বিনিদ্র রাত কাটছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দরকার হলে প্রেসক্রিপশন করে দিতে পারি, যাতে ঘুম হয়। অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ ভাবেই তীব্র কটাক্ষ করলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। জোট জিতলে কি মুখ্যমন্ত্রী তিনিই? আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের এই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু বার বার এড়িয়ে গেলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ভোটে লড়ছেন, এমন নজির বাংলায় নেই। বেনজির সিদ্ধান্ত নিয়ে সিপিএম এ বার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেছে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে। এমন ছকভাঙা সিদ্ধান্ত কি অকারণেই? সরকার গঠন করার পরিস্থিতি তৈরি হলে সূর্যকান্ত মিশ্রকেই তার হাল ধরার জন্য প্রস্তুত রাখা হচ্ছে না কি? কোনও প্রশ্নেরই স্পষ্ট জবাব দিচ্ছিলেন না সূর্যকান্ত মিশ্র। কখনও বলছেন, ফুল না ফোটার আগেই ফলের চিন্তা করে লাভ নেই। কখনও বলছেন, মানুষ চেয়েছে, তাই পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবশেষে অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের একেবারে সোজাসাপটা প্রশ্ন— সূর্যকান্ত মিশ্র সিপিএমের তরফে ভবিষ্যৎ মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রধান মুখ কি না? এ বার ঠোঁটের কোণ থেকে স্মিত হাসিটাও মুছে ফেলে বললেন, ‘‘একটু বেশি কল্পনাবিলাস হয়ে যাচ্ছে।’’
বাম-কংগ্রেস জোট যদি নির্বাচনে সাফল্য পায়, তা হলে পূষ্পবৃষ্টি হবে। কিন্তু জোট মানুষের দরবারে প্রত্যাখ্যাত হলে, দলের জোট-বিরোধী অংশ সূর্যবাবুদের মতো জোটপন্থীদের ছেড়ে কথা বলবে না। তাই ভোটের ফল বার না হওয়া পর্যন্ত রাতগুলো কি বিনিদ্র কাটবে? এই প্রশ্নে কিন্তু বিন্দুমাত্র টাল খেল না সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের আত্নবিশ্বাস। সটান ওভার বাউন্ডারি মেরে বললেন, ‘‘আমার ঘুম মাঝরাতে ভাঙে না। যাঁর ঘুম ভাঙছে, তাঁকে আমি প্রেসক্রিপশন লিখে দিতে পারি, ওষুধপত্র লিখে দিতে পারি। আপনি পাঠিয়ে দিতে পারেন।’’ রাজ্যে বিধানসভার প্রধান বিরোধী দলেনতার এই কটাক্ষ যে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিই, তা আলাদা করে বলে দিতে হয় না। তিনি আরও বললেন, ‘‘কাউকে বিনিদ্র রজনী যাপন করতে হচ্ছে বলে আমি দুঃখিত।’’
সূর্যকান্ত মিশ্রের ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা ওই খালি জেতা, হারা, মন্ত্রিত্ব, সরকার, এমপি— এ সব নিয়ে ভাবিত নই। এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় গণতন্ত্রে। কিন্তু আমাদের কাছে একটা নীতি আছে, একটা আদর্শ আছে একটা লক্ষ্য আছে। সে লড়াইয়ের ময়দান থেকে আমরা কখনও সরে যাইনি, কখনও বিচ্যুত হইনি। আমাদের ওই সব ভয় পাওয়ার, দুঃস্বপ্ন দেখার আর তাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার কোনও কারণ ঘটেনি।’’