যুদ্ধ যখন উত্তেজনার জটিল পাকে, ঠিক তখনই এ কোন বোমা ফাটালেন মুকুল রায়?
যে পর্যায়ে এসে তৃণমূলকে এ বার কুড়িয়ে নিতে হবে প্রচুর সংখ্যা, ঠিক তার মুখে এ কোন অমোঘ কণ্ঠ শোনা গেল তৃণমূল কংগ্রেসের একদা ‘নাম্বার টু’য়ের কাছ থেকে। যুদ্ধ যখন মধ্য পর্বে, ঠিক তখনই এ কোন মুষল পর্বের ইঙ্গিত তৃণমূলের শিবিরে। যুদ্ধ যতই এগোচ্ছে, ততই অগোছালো, দিশাহীন দেখাচ্ছে শাসক শিবিরকে। এক নারদ কাণ্ডকে ঘিরে টালমাটাল নেত্রী বন্দুকটা রাখতে চেয়েছিলেন ভাইদের কাঁধেই। বুঝে উঠতে পারেননি, এ ভাইয়েরা গোঁসাও করতে পারে। গোঁসাও যদি বা ভেবেছিলেন, দূর কল্পনাতেও ফোঁসের কথা ভাবেননি। সেই ফোঁসটা করে দেখালেন একদা বিশ্বাসভাজন, বর্তমানে বিন্দুমাত্র নন, সঙ্গী মুকুল রায়।
মুকুল রায় বুঝে অথবা না বুঝে যে ফোঁস করেছেন, তাতে কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস এক মুহূর্তে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে। তিনি বলেছেন, ‘‘ঠিক নির্বাচনের আগে একটা নতুন জিনিসের আমদানি হল। কি না, স্টিং কাণ্ড। স্টিং কাণ্ডের মধ্যে এ টাকা নিচ্ছে, ও টাকা নিচ্ছে। আমারও ছবি দেখা গিয়েছে। তবে আমাকে টাকা নিতে দেখা যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, দলীয় পর্যায়ে তদন্ত হবে। আমি এটা অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে বলে যেতে চাই, তারা কেউ ব্যক্তিগত কাজে, নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বা নিজের সুবিধার জন্য এক পয়সাও গ্রহণ করেননি। তদন্ত হোক, তদন্তে প্রমাণিত হবে।’’
কী বলতে চাইলেন মুকুল রায় ? কার দিকে ইঙ্গিত করলেন? যদি নিজেদের স্বার্থে টাকা না নিয়ে থাকেন সতীর্থেরা, তবে কার জন্য নিয়েছেন? তদন্তে কী প্রমাণিত হবে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোচরে ছিল এই ঘুষ পর্ব? যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অজ্ঞ থেকে থাকেন, তবে দলের ওপর উত্তরোত্তর তাঁর নিয়ন্ত্রণ শিথিল হওয়ার প্রমাণ দেয় তা। আর যদি না হয়? মুকুল রায় কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে থাকা সততার আচ্ছাদন ধরে টান দিচ্ছেন? সন্দেহ নেই, শত চেষ্টাতেও সূর্যকান্ত মিশ্র, অধীর চৌধুরীরা যে আঘাত এ যাবৎ করতে পারেননি, সেটাই এক লহমায় করলেন মুকুল রায়। ফলে এই মুহূর্তে গোটা তৃণমূল কংগ্রেস দলটাই শাঁখের করাতের ওপর দাঁড়িয়ে। এগোতেও কাটছে, পিছতেও। মুকুল রায়ে তার এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মেরেছেন। এক, স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁর সতীর্থেরা টাকা নিয়েছিলেন। দুই, অতএব এই প্রসঙ্গে তাঁর নেত্রী থেকে শুরু করে তিনি, গোটা দলটাই এ যাবৎ অসত্য ভাষণ করে এসেছেন। তিন, সতীর্থেরা ভাল, অন্য কারও জন্য তাঁরা টাকা নিয়ে থাকেন। ভাইয়েরা ক্রুদ্ধ। প্রধান ভাই অমোঘ বাণ ছুড়ছেন। পরস্পর পরস্পরকে কাটাকাটির এক অনিবার্য ইঙ্গিত গোটা আবহে। আচমকাই মুষল পর্বের ইঙ্গিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য অশনি সঙ্কেত?