সত্যাসত্য বিচারের ভার এক ক্ষুদ্র মনুষ্যের মস্তিষ্কের উপর নেই, এ কথা না হয় মেনে নেওয়া গেল। তাই বলে কি সত্যাসত্য নির্ধারণের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলব! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বললেনই, প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে নারদ কাণ্ড প্রকাশ পেলে তাও না হয় কিছু করতে পারতেন তিনি। এত বড় একজন নেত্রী যখন এই কথাগুলো বললেন তখন তাকেই ধ্রুব সত্য বলে মানা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।
এ পর্যন্ত তো সব ঠিকই ছিল। তবু সংশয়ের অবকাশ জাগবে কেন? প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়ে থাকতে পারে কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি কাউকে প্রার্থী হিসাবে না চান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যদি কঠোর ভাবেই খড়্গহস্ত হন, তা হলে তো এখন বাদ দিতে পারতেন অনেককেই। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের দিন তো এখনও বাকি ছিল। যদি সেটাই আন্তরিক ভাবে চেয়ে থাকেন, তা হলে তাঁদের সরিয়ে দিলেন না কেন তৃণমূল নেত্রী। দুর্জনকে এ কথা বলবার অবকাশ দেবেন কেন যে, তিনি আসলে মুখে যা বলছেন কাজে তা চাইছেন না।
প্রার্থীদের কথা না হয় বাদ দেওয়া গেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণের মূল নির্যাস যদি বোঝার চেষ্টা করা যায় তা হলে স্পষ্ট হবে তিনি নিতান্ত অজ্ঞ ছিলেন তাঁর আশেপাশে ঘটে যাওয়া এ সব অনর্থ কাণ্ড সম্পর্কে। জানলেনই যদি, যদি কুপিতই হলেন এবং বদ্ধপরিকর হলেন শাস্তি দিতে (যে ভাবনা থেকে প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছেন তিনি), তা হলে এখনও তো সেই অবকাশ আছে তাঁর। এ কলকাতার মহানাগরিক যিনি, সেই শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দ্রুত পদ থেকে উৎখাত করছেন না কেন তা হলে?
সব কিছু অস্পষ্ট ঠেকছে। সত্যাসত্যের সীমারেখা মুছে যাচ্ছে দ্রুত। শুধু ভেসে থাকছে অস্পষ্ট কিছু মুখ, কিছু অবয়ব। সেই অবয়বে গণতন্ত্রের ক্ষয়ের চিহ্ন স্পষ্ট। দড়ির অন্য প্রান্তে আছে আম আদমি। যার রশির টান স্থির করবে এ গণতন্ত্রের মূর্তিটা কী অবস্থায় থাকবে।