কী বলছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়?

দরজার সামনে কড়া নাড়ছে বিধানসভা নির্বাচন। ‘পরিবর্তন’-এর তৃণমূল সরকার কি আরও পাঁচ বছরের জন্য স্থায়ী হবে? নাকি মসনদে বসবে সিপিএম-কংগ্রেসের জোট সরকার? নাকি সব হিসেব উলোট-পালোট করে কোনও নয়া ম্যাজিক দেখাবে বিজেপি? কী ভাবছেন এ রাজ্যের পড়ুয়ারা?

Advertisement

রায়া দেবনাথ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ১৯:২৪
Share:

দরজার সামনে কড়া নাড়ছে বিধানসভা নির্বাচন। ‘পরিবর্তন’-এর তৃণমূল সরকার কি আরও পাঁচ বছরের জন্য স্থায়ী হবে? নাকি মসনদে বসবে সিপিএম-কংগ্রেসের জোট সরকার? নাকি সব হিসেব উলোট-পালোট করে কোনও নয়া ম্যাজিক দেখাবে বিজেপি? কী ভাবছেন এ রাজ্যের পড়ুয়ারা? কী ভাবছে ক্যাম্পাসগুলো? আজ রইল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল-হদিশ-

Advertisement

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শুভেচ্ছা সরকার। জানাল ভোট সে দেবে। ‘চাই না আমার ভোটে ছাপ্পা পড়ুক। তাই ভোটটা দিতে যাব।’ সাফ জবাব তার। বাড়ানো হোক সরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সংখ্যা। যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা যেন বাড়ায় সরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সংখ্যা।

Advertisement

একটু অন্যরকম ভাবে কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি প্রথম বর্ষের ছাত্রী প্রিয়স্মিতা। জানালেন ভোট তিনি দেবেন, কারণ এই মুহূর্তে এ রাজ্যে, এ দেশে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো প্র্যাকটিসের সীমিত যে সুযোগ মেলে, সে টুকু হারাতে চায় না সে। ‘‘জানি এই নির্বাচনের পরেও এক টুকুও বদলাবে না পরিস্থিতিটা। তাও আমার ভোটটা অন্য কেউ দেওয়ার থেকে নিজে দেওয়াটাই ভাল মনে করছি এই সময়ে দাঁড়িয়ে।’’ জানালো সে। প্রিয়স্মিতার মতে, এ রাজ্যে প্রয়োজন আরও আরও সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতিটা নীতিনির্ধারক কমিটিগুলিতে নয়া সরকার বাধ্যতামূলক করুক ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব। স্থানীয় বিধায়কের প্রতি, অভিনব একটি প্রস্তাব দিয়েছেন বছর পঁচিশের এই তরুণী। তাঁর মতে, নির্বাচনটা শুধু এক বার নয়, হোক বার বার প্রতি ক্ষেত্রে। তাঁর কথায়, ‘‘একটা অঞ্চলে কতগুলো টিউবওয়েল বসবে, নতুন কটা স্কুলের প্রয়োজন তার হদিশ সব থেকে ভাল হদিশ স্থানীয় বাসিন্দারাই দিতে পারেন। এই সব সিদ্ধান্তের জন্য মতামত নেওয়া হোক সবার। প্রতিক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের পার্টিসিপেশন বাড়লেই দেশের গণতন্ত্র সুরক্ষিত হবে।’’ তবে দেশ জুড়ে চলা ‘দেশদ্রোহী’, ‘সংরক্ষণ’-বিতর্ক এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না বলেই বিশ্বাস প্রিয়স্মিতার। বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে ভোট সাধারণত পড়ে নেতাদের মুখ দেখে। এখানে ইস্যু এই মুহূর্তে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’’ মত এই ছাত্রীর।

ভোট দেবে কি না সেটা এখনও ঠিক করতে পারেননি তৃতীয় বর্ষের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র অরিত্র মজুমদার। সো কল্ড জনপ্রতিনিধিরা আদতে নিজ নিজ দলের স্বার্থ চরিতার্থ করে বলে দাবি অরিত্রর। ‘নোটা’-টাও আসলে কোনও সমস্যার সমাধান নয়, বলে মত তাঁর। ‘‘এই সমাজব্যবস্থায় ভোটটা কোনও অপশনই নয় আদপে,যারা ভোট দিচ্ছেন না, তাঁরা কেন ভোট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সেটা জানার পরিসর নেই এই পরিসরে। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাই ফাঁপা, অন্তঃসার শূন্য। দেশের অনান্য প্রান্তে যখন ছাত্র আন্দোলনে উঠে আসছে আসছে বিভিন্ন সামাজিক দাবি, তখন আমরা আটকে আছি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েই, কী করবো উপায় নেই যে, আগে এখানে এই বেসিক সমস্যাগুলো তো মিটুক।’’ গভীর আক্ষেপের সঙ্গে জানিয়েছেন অরিত্র। যে দলই ক্ষমতায় আসুন না কেন, তাঁদের কাছে অরিত্রের দাবি, ‘‘আর একটু মানুষের কথা শোনা প্র্যাকটিস করুন। আর এই স্টিং অপরেশনে ঘুষ নেওয়া প্রমাণিত হলে, বাতিল হোক ওই নেতাদের মনোনয়ন, বাতিল হোক তাঁদের ভোট দেওয়ার অধিকার।’’

ভোট দেবেন ইন্টারন্যাশনল রিলেশনশিপের স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রণিত মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে এ রাজ্য এখনও পর্যন্ত বিজেপির মত ‘সাম্প্রদায়িক’ দলের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই এ বার অন্তত তাদের ক্ষমতায় আসার কোনও সম্ভাবনাই নেই। রণিতের দাবি, নতুন সরকার যেন ক্ষমতায় এসে দায়িত্ব নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে অযৌক্তিক দাদাগিরি বন্ধ করে। বাড়ায় আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, বাড়ায় গবেষণার সুযোগ, ‘মিথ্যে প্রতিশ্রুতি’ না দিয়ে বাড়ায় সরকারি চাকরির সংখ্যা।

ভোট দেব না। সাফ জানালো দর্শনের স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্র দেবার্ঘ্য ভারতী। ‘‘এই ভাবে ভোট দিয়ে কোনও রাইটগুলোরই আসলে সদ্ব্যাবহার হয় না। এ রাজ্যে লোকে যাকে ভয় পায় বেশি, ভোটটা তাকেই দেয়, স্ট্রং সোশ্যাল মুভমেন্ট ছাড়া বদলাবে না এই পরিস্থিতিটা। ভাঁওতার ভোটে না, অলটারনেটিভটা আসলে এই ভাবেই তৈরি হবে।’’ মত দেবার্ঘ্যর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন