Lok Sabha Election 2024

পদ্মে প্রত্যয়, কাঁটা তোলার লড়াই তৃণমূলে

২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে আসনটি হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে বামেদের সমর্থনে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন বিশ্বনাথ পাড়িয়াল।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP

কাঁটা ঘরে-বাইরে। গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা এলাকা বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূলের বড় কাঁটা। সেখানে শেষ নয়। এই এলাকায় ‘কোন্দল কাঁটা’ও বিঁধছে তাদের। এই জোড়া কাঁটা তোলাই এই এলাকায় এ বার তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে ‘চ্যালেঞ্জ’।

Advertisement

দুর্গাপুর পুরসভার ১১-২২ নম্বর এবং ২৯-৪৩ নম্বর, মোট ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে এই বিধানসভা এলাকা। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে আসনটি হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে বামেদের সমর্থনে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। তৃণমূল ৩ শতাংশ এবং বিজেপি ৯ শতাংশ ভোট পায়। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে বিজেপির কাছে ৪৯,২৪৮ ভোটে পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে বিজেপি ১৪,৬৬৪ ভোটে তৃণমূলকে হারিয়ে দেয়।

লোকসভার বড় ব্যবধান বিধানসভায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশে নেমে এলেও, এই এলাকা নিয়ে তাঁরা যে স্বস্তিতে নেই, তা তৃণমূল নেতাদের অনেকেই মানছেন। এই কেন্দ্রে ফলাফলের অন্যতম নির্ণায়ক স্থানীয় কল-কারখানার শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার। অথচ, এই কেন্দ্রে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র ‘দ্বন্দ্ব’ নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ে এখানে ‘বিবাদ’ ছিল আইএনটিটিইউসি-র প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় ও তৎকালীন জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের অনুগামীদের মধ্যে। এখন জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটকের অনুগামীদের সঙ্গেও বিশ্বনাথ-পন্থীদের বিবাদ রয়েছে বলে সংগঠন সূত্রের দাবি।

Advertisement

আইএনটিটিইউসি কর্মীদের একাংশের দাবি, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভা ভোটে বিশ্বনাথকে এই কেন্দ্র দেখার দায়িত্ব দেওয়ার পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এলাকার এক কারখানায় বেতন চুক্তি চূড়ান্ত করার বৈঠকে জেলা সভাপতি অভিজিৎ তাঁকে ডাকেননি বলে অভিযোগ তোলেন বিশ্বনাথ। দাবি করেন, ‘‘আমাকে না ডাকার অর্থ, দলনেত্রীর নির্দেশ লঙ্ঘন করা।’’ অভিজিৎ অবশ্য ভোটে এক সঙ্গে কাজ করার বার্তা দেন। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি। ওই কারখানার সামনে ‘জনগর্জন’ সভা করেন বিশ্বনাথ। কয়েক দিনের মধ্যে সেখানে সভা করেন অভিজিতের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নেতা দীপঙ্কর, প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়েরা।

সগড়ভাঙার এক বেসরকারি কারখানায় কয়েক বছর ধরে স্থানীয়দের নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের দাবি, দলের নেতাদের একাংশ অর্থের বিনিময়ে বহিরাগতদের কাজে ঢোকান। সম্প্রতি যখন শহরে মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, সেই সময়েও একই অভিযোগে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে (ডিটিপিএস) নতুন ইউনিট নির্মাণের জন্য উচ্ছেদ নোটিস পাওয়া বাসিন্দাদের কেউ কেউ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে পাশে না দাঁড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন।

তৃণমূল যখন এ সব সমস্যা মিটিয়ে এলাকা পুনরুদ্ধারের লড়াই লড়ছে, বিজেপি তখন এখান থেকে ব্যবধান ধরে রাখার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। এলাকার বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, ‘‘স্থানীয়দের নিয়োগ না করে অর্থের বিনিময়ে কারখানাগুলিতে বহিরাগতদের নিয়োগ, রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা ডিএসপি-র সম্প্রসারণ ও ডিটিপিএসের নতুন ইউনিট নির্মাণে পুনর্বাসনের দায় কেন্দ্রের ঘাড়ে ঠেলে বাসিন্দাদের আতঙ্কিত করে রাখা, গরমে পানীয় জলের হাহাকার মেটাতে না পারা— এ সব মাথায় রেখে মানুষ এ বারও তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করবেন। তাঁরা বিজেপির পক্ষেই ভোট দেবেন।” তাঁর আরও দাবি, কেন্দ্র ডিএসপির সম্প্রসারণে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা এবং ডিটিপিএসের নতুন ইউনিটের জন্য ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু তৃণমূলের অসহযোগিতায় দু’টি প্রকল্পই ধীরে এগোচ্ছে।

দলে কোনও দ্বন্দ্বের অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “কেন্দ্রের প্রকল্পে পুনর্বাসনের নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে হবে কেন্দ্রকেই। তার আগে কারও উচ্ছেদ মানা হবে না। বিজেপির জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে এ বার মানুষ ভোট দেবেন।”

এলাকা থেকে এ বার ভাল ভোট পাওয়ার আশা রাখছে বামেরাও। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের দাবি, “বিভিন্ন কারখানায় কাজের দাবিতে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের অনেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তৃণমূল নেতাদের স্বরূপ বুঝতে পেরেছেন তাঁরা।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘শুধু পুনর্বাসন দিলেই হবে না, উপযুক্ত আর্থিক প্যাকেজও দিতে হবে। কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারই দায় এড়াচ্ছে। মানুষ তা বুঝতে পারছেন, তাই আমাদের দিকে আসছেন।”

রাজনৈতিক মহলের মতে, বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল অনেকাংশে নির্ভরশীল এই এলাকার ফলের উপরে। এলাকাবাসী কার উপরে ভরসা রাখলেন, জানা যাবে ৪ জুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন