বিদ্রোহীদের অগ্রগতি কিছুটা হলেও থামাতে সক্ষম হল ইরাকের সেনা। শুধু অগ্রগতি থামানোই নয়, শনিবার বিদ্রোহীদের হাত থেকে কয়েকটি শহর পুনরুদ্ধারও করেছে তারা। ক্যাবিনেট তাঁর হাতে বিদ্রোহ দমনে সমস্ত ক্ষমতা দিচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর ইরাকের সেনা নতুন উদ্যমে বিদ্রোহ দমনে নেমে পড়ে।
কিছু দিন ধরেই একের পরে এক শহর দখল করে বাগদাদের দিকে এগিয়ে আসছিল সুন্নি জঙ্গি সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ত’ (আইএসআইএল)। এক সময়ে তারা বাগদাদ থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরের ধুলুইয়া শহরেরও দখল নিয়ে নেয়। ইরাকের এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রশাসন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ড্রোন-সহ নানা সাহায্যের কথা চিন্তা করছে হোয়াইট হাউস। তবে আপাতত সেনা পাঠানোর কথা আমেরিকা বাতিল করে দিয়েছে।
ইরাকের প্রশাসন সূত্রে খবর, সালাহেদ্দিন অঞ্চলে ইশাকি শহর দখল নেওয়ার পরে সেখানে ১২ জন পুলিশকর্মীর পোড়া দেহ পাওয়া গিয়েছে। কাছের মুয়াত্তাসাম অঞ্চল ইরাকি সেনার দখলে এসেছে বলে খবর। শুক্রবার রাতে ইরাকের সেনা ও বাসিন্দারা যৌথ ভাবে ধুলুইয়া শহর থেকেও বিদ্রোহীদের হটিয়ে দেয়। ইরাকের সেনাবাহিনী দিয়ালা অঞ্চলের মুগদাদিয়ায় বিদ্রোহীদের অগ্রগতি আটকাতে সক্ষম হয়েছে বলে ইরাক প্রশাসন সূত্রে খবর। সালাহেদ্দিন অঞ্চলের আরও উত্তরে সামারায় বিদ্রোহীদের ঠেকাতে অতিরিক্ত সেনা পাঠানো হচ্ছে। এখানে শিয়াদের একটি ধর্মীয় স্থান রয়েছে।
এ দিকে, ইরাকে শিয়াদের অন্যতম ধর্মগুরু আয়াতুল্লা আলি আল-সিসতানি সুন্নি জঙ্গিদের ঠেকাতে শিয়াদের হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর পরেই ইরাকের নানা শহরে শিয়ারা অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এতে ইরাকের গোষ্ঠী সংঘর্ষ আরও বাড়বে। এর পরে পূর্ণমাত্রায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ইরাকের অখণ্ডতা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
ইরাকের অবস্থা ওবামা প্রশাসনকেও কঠিন সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। ইরাকের নীতি নিয়ে ঘরে বাইরে ওবামা প্রশাসনকে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের আশঙ্কা, ইরাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়াদের রক্ষা করতে ইরান এগিয়ে আসতে পারে। ফলে ইরাকের অবস্থা সিরিয়ার মতোই হতে চলেছে বলে তাঁদের আশঙ্কা। মার্কিন প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ইরানের রিভলিউশনারি গার্ড-এর প্রধান কোয়াসিম সুলেইমানির দুই বিশ্বস্ত সঙ্গী ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মালিকিকে পরামর্শ দিচ্ছেন।
এ দিকে, প্রধানমন্ত্রী মালিকি শুক্রবার সামারা শহরে গিয়ে নিরাপত্তা বিষয়ে বৈঠক করেন। সেখানেই তিনি ক্যাবিনেট তাঁর হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছে বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু এই ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এর আগে ইরাকের সংসদে জরুরি অবস্থা জারি করার জন্য ক্ষমতাশীল মালিকি সরকার যে আবেদন করেছিল তা কোরামের অভাবে পাশ হয়নি। সে ক্ষেত্রে মালিকির এই ঘোষণা তাঁর হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার আরও একটি চেষ্টা বলে বিরোধীদের অভিযোগ।