Lok Sabha Election 2024

তলোয়ারের ধার কাটবে দু’দিকেই, হিসেব সিপিএমে

লোকসভা নির্বাচনে এ বার কিছু আসন বাছাই করে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছিল সিপিএম। ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পরে মূলত সেই আসনগুলি থেকেই ‘ইতিবাচক’ পরিণাম আসার হিসেব করছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৪ ০৮:১৫
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, তাঁরা তিরিশের নীচে থামবেন না! আবার বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব দাবি করছেন, তৃণমূলের চেয়ে একটি হলেও তাঁদের আসন বেশি হবে! ভোট এবং গণনার মধ্যবর্তী প্রহরে এমন জল্পনার আবহে সিপিএমের আশা, শূন্যের গেরো এ বার তাদের কেটে যাবে। সেই সঙ্গেই তাদের হিসেব, বাম ও কংগ্রেসের মিলিত ভোট আগের চেয়ে বাড়বে এবং সেই বাড়তি ভোট কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলের জন্যই মাথাব্যথার কারণ হবে।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনে এ বার কিছু আসন বাছাই করে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছিল সিপিএম। ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পরে মূলত সেই আসনগুলি থেকেই ‘ইতিবাচক’ পরিণাম আসার হিসেব করছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেই সঙ্গেই তাদের মত, ভোটের ফল শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক, এ বার যাঁরা নির্বাচনী ময়দানে লড়াই করলেন, তাঁদের মধ্যে থেকে আরও বেশ কিছু বছরের জন্য সৈনিকও পেয়ে গেল দল। এর পরে ভোট-বাক্স থেকে যা আসবে, সেই রসদ কাজে লাগিয়ে পরবর্তী লড়াইয়ের প্রস্তুতি হবে।

সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘বামের ভোট রামে বলে একটা তত্ত্ব চালু করা হয়েছিল। তৃণমূল এখন মনে করছে, রামের আবার বামে ফিরে আসবে এবং তাতে তাদের লাভ হবে। কিন্তু আমাদের তলোয়ারে দু’দিকেই ধার থাকবে! সেই ধার কোথাও বিজেপির ক্ষতি করবে, কোথাও তৃণমূলকেও কাটবে।’’ সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের বিশ্লেষণ, বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রের জনবিন্যাস ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী ভোটের ফল হবে। দলের অন্দরের খবর, মুর্শিদাবাদ, কৃষ্ণনগর, শ্রীরামপুর, দমদম ও যাদবপুর আসনে বিশেষ করে ‘ইতিবাচক’ ফলের আশা করা হচ্ছে। তারই পাশাপাশি কলকাতা দক্ষিণের মতো তৃণমূলের ‘শক্ত ঘাঁটি’ বা হাওড়ার মতো সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল কেন্দ্রেও বাম ভোট বাড়বে বলে সিপিএম নেতৃত্বের আশা।

Advertisement

সিপিএম সূত্রের খবর, দফায় দফায় নির্বাচন হওয়ার পরে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে পাঁচ কেন্দ্রের ভোট সম্পর্কে ভাল রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে শেষ পর্বে যাদবপুর কেন্দ্রের মধ্যেই ‘ছাপ্পা ভোটে’র অভিযোগ সব চেয়ে বেশি। তবু তরুণ ও গ্রহণযোগ্য মুখ হিসেবে সৃজন ভট্টাচার্য সেখানে বিভিন্ন অংশের ভোট পাবেন বলে দলের হিসেব। শ্রীরামপুরে দীপ্সিতা ধরের ক্ষেত্রেও একই আশা দলের। গোলমাল, কারচুপির মধ্যেও কৃষ্ণনগরে পঞ্চায়েত ভোটে যথেষ্ট ভাল ফল হয়েছিল বাম ও কংগ্রেসের। সেই ভিতের উপরে এস এম সাদি এ বার দলের জমি বিস্তার করতে পারবেন বলেই সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব মনে করছেন। মুর্শিদাবাদ ও দমদমে প্রার্থী দলের দুই পোড়-খাওয়া নেতা মহম্মদ সেলিম ও সুজন চক্রবর্তী। তাঁদের অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক ওজন দলকে বাড়তি সুবিধা দেবে, এমনই পর্যালোচনা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের। আর এর বাইরে ডায়মন্ড হারবারে প্রতীক-উর রহমানকে আলাদা করে ‘কৃতিত্ব’ দিচ্ছেন দলীয় নেতৃত্ব। ওই কেন্দ্রে ছাপ্পা ও লুটের এত অভিযোগ যে, গোটা নির্বাচন বাতিল করার দাবি জানিয়েছে সিপিএম। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও প্রতীক-উর যে ভাবে মাটি কামড়ে লড়াই চালিয়েছেন, তাকে দৃষ্টান্তমূলক বলেই মনে করছেন তাঁর দলের নেতৃত্ব।

উত্তর কলকাতায় নিজের ভোট (প্রার্থী ছিলেন কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য) দেওয়ার ফাঁকে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু দাবি করেছেন, ‘‘বারবার শুনতে হয়েছে, শূন্য, শূন্য! এই শূন্যের মধ্যেই এ বার ঝড় উঠবে! রাজ্যে যে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে, সেটা বিজেপি ও তৃণমূল আগে মানতে চায়নি। কিন্তু পরে দু’দলই সিপিএমকে আক্রমণ করেছে। তৃণমূল বলেছে সিপিএম নাকি বিজেপিকে সাহায্য করছে, আর বিজেপি বলেছে সিপিএম তৃণমূলের সঙ্গে আঁতাঁত করেছে। বোঝা যাচ্ছে, দু’দলই চিন্তিত।’’

ফল ঘোষণার আগে কোনও শিথিলতাই রাখতে চাইছে না সিপিএম। তাই বিধানসভা ভোটের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে ঠিক হয়েছে, গণনায় ‘বেনিয়ম ও কারচুপি’ ঠেকানোর দাবি জানাতে আজ, সোমবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরে যাবেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম ও দলের অন্য প্রার্থীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement