Lok Sabha Election 2024

দেব-বাণী: তৃণমূলকে হারাতে পারে তৃণমূলই

পঞ্চায়েত ভোটের আগে নবজোয়ার যাত্রা কর্মসূচি করেছিল তৃণমূল। মূল হোতা ছিলেন অভিষেক। শালবনিতে সেই যাত্রায় শামিল হয়েছিলেন মমতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৮:১৭
Share:

(বাঁ দিকে) দাসপুরের শিবরায় পথসভায় দেব। বিজেপি প্রার্থী হিরণের বাড়ি বাড়ি ভোট প্রচার (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

কার্যত মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী দেবের মুখে। সোমবারের প্রচারে তিনি বললেন, ‘‘তৃণমূলকে হারাতে পারে একমাত্র তৃণমূলই।’’ গত শনিবার নারায়ণগড় জনগর্জন সভায় এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়ার সমর্থনে সভা হলেও সেখানে আসার কথা ছিল দেবেরও। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাঁকে দেখা যায়নি। দেবের বিপরীতে বিজেপির প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়। দেবের মতোই দিনভর প্রচার করেছেন তিনিও।

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোটের আগে নবজোয়ার যাত্রা কর্মসূচি করেছিল তৃণমূল। মূল হোতা ছিলেন অভিষেক। শালবনিতে সেই যাত্রায় শামিল হয়েছিলেন মমতা। বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূল যদি ঝগড়া না করে, তা হলে তৃণমূলকে হটানোর ক্ষমতা কারও নেই। এটা আমি বলে গেলাম। তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে যদি বোঝাপড়া থাকে, তৃণমূল দিল্লিকে লড়ে নেবে।’’ পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে লোকসভার বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সোমবার লোকসভার প্রচারে এসেও কার্যত একই কথা বললেন মমতার স্নেহধন্য দীপক অধিকারী ওরফে দেব। দাসপুর ১ ব্লকে টাউন হলে দলীয় কর্মীদের সামনে দেব বলেন, ‘‘শুধু ঘাটাল কেন, সবক’টি লোকসভা আসনেই তৃণমূল প্রার্থীরা জয়লাভ করবেন। তৃণমূলকে হারাতে পারে,একমাত্র তৃণমূলই।” রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, এই মন্তব্যের দু’টি ব্যাখ্যা হতে পারে। প্রথমত, তৃণমূল এতটাই শক্তিশালী যে অন্য কোনও দল তাকে হারাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে যে তৃণমূল কোনও জায়গায় বেকায়দায় পড়তে পারে সে ইঙ্গিতও দিয়ে গেলেন দেব। তবে আর পাঁচজন রাজনীতিকদের থেকে তিনি যে আলাদা তা আরও একবার স্পষ্ট করতে চেয়েছেন দেব। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘অনেকেই এখন আসছেন। রাজনীতির কথা বলছেন। তবে আমি দশ বছরে কী করেছি,তা আপনারা সবই জানেন। যতটা পেরেছি করার চেষ্টা করেছি। আমি এখান থেকে কিছু নিতে আসিনি। উল্টে পকেট থেকে পয়সা দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।”

বিজেপি প্রার্থী হিরণ তেড়েফুঁড়ে প্রচার শুরু করেছেন। ফিল্মি কায়দায় কখনও গেয়ে উঠছেন গান। আবার উল্লেখ করছেন সিনেমার নাম। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর নিশানায় থাকছেন দেব। সরাসরি আক্রমণের ক্ষেত্রেও হিরণ বিভিন্ন দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে দেবকে বিঁধছেন। তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সরাসরি প্রত্যাঘাত না করে হিরণের কটাক্ষের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেন বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ।

Advertisement

এর আগে একাধিক বার দাসপুর-সোনাখালি এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরতে দেখা গিয়েছে হিরণকে। দাসপুরে এ দিনই ছিল দেবের প্রথম প্রচার। সকালে দাসপুর-২ ব্লকের শিবরায় যান দেব। আগে থেকেই দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার সফল করতে প্রস্তুতি ছিল শাসক শিবিরের। ফলে দেব শিবরায় ঢোক মাত্রই দেব দর্শনে মহিলাদের ভিড় উপচে পড়ে। জড়ো হন তৃণমূল কর্মীরাও। সকলেরই সামনেই তাঁর রাজনীতিতে আসার কারণ ব্যাখ্যা করে পকেট থেকে পয়সা দিয়ে রাজনীতির কথা উল্লেখ করেন দেব। শিবরা থেকে জোতঘনশ্যামে গিয়ে প্রচার করেন। তারপর দেব যান সোনাখালিতে। সেখানে কর্মী বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রচার-সহ সাংগঠনিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক সেরে দেব যান ঘাটালে। কুশপাতায় সাংসদ কার্যালয়ে গিয়ে খাওয়াদাওয়া সারেন।তারপর যান ঘাটাল ব্লক কার্যালয়ে। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।ঘাটাল থেকে দাসপুর-১ ব্লকে আসেন। টাউন হলে কর্মীদের বৈঠকে দেব উল্লেখ করেন, তৃণমূলের বিকল্প তৃণমূলই।

এ দিন সকাল থেকেই ঘাটাল শহরে পদ্ম প্রার্থী হিরণকে নিয়ে প্রচারে মেতে ওঠেন কর্মীরা। সকালে ঘাটাল শহরের গোবিন্দপুরে শীতলা মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করেন হিরণ। সেখান থেকে কুশপাতা শীতলা মন্দিরে যান। মন্দিরে পুজো দিয়ে শুরু হয় জনসংযোগ কর্মসূচি। কুশপাতা হরিজন পল্লি এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের মুখে সমস্যার কথা শোনেন। প্রার্থীকে পেয়ে খুশি হরিজন পল্লির বাসিন্দারা। দুপুরে যান বেলপুকুর কৃষ্ণ মন্দিরে। সেখানে দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে ফের প্রচার করেন। এ দিন ঘাটাল শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোন্নগরে গিয়ে বাড়ি বাড়ি জনসংযোগ সারেন পদ্মপ্রার্থী। পাড়ায় পাড়ায় অলিগলিতে ঢুকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। বিকেলে চায়ে পে চর্চায় অংশ নেন হিরণ।

দেব বনাম হিরণ। পরীক্ষা প্রখর রোদে। আপাতত প্রচারপর্ব। শীতল বসন্ত কি অচিরেই উষ্ণ হতে চলছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন