(বাঁ দিকে) আক্রান্ত পুলিশের গাড়ি। (ডান দিকে) পাড়ুই থানার আক্রান্ত ওসি। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
শিরোনামে ফের পাড়ুই!
এ বারেও আক্রান্ত পুলিশ। বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে শুক্রবার দুপুরে দুষ্কৃতীদের হাতে গুরুতর জখম হয়েছেন পাড়ুই থানার ওসি প্রসেনজিত্ দত্ত। ঘটনাটি ঘটেছে পাড়ুইয়ের মঙ্গলডিহি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। ঘটনায় জখম হয়েছেন গুপ্ত হালুয়াই নামে আরও এক জন কনস্টেবল। তাঁদের দু’জনকেই সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রসেনজিৎবাবুর মাথার বাঁ দিকে আঘাত লেগেছে। এই নিয়ে গত পাঁচ মাসে বীরভূমেই চার বার আক্রান্ত হল পুলিশ। এ দিনের ঘটনায় পরস্পরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে তৃণমূল এবং বিজেপি।
প্রচুর বোমা মজুত আছে খবর পেয়ে এ দিন সকালে দু’টি গাড়িতে মোট ১১ জন পুলিশকর্মী শাকতোড়ের উদ্দেশে রওনা দেন। পুলিশ জানায়, শাকতোড় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি পরিত্যক্ত ঘরে বোমা ও বিস্ফোরক রাখা আছে বলে খবর ছিল। তল্লাশি চালিয়ে শাকতোড় থেকে ১৪টি জারিকেন বোঝাই প্রায় দু’শোটি বোমা উদ্ধার করে আনার পরে থানায় খবর আসে, মঙ্গলডিহির চৌমণ্ডলপুর গ্রামেও প্রচুর বোমার মশলা মজুত করে রাখা আছে। দুপুরের দিকে কয়েক জন পুলিশকর্মীকে নিয়ে মঙ্গলডিহি রওনা দেন প্রসেনজিৎবাবু। স্থানীয় সূত্রে খবর, পুলিশ দেখেই কয়েক জন দৌড়ে গ্রামে ঢুকে পড়েন। এই সময়েই পুলিশ শূন্যে এক রাউন্ড গুলি চালায় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। পুলিশ যদিও গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেনি। এর পরেই প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশবাহিনী। পুলিশের অভিযোগ, গ্রামের কিছু মহিলা তাঁদের গাড়ি ঘিরে ধরে হামলা চালায়। এর পরে বেশ কিছু লোকজন পুলিশকে ঘিরে ধরে লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে আক্রমণ করে। অভিযোগ, তাঁদের লক্ষ করে বোমাও ছোড়া হয়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রবল প্রতিরোধের মুখে পুলিশ গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। গাড়ি লক্ষ করেও বোমা ছোড়া হয়। চলন্ত গাড়িতে ওসি উঠতে পারেননি। লাঠির বাড়ি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। কিছুটা গিয়েই পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করতে ফের গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। প্রসেনজিৎবাবু এবং জখম আরও এক পুলিশকর্মীকে কোনওক্রমে উদ্ধার করে সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।
পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার পরে জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী চৌমণ্ডলপুর গ্রামে গিয়ে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে। এই দলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বেশ কয়েকটি থানার ওসির সঙ্গে কমব্যাট ফোর্সও আছে। এসপি জানান, এখনও পর্যন্ত মোট ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে চলছে পারস্পরিক দোষারপের পালা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন কলকাতায় বলেন, “ওই জেলায় তৃণমূলের নেতা বলেছিলেন পুলিশকে বোমা মারতে। কয়েক দিন আগে আবার জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ বলল, পুলিশের তল্লাশি নিন। এই সব হুমকির পরে প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার পরিণতিতেই এই সব ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বলে রাজ্যে কিছু নেই।” যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা বলেছেন, “বিজেপি তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। বীরভূমের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হচ্ছে। অপরাধীরা ছাড় পাবে না।” ঘটনার সঙ্গে বিজেপির যোগসাজসের দিকে ইঙ্গিত করে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “পুলিশের উপর আক্রমণ অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। পুলিশ অপরাধীদের খুঁজে বার করবে। কেউ ছাড় পাবে না।”
চাপানউতোর চলছে জেলাস্তরেও। বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের অভিযোগ, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শূন্যে গুলি চালায়। এতেই জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তবে এই ঘটনায় তাঁদের দলের কোনও হাত নেই। তৃণমূল পরিকল্পিত ভাবে গোটা ঘটনার দায় বিজেপির উপরে চাপাচ্ছে। যদিও পাল্টা অভিযোগ এনে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “ওখানে শেখ সদাইয়ের নেতৃত্বে বিজেপি এই কাজ করেছে। ওই গ্রামে অনেক দুষ্কৃতী আছে। এই কাজ তৃণমূলের নয়। আমরা এর নিন্দা করছি।”
বার বার নিশানায় জেলা পুলিশ
৩ জুন, ২০১৪
বীরভূমের দুবরাজপুরের গোপালপুর গ্রামে পুকুর কাটাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষে আহত হন এক পুলিশ কর্মী। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয়। অভিযোগ, সেই সময় পুলিশকে লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয়। বোমার আঘাতে গুরুতর আহত হন দুবরাজপুর থানার সাব ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তী। তাঁকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় এক মাস পর তাঁর মৃত্যু হয়। খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত, দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের শেখ আলিম এখনও অধরা।
১৯ জুলাই, ২০১৪
পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বিবাদের জেরে ভাঙচুর চালানো হয় খয়রাশোল থানার অধীন লোকপুর ফাঁড়িতে। ঘটনায় শাসক দলের ২৯ জন নেতা-কর্মীর নামে অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। অভিযুক্তদের কয়েক জন গ্রেফতার হলেও বাকিরা এখনও অধরা।
৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
মদ্যপ অবস্থায় দলবল নিয়ে বোলপুর থানায় ঢুকে ডিউটি অফিসারকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তত্কালীন জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সুদীপ্ত ঘোষের বিরুদ্ধে। সুদীপ্ত-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে পুলিশ। তবে এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তরা কেউই গ্রেফতার হয়নি।