মাঝে মাত্র কয়েক ঘণ্টার তফাত্, রবিবার ভোরের আলো ফুটতেই ফের রণক্ষেত্র হয়ে উঠল পাড়ুইয়ের চৌমণ্ডলপুর, সিরশিট্টা এবং যাদবপুর গ্রাম। এ দিন ফের মাস্কেটবাহিনী তাণ্ডব চালায় চৌমণ্ডলপুরে। তাদের গুলিতে মৃত্যু হয় শেখ জসিমুদ্দিন নামে এক যুবকের। তিনি বিজেপি সমর্থক বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, জসিমুদ্দিন মাঠে যখন ধান কাটছিলেন তখন মাস্কেটবাহিনী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। মৃতের বাবা এক্রামুল হক ছেলের মৃত্যুর জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছেন। বিজেপির অভিযোগ, সিরশিট্টা গ্রাম থেকে ওই মাস্কেটবাহিনী এসেছিল। তাদের আরও অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই হামলা চালিয়েছে। যদিও তৃণমূল তা অস্বীকার করেছে। এ দিন সকাল থেকেই সিরশিট্টা গ্রামে বোমাবাজি শুরু হয়। সঙ্গে বাড়ি ভাঙচুর ও লুঠপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। সংঘর্ষের জেরে ওই গ্রামে গুলিবিদ্ধ হন শেখ হাসান নামে ব্যক্তি। তাঁকে সিউড়ি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্য দিকে, একই ছবি দেখা গিয়েছে পার্শ্ববর্তী গ্রাম যাদবপুরেও। সেখানে তৃণমূলের উপপ্রধান মহসীন মোল্লা-সহ ১০ জনের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুঠপাট চালায় এক দল দুষ্কৃতী। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই হামলা চালিয়েছে।
শনিবার সকালে বনশঙ্কা পঞ্চায়েতের সিরশিট্টা গ্রামে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছয়। পুলিশকে কার্যত তোয়াক্কা না করেই তাদের সামনে লড়াই চলতে থাকে। শূন্যে গুলি চালিয়েও কোনও পক্ষকেই নিরস্ত করতে পারেনি পুলিশ। তাদের সামনে এ ধরনের ঘটনায় ক্ষোভ উগরে দেন গ্রামবাসীরা। ওই দিনের ঘটনায় রাত পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। রাত পেরোতেই এ দিন সকাল থেকে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়।
গত ১২ তারিখ পাড়ুইয়ের ইমাদপুরে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন এক বিজেপি কর্মী। আহত হন আরও পাঁচ জন। ওই দিন পাড়ুই বাজার লাগোয়া মাঠে জনসভা ছিল বিজেপির। ঘটনার সূত্রপাত জনসভায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে। এক বিজেপি সমর্থককে প্রথমে মারধর করে কয়েক জন তৃণমূল সমর্থক। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় অশান্তি। সেই অশান্তির আগুনেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ইমাদপুর।
তৃণমূলের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত বীরভূম। দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের খাস তালুকও বটে! গত দু’মাস ধরে অনুব্রতের এই খাস তালুকে একের পর এক সংঘর্ষ এবং পুলিশের উপর হামলা হয়েই চলেছে।
গত ২৪ অক্টোবর পাড়ুইয়ের চৌমণ্ডলপুরে বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের মারে আহত হন পাড়ুই থানার ওসি প্রসেনজিত্ দত্ত। গ্রাম দখলের লড়াইয়ের জন্যই এলাকায় বোমা মজুত রাখার প্রসঙ্গ উঠে আসে। শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা। অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগে বিজেপি ও তৃণমূল একে অপরের ঘাড়ে দায় চাপানোর চেষ্টা করে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের শাসকদল ও বিজেপির সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পার্শ্ববর্তী গ্রাম মাখড়া। গত ২৭ অক্টোবরে দু’পক্ষের গুলি ও বোমাবাজিতে প্রাণ হারান তিন জন। সে দিনও পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। গ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় পুলিশকে। অসহায় ভাবে গ্রামের বাইরে থেকেই লড়াই দেখতে থাকেন তারা। পরে অবশ্য গ্রামে পুলিশবাহিনী ঢুকতে পেরেছিল। কিন্তু তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু তার মধ্যেও থেমে থাকেনি অশান্তি।