BJP West Bengal

ভোটের আগে বঙ্গ বিজেপি তিন ‘ধাক্কা’ খেল তিন গড়ে, হেমব্রম-বার্লা-মুকুটমণিদের কারণে চাপে পদ্মশিবির?

গত লোকসভা ভোটে বিজেপি নিজেদের ‘গড়’ হিসেবে যে যে এলাকাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, এ বার লোকসভা ভোটের আগে সেই তিনটি জায়গাতেই পদ্মশিবিরকে ধাক্কা খেতে হল তিন জনপ্রতিনিধির তরফে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৪:৪৬
Share:

(বাঁ দিক থেকে) কুনার হেমব্রম, জন বার্লা, মুকুটমণি অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

জন বার্লা আদিবাসী খ্রিস্টান। আলিপুর দুয়ারে ফের পদ্মের টিকিট না পেয়ে ফোঁস করেছেন।

Advertisement

মুকুটমণি অধিকারী মতুয়া সম্প্রদায়ের তরুণ মুখ হিসাবেই বিজেপির বিধায়ক হয়েছিলেন। তৃণমূলের মিছিলে যোগ দিয়ে জোড়াফুলের ঝান্ডা হাতে নিয়েছেন।

কুনার হেমব্রম ঝাড়গ্রামের আদিবাসী সাংসদ। চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি দল ছাড়লেন।

Advertisement

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি নিজেদের ‘গড়’ হিসেবে যে যে এলাকাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, এ বার লোকসভা ভোটের আগে সেই তিনটি জায়গাতেই পদ্মশিবিরকে ধাক্কা খেতে হল তিন জনপ্রতিনিধির তরফে। ভোটের আগে তাঁদের রকমসকম দেখে বোঝা যাচ্ছে, ‘সুপবন’ বহিতেছিল না। নইলে টিকিট না-পেয়ে প্রকাশ্যে যিনি টিকিট পেয়েছেন, তাঁকে ভোট না দেওয়ার কথা বলছেন কোনও নেতা— বিজেপিতে এ জিনিস কার্যত অভাবনীয়।

যদিও রাজ্য বিজেপির দাবি, এর ফলে কিছু যাবে-আসবে না। কারণ, ভোট হবে নরেন্দ্র মোদীর মুখ দেখে। লোকসভা ভোট দেশের প্রধানমন্ত্রী ঠিক করার ভোট। ফলে এ সব স্থানীয় বিষয়ের কোনও প্রভাব ভোটে পড়বে না। তবে প্রত্যাশিত ভাবেই বাংলার শাসক তৃণমূল কটাক্ষ করেছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকে। বলেছে, ডুবন্ত জাহাজ দেখে সবাই পালাচ্ছে!

গত লোকসভা ভোটে মালদহ দক্ষিণ ছাড়া উত্তরবঙ্গের সব আসনে জিতেছিল বিজেপি। মতুয়া অধ্যুষিত রানাঘাট এবং বনগাঁতেও তৃণমূলকে জমি ধরিয়ে জিতেছিল পদ্মশিবির। একই ভাবে জঙ্গলমহলের পাঁচটি আসনের পাঁচটিতেই জিতেছিল বিজেপি। এ বার লোকসভার আগে সেই তিন ‘দুর্গে’র তিন নেতা হয় দল ছেড়েছেন, নয় ফোঁস করেছেন দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে। যেমন বার্লা। ছিলেন আলিপুরদুয়ারের সাংসদ। পরে তিনি কেন্দ্রে প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু দল এ বার তাঁকে ওই আসনে টিকিট দেয়নি। বিজেপি প্রথম দফায় বাংলার যে ২০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তাতে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে কালচিনির দু’বারের বিধায়ক মনোজ টিগ্গাকে। মনোজ প্রার্থী হতেই বার্লা স্লোগান দিয়েছেন, ‘‘নো ভোট টু টিগ্গা।’’ বার্লা এবং টিগ্গার অনুগামীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে গিয়েছে গত কয়েক দিনে। অন্য দিকে, রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক ছিলেন মুকুটমণি। গত কয়েক মাস ধরেই শোনা যাচ্ছিল, রানাঘাট লোকসভায় মুকুটমণির প্রার্থী হওয়ার বাসনা রয়েছে। কিন্তু দল বিদায়ী সাংসদ জগন্নাথ সরকারকেই ফের প্রার্থী করেছে রানাঘাটে। তার পরেই বিজেপির ‘মুকুট’ চলে গিয়েছেন তৃণমূলে। গত বৃহস্পতিবার তৃমমূলের মিছিলে সরাসরি গিয়ে তিনি যোগ দিয়েছেন শাসক শিবিরে। আর কুনার যে ঝাড়গ্রামের সাংসদ ছিলেন গত পাঁচ বছর, তা হয়তো বিজেপি নেতারাও মনে করে বলতে পারবেন না। তাঁকে সুকান্ত মজুমদারেরা কত বার দেখেছেন, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। সেই তিনি শুক্রবার দল ছেড়ে দিয়েছেন।

ঘটনাচক্রে, এ বার উত্তরবঙ্গে যে যে আসন ‘পুনরুদ্ধার’ করার বিষয়ে তৃণমূল আশাবাদী, তার মধ্যে অন্যতম বার্লার আলিপুরদুয়ার। মতুয়া মহলেও তৃণমূল বিবিধ ভাবে বিজেপিকে পাল্টা চাপে রাখছে। বনগাঁর সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন তাঁরই জেঠিমা তথা তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। মমতাবালাকে এ বারেই রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে তৃণমূল। যা মতুয়াদের উদ্দেশে রাজ্যের শাসকদলের ‘বার্তা’ বলেই অভিমত অনেকের। সেই মতুয়াভূমেই মুকুটমণি দল ছেড়ে দিয়েছেন। রইল পড়ে ঝাড়গ্রাম। গত লোকসভায় বিজেপি ঝাড়গ্রাম লোকসভা জিতলেও ২০২১ সালের বিধানসভায় ওই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভাই জিতে নিয়েছিল তৃণমূল। যাকে ক্ষতে ‘প্রলেপ’ হিসাবেই দেখাতে চেয়েছিল শাসকদল। সেই ঝাড়গ্রামে কুনারের দলত্যাগ বিজেপির জন্য আরও ‘বিড়ম্বনা’র হবে বলেই শাসকদলের নেতাদের দাবি। যদিও বিজেপির বক্তব্য, কুনার টিকিট পাবেন না বুঝেই ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে দল ছেড়েছেন। তবে নিঃসন্দেহে ভোটের আগে এই সব ঘটনা নিয়ে শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে আখ্যান নির্মাণের চেষ্টা করবে।

শনিবার তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জাহাজ ডুবছে দেখলে নাবিকেরা সবার আগে পালায়। পশ্চিমবাংলায় বিপন্ন বিজেপিকে দেখে তাই একে একে সবাই পালাচ্ছেন। তাঁরাও বুঝতে পারছেন, বাংলা তো বটেই, সারা দেশেই বিজেপি নামক জাহাজটি ডুবতে চলেছে!’’ রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র রাজর্ষি লাহিড়ী অবশ্য তার পাল্টা জবাব দিয়েছেন। তিনি নদিয়ার ‘ভূমিপুত্র’ও বটে। মুকুটমণির দলত্যাগ নিয়ে রাজর্ষির বক্তব্য, ‘‘রানাঘাটে বিজেপি এ বার আরও বেশি ব্যবধানে জিতবে।’’ পাশাপাশিই তাঁর দাবি, উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলেও বিজেপির জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন