Lok Sabha Election 2024

তৃণমূলের দ্বন্দ্বে লাভবান কি কংগ্রেস, ভোটের মুখে চর্চা ঝালদায়

২০২২ সালে পুরভোটে ১২টি ওয়ার্ডের ঝালদা পুরসভায় তৃণমূল ও কংগ্রেস দুই দলই পাঁচটি করে আসন পায়। নির্দলের সমর্থনে পুরপ্রধান হন তৃণমূলের সুরেশ আগরওয়াল।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

ঝালদা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪ ০৮:১০
Share:

ঝালদার পুরপ্রধান-উপপুরপ্রধান সুরেশ-সুদীপের পাশে দলীয় নেতৃত্বের অনেকে। —নিজস্ব চিত্র।

পুরসভার ক্ষমতা ধরে রাখতে না পারলেও ঝালদা শহরে তৃণমূলের মধ্যে সুকৌশলে ভাঙন ধরাতে সক্ষম হয়েছে কংগ্রেস। লোকসভা ভোটের মুখে যা নিয়ে চর্চা চলছে শহরে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, তৃণমূলের মধ্যে এই দ্বন্দ্বের আবহ জিইয়ে রাখা গেলে আগামী দিনে ভোটে সুফল পেতে পারে কংগ্রেস।

Advertisement

যদিও তৃণমূল বিষয়টিকে আমল দিতে নারাজ। কংগ্রেস নেতৃত্বও এই সমীকরণ মানতে চাননি। পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, ‘‘এলাকায় কংগ্রেসের যথেষ্ট শক্তি রয়েছে। তাই কোনও দলের দ্বন্দ্বের দিকে তাকিয়ে থাকার প্রশ্নই ওঠে না।’’

২০২২ সালে পুরভোটে ১২টি ওয়ার্ডের ঝালদা পুরসভায় তৃণমূল ও কংগ্রেস দুই দলই পাঁচটি করে আসন পায়। নির্দলের সমর্থনে পুরপ্রধান হন তৃণমূলের সুরেশ আগরওয়াল। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই ঝালদা পুরসভার ক্ষমতা দখলকে ঘিরে তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হয়। সুরেশকে অপসারিত করে কংগ্রেস ও নির্দল জোটের সমর্থনে পুরপ্রধান হন শীলা চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

কিন্তু গত বছর সেপ্টেম্বরে শীলা এবং কংগ্রেসের চার পুরপ্রতিনিধি তৃণমূলে যোগ দিতেই ছবিটা বদলে যায়। ঝালদা শহর তৃণমূল আড়াআড়ি বিভক্ত হয়ে যায়। শীলাদের মানতে নারাজ সুরেশপন্থী পাঁচ পুরপ্রতিনিধি বেসুরো হন। কংগ্রেসের দুই পুরপ্রতিনিধির সঙ্গে সুরেশপন্থী পাঁচ বিক্ষুব্ধ তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি শীলার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। শীলাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সুরেশ ফের পুরপ্রধান হয়েছেন।

কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, এতে শীলা এবং দলত্যাগী চার পুরপ্রতিনিধিকে ‘শিক্ষা’ দেওয়া গিয়েছে। এটাই কি শুধু কংগ্রেসের লক্ষ্য? না কি এর পিছনে কংগ্রেসের অন্য অঙ্ক রয়েছে? প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।

ঘটনা হল, বামফ্রন্ট আমল থেকে তৃণমূলের জমানা ২০০১, ২০০৬, ২০১১ এবং ২০১৬ সালে (প্রথম দিকে ঝালদা বিধানসভা কেন্দ্র, সীমানা পুনবির্ন্যাসের পরে বাঘমুণ্ডি বিধানসভা কেন্দ্র) বিধায়ক হয়েছেন কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো। তবে ২০২১ সালের ভোটে বাঘমুণ্ডি কেন্দ্র থেকে ৭৫,৯০৫ ভোট পেয়ে জয়ী হন তৃণমূলের সুশান্ত মাহাতো।দ্বিতীয় স্থানে ছিল আজসু। নেপাল মাহাতো ৫১০৪৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন।ওই নির্বাচনে ঝালদা পুরএলাকায় তৃণমূল প্রার্থী ২৬৪১টি, আজসু প্রার্থী ৬০৭২টি এবং কংগ্রেস প্রার্থী ২৯০৮টি ভোট পান।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবশ্য বাঘমুণ্ডি বিধানসভার ঝালদা ১ এবং বাঘমুণ্ডি ব্লকের পঞ্চায়েতগুলিতে আরও ভাল ফল করেছে তৃণমূল। দু’টি পঞ্চায়েত সমিতির পাশাপাশি দু’টি ব্লকের অধিকাংশ পঞ্চায়েতই তাদের দখলে গিয়েছে। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদলের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তোলা বিরোধীদের দাবি, এটা ভোটের সঠিক প্রতিফলন নয়।

এই পরিস্থিতিতে ঝালদা শহরে তৃণমূলের ‘গৃহযুদ্ধ’ বজায় থাকলে ফায়দা তুলতে পারে কংগ্রেস। সুরেশপন্থীদের বিরুদ্ধে দল শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তোলার পরেও প্রকাশ্যে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার, দুই প্রাক্তন উপপুরপ্রধান কাঞ্চন পাঠক, মহেন্দ্র রুংটা, প্রাক্তন শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস সেন-সহ আরও কয়েকজন নেতা। শীলাদের ‘নকল তৃণমূল’ বলে কটাক্ষ করেছেন প্রদীপ কর্মকার। তাতে ঝালদা শহরে দলের দ্বন্দ্ব আরো জল-হাওয়া পেয়েছে বলে দাবি ওয়াকিবহাল মহলের। উল্টোদিকে শীলাদের পাশে রয়েছেন বাঘমুণ্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো, দলের বর্তমান শহর সভাপতি চিরঞ্জীব চন্দ্রের মতো আরও কয়েকজন নেতা।

এই পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মীদের অনেকে যে হতাশাগ্রস্ত তা মানছেন তৃণমূলের বাঘমুণ্ডির বিধায়ক সুশান্তও। তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘দলের প্রতি যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। যাঁরা দলবিরোধী কাজ করে বিরোধীদের সুযোগ করে দেওয়ার নোংরা খেলা খেলছেন, দল নিশ্চয় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’’

কিন্তু এই কোন্দলে তো দই মারতে পারে কংগ্রেস? বিধায়কের দাবি, ‘‘সে গুড়ে বালি। দীর্ঘদিন বিধায়ক পদে থেকেও কংগ্রেস এলাকার উন্নয়নে কিছুই করেনি। তা সবাই জানেন। বরং তৃণমূলের হাত ধরে ঝালদায় উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক ভাবেও এর সুফল মিলবে।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়াও বলেন, ‘‘ঝালদার ওই পুরপ্রতিনিধিরা দলবিরোধী কাজ করেছেন। দলের তরফে তা গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। তবে এতে বিরোধীদের রাজনৈতিক কোনও লাভ হবে না।’’

তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, বিধানসভা ভোট দূরে। তার আগে লোকসভা ভোটে এই দ্বন্দ্ব কোন দলকে কতটা প্রভাবিত করে, সে দিকে তাদের নজর থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন