Lok Sabha Election 2024

তৃণমূলের ইস্তাহারে কুড়মিদের দাবি সমর্থন 

‘মাহাতো সম্প্রদায়কে উপজাতি মর্যাদা দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ করবে তৃণমূল কংগ্রেস’— এ কথাই লেখা হয়েছে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের তরফে প্রকাশিত ইস্তাহারে।

Advertisement

প্রশান্ত পাল 

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩৪
Share:

তৃণমূলের ইস্তাহার। —নিজস্ব চিত্র।

­কুড়মিদের জাতিসত্তার দাবির প্রতি তাঁর সমর্থনের কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকার বিষয়টি নিয়ে সমীক্ষা করবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। এ বার তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহারেও কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির বিষয়টিকে সমর্থন জানানো হল।

Advertisement

‘মাহাতো সম্প্রদায়কে উপজাতি মর্যাদা দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ করবে তৃণমূল কংগ্রেস’— এ কথাই লেখা হয়েছে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের তরফে প্রকাশিত ইস্তাহারে। ‘সংখ্যালঘু ও তফসিলি, সবাই মিলে এগিয়ে চলি’ এই শিরোনামে বাংলার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আশা-আকাঙ্খা পূরণের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরেই জাতিসত্তার দাবিতে জঙ্গলমহলে সরব কুড়মিদের একাধিক সামাজিক সংগঠন। তাঁদের তফসিলি জনজাতি তালিকাভুক্ত করার দাবিতে টানা রেল ও রাস্তা অবরোধ, ধর্না-সহ নানা আন্দোলন হয়েছে। এই দাবি সামনে রেখে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নির্দল হিসেবে কুড়মি প্রার্থীও লড়েওছেন। বিশেষ দাগ কাটতে না পারলেও পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামে বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে জিতেছেন কুড়মি নির্দলরা। তারপর এ বার সেই একই দাবি সামনে রেখে লোকসভা ভোটের ময়দানে আদিবাসী কুড়মি সমাজ।

Advertisement

আদিবাসী-জনজাতিদের বিভিন্ন সংগঠন অবশ্য কুড়মিদের দাবির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্ত করা যাবে না, এমন দাবিতেও পথে নামতে দেখা গিয়েছে একাধিক জনজাতি সংগঠনকে। ফলে, জঙ্গলমহলে আদিবাসী-কুড়মি ভারসাম্য রেখে এগনোই এখন যে কোনও দলের লক্ষ্য। গত ফেব্রুয়ারিতে পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক সভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রীও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন, ‘‘আদিবাসী ও মাহাতোদের মধ্যে ঝগড়া আমি লাগাতে চাই না। মাহাতোদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি আছে— তাঁদের জনজাতি হিসেবে ঘোষণা করা হোক। এটা আমার হাতে নেই। আমাকে আপনারা দোষ দেবেন না।’’ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘‘কোন কোন ভৌগোলিক অঞ্চলে মাহাতোরা থাকেন, প্রকৃত যাঁরা মাহাতো, তাঁদের জন্য একটা সমীক্ষা করছি।’’

তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহারে তাঁদের জাতিসত্তার দাবির প্রতি সমর্থন অবশ্য নতুন বলে মনে করছে না আদিবাসী কুড়মি সমাজ। সংগঠনের মূল মানতা (মুখ্য উপদেষ্টা) তথা পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অজিত মাহাতো বলেন, ‘‘এর মধ্যে নতুন কী আছে! এ কথা তো সেই ২০১৭ সাল থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে আসছেন। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের দাবির সমর্থনে রাজ্য মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করলেন। কেন্দ্র সেই সুপারিশ গ্রহণ না করে রাজ্যের কাছে ‘ফারদার কমেন্ট জাস্টিফিকেশন’ রিপোর্ট তলব করল। তারপর থেকে তো রাজ্য হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। সেই রিপোর্ট না পাঠিয়ে ভোটের জন্য এই ঘোষণা রেখেছে। সবাই সব বুঝতে পারছেন।’’

জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোরও দাবি, ‘‘এই ঘোষণা ঘোলাজলে মাছ ধরার মতো। রাজ্য সরকার কুড়মালি ভাষাকে যে স্বীকৃতি দিয়েছে সেই প্রস্তাব আমি বিধানসভায় এনেছিলাম। আর এই দাবি নিয়ে সংসদে যদি কেউ সরব হয়েছেন তিনি অধীররঞ্জন চৌধুরী।’’ তবে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা পুরুলিয়া লোকসভায় দলের প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘আমাদের নেত্রী তো আগেই এই দাবিতে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সেই বিষয়টিই ইস্তাহারে রাখা হয়েছে।’’ যদিও পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের তফসিলি উপজাতি শাখার জেলা সভাপতি কলেন্দ্রনাথ মান্ডির তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘দলের ইস্তাহার নিয়ে মন্তব্য করব না। তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমি এর সঙ্গে কোনও ভাবেই সহমত নই।’’

এর বিরোধিতা করছে আদিবাসী সংগঠনগুলিও। ইউনাইটেড ফোরাম অফ অল আদিবাসী অর্গানাইজেশনস-এর রাজ্য কমিটির আহ্বায়ক তথা ভারত জাকাত মাঝি পারগাণা মহলের পুরুলিয়া জেলা পারগানা রতনলাল হাঁসদা স্পষ্টই বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূলের এই ঘোষণায় আপত্তি জানাচ্ছি, তীব্র বিরোধিতা করছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিষয়টি ঝাড়খণ্ডে (টিআরআই) ও এই রাজ্যেও (সিআরআই) প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ওবিসি তালিকাভুক্ত থাকার পরে আজ কোন যুক্তিতে বা কারণে কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্ত করা হবে, সেটাই আমাদের প্রশ্ন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন