ভোট নিয়ে কত হইচই, পাখি নিয়ে ভাবে কে

ছোট থেকেই এই ব্যারাজের জায়গায় আসেন অরুণ সরকার। ফুলবাড়ি ব্যারাজ তৈরির পর মহানন্দা, বালাসনের জল আটকে রাখে প্রয়োজন মতো ছাড়া শুরু হতেই এই অংশে নানা পাখি আসতে দেখেন তিনি। অন্তত ২০ বছর ধরে পাখির আনাগোনা চলছে। শীতের সময় পরিযায়ী পাখিদের ভিড় বাড়ে। চখাচখি, বালিহাঁস, সোললি, চেরচেরা, পানকৌড়ি, সারস, বক এ সব নামেই ওই পাখিদের চেনেন তাঁরা।

Advertisement

সৌমিত্র কুন্ডু

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৬ ২০:৫৯
Share:

ছোট থেকেই এই ব্যারাজের জায়গায় আসেন অরুণ সরকার। ফুলবাড়ি ব্যারাজ তৈরির পর মহানন্দা, বালাসনের জল আটকে রাখে প্রয়োজন মতো ছাড়া শুরু হতেই এই অংশে নানা পাখি আসতে দেখেন তিনি। অন্তত ২০ বছর ধরে পাখির আনাগোনা চলছে। শীতের সময় পরিযায়ী পাখিদের ভিড় বাড়ে। চখাচখি, বালিহাঁস, সোললি, চেরচেরা, পানকৌড়ি, সারস, বক এ সব নামেই ওই পাখিদের চেনেন তাঁরা।
ফি দিনের মতো রাঙাপানির বণিকজোত থেকে সাইকেল নিয়ে এসেছিলেন ফুলবাড়ি ব্যারাজে। মাছ ধরতে। শুধু তিনি নন। তাঁর মতো অনেক মৎস্যজীবীই আসেন এখানে মাছ ধরতে। বিকেলে জাল সাজিয়ে পেতে রেখে যান। ভোরে এসে জালে আটকে থাকা মাছ তোলেন। বিক্রিবাটা করেন সেখানেই। ব্যারাজে পাখি কমে যাওয়ার পিছনে অপরিকল্পিত ভাবে মাছ ধরার চেষ্টাও একটা বড় কারণ। তবে অরুণবাবু পাখি ভালবাসেন। তিনি চান পাখিরা আসুক। পাখি না এলে তাঁর খালি খালি লাগে। কিন্তু পাখি কই? আগে যে রকম পাখি আসত এখন আর তেমন নেই। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল পাখি নামমাত্র। ব্যারাজের বাঁধানো কংক্রিটের অংশে কিছু পানকৌড়ি, বেলেহাঁস বসে রয়েছে। নদীর পারে তাও নেই।
ভোট নিয়ে কত হইচই। কিন্তু পাখি নিয়ে ভাবে ক’জন। ভোটের প্রতিশ্রুতিতে অনেক কিছুই স্থান পায়। কিন্তু সেখানে ফুলবাড়ি ব্যারাজকে ঘিরে এই পরিযায়ীদের আনাগোনা বাঁচাতে তেমন উদ্যোগ নেই বলে স্থানীয় বাসিন্দা এবং পরিবেশপ্রেমীরা মনে করেন।
কত কাণ্ড এই পাখি নিয়ে! অরুণবাবু বলেন, ‘‘আমাকেও পুলিশ এক বার ধরল। আমরা নাকি পাখি মারি, ধরি, খাই। বললাম, প্রমাণ করে দেখান। তারা পারেনি। আমরাই তখন পুলিশকে জানাই বাইরের লোকরা, চোরাশিকারিরা পাখি ধরতে আসে এখানে। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর দিলাম। ফাঁদ পেতে কী ভাবে পাখি ধরে, কারা কোথা থেকে আসে যা জানি বললাম, দেখালাম।’’ তিনি জানান, মাটিগাড়া থেকে কিছু বহিরাগত লোকজন আসত। আগের দিন বিকেলে ফাঁদ পেতে রাখত। ভোরে এসে ফাঁদে আটকে থাকা পাখি ধরে নিয়ে যেত। সে সব বলার পর পুলিশ অভিযান চালায়। তাতে কিছুটা কমে। চোরাগোপ্তা কিছু এখনও চলে। অরুণবাবুর দাবি, ‘‘আমরা মাছ ধরেই খাই। পাখিদের বিষয়ে আমরাও সতর্ক।’

Advertisement

শুধু চোরাশিকারি নয়, এলাকায় বহিরাগতদের লাগামছাড়া আনাগোনা, বিশেষ করে পিকনিকের মরসুমে, পাখি আসা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন প্রশাসন এবং ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। পিকনিক করতে এসে অনেকেই ব্যারাজের ধারে যেখানে পাখিগুলি ভিড় করে থাকত তার কাছাকাছি চলে যান। আগের ফাঁসিদেওয়ার বিডিও উদ্যোগী হয়েছিলেন এই এলাকাকে, পাখির আনাগোনাকে বাঁচাতে। প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে এই জলাজমিকে ‘ওয়েটল্যান্ড বার্ড স্যাংচুয়ারি’ হিসাবে ঘোষণা করে সংরক্ষণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তার পর তেমন কোনও উদ্যোগ দেখা গেল না।

এলাকায় মাছ ধরা ছাড়াও জলাজমিতে ঘাষ কাটতে বাসিন্দাদের ভিড়। ক্যানাল ঘেঁষে নদীর জায়গা দখল করে বসতি গড়ে উঠছে। গরু চরছে। নদীর মধ্যেই চলছে চাষ। এ সবের কারণেই পাখির আনাগোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসু। তাঁর কথায়, মহানন্দা দূষিত হয়ে পড়েছে ভয়ানক ভাবে। অথচ এই অংশে অন্তত ৪০টি প্রজাতির পাখির আনাগোনা চলে। সেল ডাক, নর্দান পিনটেল, নর্দান সোভেলার, মদনটাক-সহ কত পাখি আসে। তীরের ঝোপজঙ্গলেও নানা প্রজাতির পাখির আস্তানা। সমস্যাগুলি মেটাতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে বলে দাবি করেন অনিমেষবাবু। পাশাপাশি, এলাকা সৌন্দর্যায়ন করে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলাও যায় বলে তাঁর মত।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন