হারই হল অপূর্বর, কোনও মতে গড় রক্ষা রবির

প্রথম রাউন্ডেই পিছিয়ে পড়েছিলেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভোটে। ফল কেমন হতে পারে, আঁচ মিলেছিল তখনই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০২:০০
Share:

বাঁ দিক থেকে, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।

প্রথম রাউন্ডেই পিছিয়ে পড়েছিলেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভোটে। ফল কেমন হতে পারে, আঁচ মিলেছিল তখনই।

Advertisement

দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব মুখোপাধ্যায় শেষমেশ হেরেই গেলেন। হারতে হল তাঁরই দল ছেড়ে ভোটের আগে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের কাছে। বর্ধমান জেলায় তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের অপূর্ববাবু ছাড়া অবশ্য বাকি সকলেই জিতেছেন। স্বপন দেবনাথ, মলয় ঘটক, রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় থেকে জিতেন্দ্র তিওয়ারি, সকলেই জয়ী হয়েছেন।

বিশ্বনাথবাবু প্রচারে ঝড় তোলার পর থেকেই দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে চাপে পড়ে গিয়েছিল তৃণমূল। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপূর্ববাবুর সমর্থনে সভা করতে এসে বলেছিলেন, ‘‘চড় মারুন, কিন্তু ভোটটা দিন।’’ তার পরেও শেষরক্ষা হয়নি। এ দিন দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজের গণনাকেন্দ্রে একের পর এক রাউন্ড শেষ হয়েছে, পিছিয়ে পড়েছেন অপূর্ববাবু। তবে ব্যবধান যখন দশ হাজারের আশপাশে, তখনও তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, ফল উল্টে যাবে। শেষমেশ হারেন প্রায় চুয়াল্লিশ হাজার ভোটে।

Advertisement

তৃণমূলেরই একটি অংশের দাবি, শহরের মেয়র হিসেবে কাজের জন্য অপূর্ববাবুকে সব সময় পাওয়া যায় না। তাই মানুষ মুখ ফিরিয়েছেন। দলের একটি সূত্রের খবর, এক সময়ে সিপিএম-ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ী-ঠিকাদারের সঙ্গে অপূর্ববাবুর ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল। যা দলেরই অনেকে ভাল ভাবে নেননি। জোট তাঁকে ‘স্টপগ্যাপ মেয়র’ দাবি করেও প্রচার করেছে। মানুষ তা বিশ্বাস করেছেন বলে ধারণা তৃণমূল কর্মীদের অনেকের।

২০০১ সালে দুর্গাপুরে জিতে বিধায়ক হন অপূর্ববাবু। কিন্তু ২০০৬ সালে হারেন। গত বার পরিবর্তনের হাওয়ায় জিতলেও এ বার ফের হারলেন। সজ্জন ভাবমূর্তি থাকা সত্ত্বেও কাজের মূল্যায়ন করে মানুষ ভোট দিলেই তিনি হেরে যান, দাবি তৃণমূলের একাংশের। অপূর্ববাবু শুধু বলেন, ‘‘মানুষ যা চেয়েছেন, তা মানতে হবে। কেন এমন ফল হল, তা দল নিশ্চয় পর্যালোচনা করে দেখবে।’’

সকাল থেকে পরপর রাউন্ডে পিছিয়ে পড়ছিলেন কাটোয়ার তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। তবে বেলার দিকে ব্যবধান কমতে শুরু করে। একেবারে শেষ রাউন্ডে গিয়ে জিতে গেলেন গত বছরই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসা রবিবাবু। এ দিন দাঁইহাট পুর এলাকার ইভিএম খোলার পর থেকে তিনি লড়াইয়ে ফেরেন। কিন্তু তাঁর খাসতালুক কাটোয়া শহর, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন পুরপ্রধান ছিলেন, সেখানেই পিছিয়ে পড়েছেন। তাঁর দলবদল মানুষ ভাল চোখে নেননি, এই ফলেই তা স্পষ্ট বলে মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলি। তবে শেষমেশ কোনও মতে মুখরক্ষা হল তাঁর। টানা পাঁচ বার বিধায়ক হলেন তিনি।

জেতার পরেও দলের একাংশের দিকে আঙুল তুলছেন রবিবাবু। তিনি বলেন, ‘‘কাটোয়া পুরসভায় দুর্নীতি, দুবৃত্তদের আনাগোনা এবং ভোটের দিন দলের কিছু কাউন্সিলরের বিরুদ্ধাচরণের দায়ভার আমাকে বইতে হল। আমি মানুষের কাজ করতে চাই, মানুষের পাশে আছি।’’ যদিও কাটোয়ার পুরপ্রধান অমর রাম বলেন, ‘‘রবিদা কী বলেছেন জানি না। তিনি দীর্ঘ দিন কংগ্রেসে ছিলেন। আমি বলেছিলাম, নতুন প্রতীকে মানুষের কাছে আরও যেতে হবে। হয়তো প্রচারে কোনও ঘাটতি ছিল। বিশ্লেষণ করতে হবে।’’

পূর্বস্থলী দক্ষিণে প্রায় ৩৭ হাজার ভোটে জিতলেন স্বপন দেবনাথ। দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপনবাবু এ দিন সকালেই চলে আসেন কালনায় গণনাকেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘‘অরূপ বিশ্বাসের (দলের জেলা পর্যবেক্ষক) নেতৃত্বে আমরা কাজ করেছি। সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছি রায়না, মন্তেশ্বর সিপিএমের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পেরে। তবে তপন (চট্টোপাধ্যায়) আর উজ্জ্বলের (প্রামাণিক) জন্য খারাপ লাগছে।’’ দলের পূর্বস্থলী উত্তরের প্রার্থী তপনবাবু ও জামালপুরের প্রার্থী উজ্জ্বলবাবু হেরে গিয়েছেন। নিজের জয় প্রসঙ্গে স্বপনবাবু বলেন, ‘‘৮৭ সাল থেকে ভোটে লড়ছি। তিন বার হেরেছিলাম। জেতারও হ্যাটট্রিক করলাম।’’

বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী রবিরঞ্জনবাবুর প্রথম কাঁটা ছিলেন দলেরই নেতা, নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়া সমীর রায়। দ্বিতীয় কাঁটা ছিল বিজেপি। দুই কাঁটাই উপড়ে প্রায় তিরিশ হাজার ভোটে জিতলেন তিনি। ভোটের আগে রবিরঞ্জনবাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ নানা অভিযোগ ওঠে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বাধা না থাকলে জয়ের আনন্দ কোথায়!’’ বর্ধমান শহর থেকে এই প্রথম কোনও ডানপন্থী প্রার্থী পরপর দু’বার জিতলেন।

গত লোকসভা ভোটে তাঁর কেন্দ্রে বিজেপি বেশি ভোট পাওয়ার পরে চাপ তৈরি হয়েছিল আসানসোল উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী মলয় ঘটকের উপরেও। প্রায় ২৩ হাজার ভোটে জিতে স্বস্তিতে ফিরলেন তিনি। এ দিন দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ আসানসোলের সেন্ট ভিনসেন্ট হাইস্কুলে পৌঁছন মলয়বাবু। গায়ে-মাথায় সবুজ আবির। সম্পূর্ণ ফল বেরনোর পরে উচ্ছ্বাস-উল্লাসে ভাসেন কর্মীরা। মলয়বাবু বলেন, ‘‘অপপ্রচারের বিরুদ্ধে এই জয় উন্নয়নের। অসম্পূর্ণ কাজ এ বার শেষ করতে হবে।’’

দলনেত্রী পাণ্ডবেশ্বরে প্রার্থী করেছিলেন তাঁকে। জিতে মান রাখলেন আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারিও। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটে গত বার এই কেন্দ্রে জয়ী বাম প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়কে হারানোর পরে তিনি বলেন, ‘‘ এটা শুধু আমার নয়, যারা কুৎসা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন