West Bengal Assembly Election 2021

WB election 2021 : দিলীপের মতো নেতা পাওয়া গর্বের, মোদীর দরাজ সার্টিফিকেট পদ্মে ‘মুখ’ জল্পনা বাড়াল

বারবার আক্রমণের লক্ষ্য হওয়া সত্বেও দিলীপ লড়াই করে চলেছেন দাবি করে মোদী বলেন, ‘‘দিলীপের উপরে প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে কিন্তু তাতে ভয় পাননি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২১ ১৫:৪১
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং দিলীপ ঘোষ।

দিলীপ ঘোষের মতো নেতা পাওয়া গর্বের বিষয়, ভোটের বাংলায় দাঁড়িয়ে দলের রাজ্য সভাপতিকে এ ভাবেই দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বারবার আক্রমণের লক্ষ্য হওয়া সত্বেও দিলীপ লড়াই করে চলেছেন বলে দাবি করে মোদী বলেন, ‘‘দিলীপের উপরে প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে। কিন্তু তাতে ভয় পাননি।’’ মোদীর এমন দরাজ সার্টিফিকেটের পরে আনন্দবাজার ডিজিটালকে দিলীপ বলেন, ‘‘মোদীজি-র মতো নেতার মুখ থেকে এমন কথা শোনাও সৌভাগ্যের। আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। আরও অনেক পরিশ্রম করতে হবে।’’

Advertisement

নীলবাড়ির লড়াইয়ে রাজ্য বিজেপি-র প্রথম সারির নেতারা প্রায় সকলেই প্রার্থী হয়েছেন। কয়েক জন সাংসদকেও বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছে। কিন্তু দিলীপ ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না। তাঁর উপরে দায়িত্ব রাজ্য জুড়ে প্রচার করার। শনিবার সেই দায়িত্ব যেন আরও বাড়িয়ে দিয়ে গেলেন মোদী। শনিবার খড়্গপুরের সমাবেশে মঞ্চে ছিলেন দিলীপ। মোদীর ঠিক আগেই বক্তব্য রাখেন। তৃণমূলকে আক্রমণ করার পাশাপাশি শুভেন্দুকে ‘নন্দীগ্রামের নায়ক’ আখ্যা দিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম দিদিকে নবান্নের পথ দেখিয়েছিল। এ বার নন্দীগ্রামই দিদিকে কালীঘাটের রাস্তা দেখাবে। অবসর কাটাতে হবে।’’ ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পকে ‘যমের দুয়ারে সরকার’ আখ্যা দিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘রাজ্যে এখন হুইলচেয়ারে সরকার চলছে।’’ দিলীপের দাবি, ‘‘দিদি বলেছেন, বাংলার মানুষ মোদীজির মুখ দেখতে চায় না। কিন্তু আসলে বাংলার মানুষ দিদির মুখ দেখতে চায় না। তাই তিনি এখন পা দেখাচ্ছেন।’’

এর পরেই বক্তব্য রাখতে উঠে মোদী বলেন, ‘‘আমার সৌভাগ্য যে এত বিপুল সংখ্যায় মানুষ বিজেপি-কে আশীর্বাদ করতে এসেছেন। এ বার বাংলায় বিজেপি সরকার।’’ এর পরে নিজেই প্রশ্ন তুলে নিজেই তার উত্তরে বলেন কেন বাংলায় বিজেপি সরকার আসছে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। বলেন, ‘‘কেন বলছি এ বার বিজেপি সরকার? আমার গর্ব হয় যে আমাদের দলে দিলীপ ঘোষের মতো একজন সভাপতি রয়েছেন। দলকে জেতানোর জন্য গত কয়েক বছরে দিলীপ ঘোষ শান্তিতে ঘুমোননি, দিদির ধমকেও ভয় পাননি। ওঁর উপর অনেক হামলা হয়েছে, মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু বাংলার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পণ নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। আর আজ বাংলায় নতুন শক্তি তৈরি হয়েছে।’’ রাজ্য বিজেপি-র নেতারাই শুধু নয়, রাজনৈতিক মহলও বলছে, কোনও জনসভায় মোদীর মুখে কোনও নেতা সম্পর্কে এমন প্রশংসা খুব কমই শোনা যায়। ফলে জল্পনাও শুরু হয়েছে।

Advertisement

বিজেপি জিতলে এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে কোনও মুখকে সামনে রেখে লড়ছে না বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা শুধু বলেছেন বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলার ‘ভূমিপুত্র’-ই হবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। প্রকাশ্যে না এলেও এটা সকলেরই জানা যে, রাজ্য বিজেপি-তে অনেক ‘মুখ’ নিয়ে জল্পনা রয়েছে। বিভিন্ন নেতার অনুগামীদের মধ্যে মানসিক লড়াইও রয়েছে। মোদী কি খড়্গপুর থেকে কেনও ইঙ্গিত রেখে গেলেন? ‘মুখ’ হওয়ার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেলেন দিলীপ?

এই প্রশ্নের উত্তরে দিলীপ নিজে বলেন, ‘‘আমি কোনও প্রতিযোগিতায় আছি বলেই তো জানি না।’’ একই সঙ্গে বলেন, ‘‘আমার কোনও প্রতিযোগিতা নেই, আমার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। আমার শুধু রয়েছে লক্ষ্য। ব্যক্তি নয়, আমার কাছে রাষ্ট্র ও দলের কাজ করাটাই প্রাধান্য পায়। নেতৃত্বের দেওয়া দায়িত্ব পালনই আমার একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাব।’’

দিলীপ এমন বললেও, মোদীর সার্টিফিকেটে রাজ্য বিজেপি-তে তাঁর অনুগামী হিসেবে পরিচিত নেতারা উৎফুল্ল। দিলীপ গোষ্ঠীর এক নেতার বক্তব্য, ‘‘এর আগে ২০১৬ সালে খড়্গপুরে এসেছিলেন মোদীজি। তখন লড়াইটা ছিল রাজ্য বিধানসভায় ঢোকার। এর পরে দিলীপদার নেতৃত্বে বিধানসভায় ৩ আসনে জয় এবং লোকসভায় বাংলা থেকে দলের ১৮ জন প্রতিনিধি গেছেন। এখন বাংলার বিধানসভা দখলের যে স্বপ্ন বিজেপি দেখছে তাতে বড় অবদান দিলীপদার। এর আগে কোনও রাজ্য সভাপতির আমলে দলের এমন অগ্রগতি হয়নি।’’

রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে অবশ্য মোদীর এই দিলীপ-স্তুতির অন্য একটা ব্যাখ্যাও শোনা যাচ্ছে। এক নেতার কথায়, ‘‘প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে আদি-নব্য বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে দলে। সেই ক্ষোভ মূলত দলের আদি অংশের। দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী না করা নিয়েও অনেকের মধ্যে ক্ষো‌ভ রয়েছে। মোদীজি তাঁর বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সেই ক্ষোভের আগুনেই শান্তিজল ছিটিয়ে গেলেন।’’ যে যুক্তিই ঠিক হোক না কেন, এটা সকলেই মানছেন যে অতীতে মোদীর মুখে এ হেন ব্যক্তি-প্রশংসা খুব কমই শোনা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন