখার পাশাপাশি বাকি আট জনকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

বিরোধীদের অভিযোগ, ইদ্রিশ আলমর নেতৃত্বেই ফাঁড়িতে হামলা চালানো হয়। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ফাঁড়িতে যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের বেশির ভাগই তৃণমূল সমর্থক। তা সত্ত্বেও কী ভাবে ইদ্রিশ আলমকে ছেড়ে দিল পুলিশ? সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটির সদস্য বিকাশ দাস বলেন, “তৃণমূল নেতাদের চাপে পড়েই পুলিশ বাধ্য হয়ে ওঁকে ছেড়ে দিয়েছে।” যদিও ইদ্রিশ আলমর দাবি, “এলাকায় গণ্ডগোলের খবর পেয়ে ফাঁড়িতে গিয়েছিলাম। এই ঘটনায় আমার কোনও যোগ নেই। পরে পুলিশ সেটা বুঝেছে। সেই কারণেই আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।” ইদ্রিশের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন ইসলামপুরের ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেহতাব চৌধুরী। তিনি বলেন, “পুলিশ তদন্ত করে দেখেছে, ইদ্রিশ এই ঘটনায় জড়িত নয়। তাই ওঁকে ছেড়ে দিয়েছে। দলের কেউই এই ঘটনায় জড়িত নয়।”

আর পুলিশ কী বলছে?

ইসলামপুরের এসডিপিও বৈভব তিওয়ারি বলেন, “ফাঁড়িতে ঢুকে কিছু লোক হামলা চালায়। ঘটনায় কয়েক জনকে গ্রেফতার করে মামলা রুজু করার পর তদন্ত শুরু হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন