Lok Sabha Election 2024

সাপলুডো খেলায় মই খুঁজছে তিন পক্ষ

পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কালেখাঁতলা, পাটুলি ও ঝাউডাঙা পঞ্চায়েত দখল করে বিজেপি।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৮
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কখনও তৃণমূল এগিয়েছে, কখনও তাদের টেক্কা দিয়েছে সিপিএম। কখনও আবার সিপিএমকে পিছনে ফেলেছে বিজেপি। এই তিন দলের টক্করে গত ১৩ বছরে বারবার রাজনৈতিক চিত্র বদলেছে পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভা এলাকার। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে তিন পক্ষই ভাল ফল আশা করছে।

Advertisement

পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভা এলাকায় রয়েছে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের দশটি, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দু’টি এবং মন্তেশ্বর ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েত। ২০১১ বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে ৬৭০৬ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের তপন চট্টোপাধ্যায়। ২০১৬ বিধানসভা ভোটে ২০২৮ ভোটে জিতে এই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন সিপিএমের প্রদীপ সাহা। ২০২১ বিধানসভা ভোটে তাঁকে হারিয়ে ফের বিধায়ক হন তপন। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় ভাল ভোট রয়েছে বিজেপিরও। এক সময়ে রাজ্যের যে গুটিকয়েক জায়গায় বিজেপি শক্তিশালী ছিল, তার মধ্যে পড়ে পূর্বস্থলী ২ ব্লক। গত লোকসভা নির্বাচনে বামেদের ভোটব্যাঙ্কে ব্যাপক ধস নামে। এই বিধানসভা কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে বিজেপি। তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির ভোটের ব্যবধান কমে হয় ২৩০৫। তৃণমূল পেয়েছিল ৪২.২৬ শতাংশ ভোট। বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল ৪১.১২ শতাংশ। সিপিএম পেয়েছিল মাত্র ১৩.২৮ শতাংশ।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কালেখাঁতলা, পাটুলি ও ঝাউডাঙা পঞ্চায়েত দখল করে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের দাবি, এই তিন পঞ্চায়েত এলাকায় তাদের সংগঠন আরও বেড়েছে। প্রতিটি বুথ আরও শক্তিশালী করতে লোকসভা ভোটের আগেই কর্মীরা নেমে পড়েছেন। জোর দেওয়া হয়েছে বাড়ি বাড়ি প্রচারে। সেখানে তুলে ধরা হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প। এই বিধানসভা এলাকায় প্রচার সেরে ফেলেছেন বর্ধমান পূর্বের বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকার। ভাগীরথীর ভাঙন, তাঁতশিল্পীদের সমস্যা, পানীয় জলের ব্যবস্থা-সহ নানা বিষয় নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। অসীম বলেন, ‘‘প্রচারে দারুণ সাড়া পাচ্ছি পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভা এলাকায়। সংসদে গেলে ভাঙন এবং তাঁতশিল্পীদের দুর্দশার কথা তুলে সরব হব।’’ পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বাসিন্দা, বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বর্ধমান পূর্ব আসনে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিতে এগিয়ে থাকা নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী। সেগুলির মধ্যে রয়েছে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্র।’’

Advertisement

অন্য দিকে, পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভা এলাকায় ভোটের ব্যবধান আরও বাড়বে বলে আশা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল প্রার্থী শর্মিলা সরকার বেশ কয়েক বার প্রচার করেছেন বিধানসভা এলাকায়। করেছেন কর্মিবৈঠক। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে দল দুর্বল জায়গাগুলি চিহ্নিত করে প্রচারে জোর দিয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে ছোট ছোট পথসভা, কর্মিসভায়। রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার চলছে। তৃণমূল নেতাদের দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে তিনটি পঞ্চায়েত তাঁদের হাতছাড়া হয়েছিল, তার মধ্যে দু’টিতে সাংগঠনিক শক্তি বেড়েছে। এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় বিজেপির অনেকে পোস্টার সাঁটিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। বিজেপি’র মধ্যে গোষ্ঠীকলহ রয়েছে। এর সুফল পাব আমরা।’’

সম্প্রতি কালনা শহরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের সাত বিধায়ক এবং দলীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়কের দাবি, তাঁর বিধানসভা এলাকায় দলীয় প্রার্থী দশ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকবেন।

এই বিধানসভা এলাকায় ভাল ফলের ব্যাপারে আশাবাদী সিপিএম-ও। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, প্রচারে সাড়া দেখে মনে হচ্ছে, ২০১৯ লোকসভা এবং গত বিধানসভা ভোটে হারানো ভোটের অনেকটাই ফিরে আসবে। প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ বলেন, ‘‘ওষুধের দামবৃদ্ধি-সহ কেন্দ্রের বেশ কিছু নীতি মানুষ মেনে নিতে পারছেন না। দুর্নীতির কারণে রাজ্যের শাসক দলের প্রতিও তাঁরা বীতশ্রদ্ধ। আমাদের প্রচারে এমন অনেক মানুষ যোগ দিচ্ছেন, যাঁদের ২০২১ বিধানসভা ভোটের প্রচারে দেখা যায়নি।’’ বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের সিপিএম প্রার্থী নীরব খাঁ-র অভিযোগ, ‘‘চাষিরা ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। তাঁতশিল্প দুর্দশায়। শিক্ষা-সহ নানা ক্ষেত্রে তৃণমূলের দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। প্রচারে সে সব কথা তুলে ধরা হচ্ছে। পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভা এলাকায় আমাদের ভোট বাড়ছেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন