‘স্বরূপ’ চেনা দায়, বহু রূপে সম্মুখে তিনি

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছের মানুষ হিসেবে অরূপ বিশ্বাসের পরিচিতি নিয়ে কারও মনে কোনও সংশয় নেই। সংশয় রয়েছে, অরূপ বিশ্বাসের ‘স্বরূপ’ নিয়ে।

Advertisement

শর্মিষ্ঠা গোস্বামী

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১৩
Share:

অরূপ বিশ্বাস

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছের মানুষ হিসেবে অরূপ বিশ্বাসের পরিচিতি নিয়ে কারও মনে কোনও সংশয় নেই। সংশয় রয়েছে, অরূপ বিশ্বাসের ‘স্বরূপ’ নিয়ে।

Advertisement

অরূপ কি আসলে তেমনই, যেমন দেখা যায়? অমায়িক, একই সঙ্গে ব্যবহারে উষ্ণ ও সঙ্কটের মুখেও শীতল, অসাধারণ সংগঠক ও পাড়ার ছেলে? না কি এলাকা ও এলাকার বাইরেও সিন্ডিকেট-প্রোমোটারদের একটা বড় অংশের টিকি যার কাছে বাঁধা সেই দাদা? ভাই স্বরূপের প্রতি স্নেহে ‘ধৃতরাষ্ট্র’ সেই নেপথ্যচারী যিনি জলে নামলেও চুল ভেজে না?

কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর হন ২০০০ সালে। দলের অন্য কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিটি পুর-অধিবেশনে হইচই ফেলে দিতেন অরূপ। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ যা-ই করতেন, তাঁর দিকে নজর না পড়ে উপায় থাকত না কারওরই। নজর এড়ায়নি দলনেত্রীরও।

Advertisement

অল্প সময়ের মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু বিনয় ছেড়ে যায়নি অরূপ বিশ্বাসকে। শোভন চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিমের মতোই মমতার কাছের বৃত্তে টিকে থাকার যোগ্যতা রয়েছে অরূপের। দিদির কাছে মাথা নত করে থেকে, মুখ বন্ধ করে রেখে যা যা করার করে গিয়েছেন অরূপ।

নারদ-কলঙ্ক ছুঁতে না পারলেও নিন্দুকেরা বলে আপনি ও আপনার ভাই স্বরূপ না চাইলে এলাকায় নির্মাণের জন্য একটা ইটও ফেলতে পারে না কেউ? অভিযোগ, তৃণমূলেরই এক সাংসদের আত্মীয় এলাকায় বাড়ি তৈরি করছিলেন। তাঁর কাছ থেকেও তোলা চাওয়া হয়েছে? প্রশ্নের জবাবে একটুও মেজাজ না হারিয়ে নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে বসে স্বভাবসিদ্ধ নম্র ভঙ্গিতে অরূপ বললেন, ‘‘আপনি বরং এই প্রশ্নটা সিপিএমকে জিজ্ঞাসা করুন। স্বরূপ এখানে আসে না।
আর অন্যায় করলে আমি কাউকে রেয়াত করি না।’’ সঙ্গে এ-ও বলেন, ‘‘আমি যদি তোলা তুলতাম, তা হলে আমি পর পর দু’বার এই কেন্দ্রে জিতে আসতাম না।’’ তোলাবাজির অভিযোগ থেকে ভোটের ফল অন্যরকম হতে পারে বলে মনে করেন না অরূপ বিশ্বাস। ঠিক যেমন বিশ্বাস করেন না জোটের চাপ কথাটাতে। সিপিএম-কংগ্রেসের জুড়ে যাওয়া ভোটের অঙ্কও মানেন না।

অরূপের কথায়, ‘‘জোট দেখে মানুষ ভোট দেবে না। ভোট দেবে এলাকার উন্নয়ন দেখে।’’ প্রচারপত্রে ৪০ দফা উন্নয়নের তালিকা রেখেছেন তিনি। তার মধ্যে টালিনালার উপর সেতু, জলাধার নির্মাণ, দমকল কেন্দ্র স্থাপন, নানা ধরনের সৌন্দর্যায়ন, বস্তি উন্নয়ন, রাস্তা তৈরি ইত্যাদি রয়েছে। যদিও এই সব উন্নয়নের বেশির ভাগটাকেই নীল-সাদা বাতি ধরনের ‘কসমেটিক’ উন্নয়ন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রের জোট প্রার্থী সিপিএমের মধুজা সেনরায়। মধুজার অভিযোগ, ‘‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী তো তোলাবাজি ও সিন্ডিকেটকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন।’’ অরূপ অবশ্য এ সব অভিযোগ গায়ে মাখেন না। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ আমাকে রাত দুটোয় ডাকলেও পান।’’ মধুজা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিপিএমের এমন অবস্থা যে বাইরে থেকে প্রার্থী আনতে হয়েছে। এমন এক জনকে এনেছে যিনি এলাকাটাই ভাল করে চেনেন না। ফলে ওঁদের কথা কেউ শুনবে না।’’

দলে অরূপের উপযোগিতা প্রশ্নাতীত। কার্যত গোটা টলিউডকে দলনেত্রীর পায়ের কাছে এনে ফেলেছেন অরূপ বিশ্বাস। বড় পর্দা থেকে ছোট পর্দার ছোটবড় প্রায় সব তারকা, অভিনেতাই দিদির পাশে। সে জনসভা থেকে আইপিএল পর্যন্ত সব জায়গাতেই দিদির এক ডাকে হাজির কার্যত গোটা টলিউড ও টেলিউড। কী মন্ত্রে চলচ্চিত্র জগতের এত জনকে বশ করে ফেললেন অরূপ? অনেকে বলে বিষয়টি বশ করার নয়, টলিউডে নাকি অরূপ বিশ্বাসের অঙ্গুলিহেলন ছাড়া গাছের একটি পাতা নড়ে না। নানা জনে নানা কথা বললেও অরূপ বলেন, ‘‘এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সব স্তরের কর্মী ও শিল্পীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলি আমি. ওঁদের অনেক সমস্যা ছিল। সেগুলো এক এক করে সমাধান করেছি। টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও বিক্রি করা হচ্ছিল অন্যায় ভাবে। আমরা আন্দোলন করে রুখেছি। চিকিৎসা বিমা ও পুরস্কার চালু করেছি। তাই ওঁরা আমাদের সঙ্গে আছেন।’’

দক্ষ সংগঠক অরূপের আরও একটি পরিচয় তাঁর সুরুচি সঙ্ঘের পুজো। মানুষের জোয়ার টানে শহরের যে সব পুজো তার একটা অরূপের সুরুচি সঙ্ঘ। তবে অরূপের নিজের কথায়, ‘‘এ বার পুজো নিয়ে ভাবার সময় নেই। আগে ভোটপুজো সামলাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন