হামলায় আহত ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি সায়নদীপ মিত্র। ছবি: বিতান ভট্টাচার্য।
বেলঘরিয়ায় সিপিএম পার্টি অফিসে হামলা ও প্রার্থীদের মারধরের ঘটনায় রবিবার সকালে গ্রেফতার করা হল পাঁচ জনকে। ধৃতদের মধ্যে ২ জনের নাম আগেই এফআইআর-এ ছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এরা হলেন সন্তু চ্যাটার্জি ও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। এই দু’জনকে জেরা করেই বাকি তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও ধৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে পুলিশ কিছু জানায়নি।
শনিবার সন্ধ্যায় বেলঘরিয়ার দক্ষিণপাড়ার ভগবতী চ্যাটার্জি স্ট্রিটে সিপিএম পার্টি অফিসে হামলা চালায় এক দল দুষ্কৃতী। হামলায় জখম হন ৬ সিপিএম নেতা। তাঁদের ভর্তি করা হয় স্থানীয় নার্সিংহোমে। এই ঘটনার পর ওই দিনই উত্তর ২৪ পরগনার সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম দেব হুমকি দেন রবিবার সকাল ন’টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে দল। তার পর থেকেই নড়েচড়ে বসে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। সিপিএমের এইআইআর-এর ভিত্তিতে এ দিন সকালেই গ্রেফতার করা হয় ওই পাঁচ জনকে।
এ দিন সকালে বেলঘরিয়া নার্সিংহোমের সামনে সিপিএমের কর্মী সমর্থকরা জমায়েত হন। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ হামলায় আক্রান্ত নেতাদের সঙ্গে নার্সিংহোমে দেখা করতে আসেন দলের সাধারণ সম্পাদক বিমান বসু, মঞ্জুকুমার মজুমদার, ক্ষিতি গোস্বামী এবং সিপিএম প্রার্থী অসীম দাশগুপ্ত-সহ বামফ্রন্টের অন্যান্য নেতারা।
আহত সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে
যাচ্ছেন বিমান বসু। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
বিমানবাবু নার্সিংহোম ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরই কর্মী সমর্থকরা বেলঘরিয়ার রথতলা মোড়ে বি টি রোড অবরোধ করেন। সিপিএমের অভিযোগ, সেই সময় তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীরা ইট, লাঠি নিয়ে তাঁদের উপর চড়াও হয়। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভয়ও দেখানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে পৌঁছয় ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পদস্থ কর্তারা। সেখান থেকে বিভক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেয় তারা।
বি টি রোড অবরোধ করা নিয়ে যখন রথতলা উত্তপ্ত সেই সময় সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন বিমান বসু। পরিস্থিতির কথা কানে যেতেই তিনি তৃণমূলকে আক্রমণ করে বলেন, “এরা অসামাজিক জীব। নিজেদের উপর আস্থা না থাকলে এ ধরণের হামলা হতে পারে। ওদের নিজেদের উপর যেমন বিশ্বাস নেই তেমন মানুষের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না।। মন্ত্রী মদন মিত্র বাইক বাহিনী নিয়ে সিগন্যালিং করছেন। শনিবার এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল তার পরেও ভয় দেখানো, তাণ্ডব চলছে। অথচ প্রশাসন কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না। কে দেখবে এগুলো?” তাঁর আরও বক্তব্য, ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু যাদের ধরা হল তাদের পরিচয় কী সেটা প্রশাসন জানাল না।
হামলায় আহত ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি সায়নদীপ মিত্রকে আগামিকাল ভোট দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর স্পষ্ট ও দৃঢ় জবাব, “আমাকে মারার প্রতিবাদ ইভিএম মেশিনের বোতাম টিপেই জানাব।”
হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ জনেরই জামিন হয়ে যায়। জামিন পাওয়ার পর মূল অভিযুক্ত বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, “আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমার স্ত্রী অসুস্থ। গত কাল চিকিত্সকের কাছ থেকে ফেরার পথে সায়নদীপরা আমাকে লক্ষ্য করে কটূক্তি করে। প্রতিবাদ করলে আমার উপর চড়াও হয়ে মারধর করে।”