ইজরায়েলি হানায় জলছে বিদ্যুত্ কেন্দ্রের জ্বালানি ট্যাঙ্ক। ছবি: রয়টার্স।
ঈদের সকাল। আশ্রয় শিবিরের বাইরে সোমবার খেলছিল ওরা। ওদের মধ্যে এক জনের দাদু পাশেই ছিলেন। ঈদের দিন নাতির দাবি মেটাতে লজেন্স কিনছিলেন। হঠাৎই প্রচণ্ড শব্দ। তার পরে রক্ত আর আর্তনাদ। গাজায় নিহতের তালিকায় সংযোজিত হল আরও ন’টি নাম। তার মধ্যে আট জনই শিশু। কে এই আক্রমণের জন্য দায়ী? হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। ২২ দিন ধরে চলা এই সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা এখন প্রায় ১১১৫। অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক। এর মধ্যে দু’শোরও বেশি শিশু। প্রাণ গিয়েছে ৫৩ জন ইজরায়েলিরও। এর মধ্যে তিন জন সাধারণ নাগরিক।
সোমবার রাতে স্থল, জল ও আকাশপথে গাজায় তীব্র হামলা চালায় ইজরায়েল। এক রাতেই ১১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে প্যালেস্তাইন স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। এর মধ্যে মধ্যরাতের পরে প্রাণ গিয়েছে ৬০ জনের। ইজরায়েলের আক্রমণে গাজার একমাত্র বিদ্যুতকেন্দ্রটির জ্বালানির ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সংঘর্ষের ক’দিন গাজাবাসী দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ পেতেন। এ বার তা-ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। এ দিকে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, আশু যুদ্ধ শেষ হওয়ার আশা ক্ষীণ। গাজাকে সম্পূর্ণ অস্ত্রমুক্ত না-করা পর্যন্ত অভিযান চলবে। ধীরে ধীরে হামাসের উপরে চাপ আরও বাড়ানো হবে বলে তাঁর দাবি। কিন্তু গাজা থেকে ইজরায়েল ও মিশরের অবরোধ তোলার দাবিতে অনড় হামাস।
ইজরায়েলি সেনা সূত্রে খবর, রবিবার ইজরায়েলের নাহাল ওজে সুড়ঙ্গ দিয়ে ঢুকে হামাসের জঙ্গিরা একটি সেনার ওয়াচটাওয়ারে আক্রমণ চালায়। এতে পাঁচ সেনার মৃত্যু হয়েছে। মর্টার আক্রমণে প্রাণ গিয়েছে আরও চার সেনার। সব মিলিয়ে রবিবার ১০ জন সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। মৃত সেনার সংখ্যা বাড়লেও ইজরায়েলের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক এই অভিযানকে সমর্থন করেন বলে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমর্থনই দুনিয়া জুড়ে নিন্দা এবং আমেরিকা ও রাষ্ট্রপুঞ্জের পক্ষ থেকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আবেদন সত্ত্বেও নেতানিয়াহু-র সরকারকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে মদত দিচ্ছে।
রবিবার দক্ষিণ ও মধ্য ইজরায়েল লক্ষ করে হামাস রকেট ছোড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি। সোমবার রাতে গাজার ৭০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয় বলে ইজরায়েলি সেনা জানিয়েছে। আঘাত হানা হয় হামাসের অন্যতম নেতা এবং গাজার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়েহ-র বাড়িতে। তিনি বাড়িতে ছিলেন না। হামলা চলে গাজার বন্দরেও। হামাসের আল-আকসা টিভি ও রেডিও সেন্টারেও আঘাত হানা হয়েছে। হামাসের দাবি, ইজরায়েল দু’টি স্কুল ও একটি কিন্ডারগার্টেনে হামলা চালিয়েছে।
এরই পাশাপাশি, উত্তর গাজায় হামলা চালানো হবে বলে লিফলেট ছড়িয়েছে ইজরায়েল। এতে আরও বাসিন্দা ঘরছাড়া হবেন বলে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান-কি মুন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখনও পর্যন্ত ঘর ছেড়েছেন এক লক্ষ ৮২ হাজার ৬০৪ জন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই রাষ্ট্রপুঞ্জের আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন। আশ্রয় শিবিরের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮২টি।