অনাস্থায় অনড় ছয় কাউন্সিলর

বোমাবাজি, মারধরে ধুন্ধুমার গুসকরায়

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব উড়িয়ে দিয়ে বড় জয় এসেছে বিধানসভা ভোটে। কিন্তু গুসকরায় সেই কাঁটা ওপড়ানো গেল না সোমবারও। পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা বৈঠককে কেন্দ্র করে বোমাবাজি থেকে কাউন্সিলরদের মারধর— ফের অশান্তি উঠল চরমে। এমনকী, উঠল কাউন্সিলরদের অপহরণের অভিযোগও। শেষ পর্যন্ত দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুরপ্রধানকে সরানোয় সায় দিলেন তৃণমূলের ৬ জন কাউন্সিলর।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

গুসকরা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০১:০২
Share:

ছিঁড়েছে জামা। তবু জয়ে স্বস্তি। অনাস্থা-বৈঠক শেষে নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) ও তাঁর অনুগামীরা। ছবি: উদিত সিংহ।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব উড়িয়ে দিয়ে বড় জয় এসেছে বিধানসভা ভোটে। কিন্তু গুসকরায় সেই কাঁটা ওপড়ানো গেল না সোমবারও।

Advertisement

পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা বৈঠককে কেন্দ্র করে বোমাবাজি থেকে কাউন্সিলরদের মারধর— ফের অশান্তি উঠল চরমে। এমনকী, উঠল কাউন্সিলরদের অপহরণের অভিযোগও। শেষ পর্যন্ত দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুরপ্রধানকে সরানোয় সায় দিলেন তৃণমূলের ৬ জন কাউন্সিলর।

এ দিন এই বৈঠকে হাইকোর্টের নির্দেশে হাজির ছিলেন মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) মুফতি মহম্মদ শামিম। তিনি বলেন, “অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে উপস্থিত সব কাউন্সিলরই মত প্রকাশ করেছেন। এর পরে ১৬ জন কাউন্সিলরকেই চিঠি দিয়ে পুরপ্রধান নির্বাচন কবে হবে তা জানানো হবে।” পুরভবনে হাজির থাকলেও পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান ও তাঁদের অনুগামী কাউন্সিলররা বৈঠকে ছিলেন না। তৃণমূলের এই এলাকার পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘অনাস্থা-বৈঠকে উপস্থিত থেকে অন্যায় করেছেন ওই কাউন্সিলররা। এ ব্যাপারে দল প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।’’

Advertisement

গত ৫ এপ্রিল তৃণমূল ও সিপিএমের পাঁচ জন করে কাউন্সিলর পুরসভায় তলবি সভায় তৃণমূলের পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়কে সরানোর জন্য মত প্রকাশ করেছিলেন। সেই সিদ্ধান্ত ওই সভার সভাপতি নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় জেলা ও মহকুমা প্রশাসনকে জানিয়ে পরবর্তী পুরপ্রধান নির্বাচনের দাবি জানান। কিন্তু পুরপ্রধান নির্বাচন না হওয়ায় নিত্যানন্দবাবু হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। ১০ মে হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে সোমবার ফের অনাস্থা-বৈঠক হয়। তার আগে হাইকোর্টের নির্দেশেই তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াই-সহ ৬ জন কাউন্সিলর তলবি সভা ডেকে ১৬ জন কাউন্সিলরকে চিঠি দেন।

এই সভাকে ঘিরে গত তিন দিন ধরে তাতছিল গুসকরা শহর। রবিবারই আউশগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার বলেছিলেন, ‘‘দলের কাউন্সিলরদের নির্দেশ দিয়ছি, কোনও ভোটাভুটি বা অনাস্থা জানিয়ে পুরপ্রধান নির্বাচন করা যাবে।’’ এ দিন সকালে সিপিএম সিদ্ধান্ত নেয়, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালে তাঁরা আর যাবেন না। বৈঠকে গরহাজির থাকেন সিপিএমের পাঁচ কাউন্সিলর। তবে সকাল থেকেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লোকেরা পুরসভার দু’দিকে জড়ো হয়। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রায় দু’শো কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে গাড়িতে করে নিত্যানন্দ-গোষ্ঠীর ৬ জন কাউন্সিলর পৌঁছন। তার কিছু আগে পুরপ্রধান ও তাঁর অনুগামী কাউন্সিলর মল্লিকা চোঙদার পুরসভায় ঢুকে যান।

এর পরেই পুরসভার পিছনে পরপর বোমা পড়তে থাকে। হুড়োহুড়ি বেধে যায়। তার মধ্যেই কয়েক জন যুবক সোজা বৈঠকে ঢুকে মহকুমাশাসকের সামনে দাবি করতে থাকেন, ‘‘আমাদের কাউন্সিলরকে অপহরণ করা হয়েছে।’’ অভিযোগ, এক মহিলা-সহ দুই কাউন্সিলরকে মারধর করা হয়। ছবি তুলতে, ভিডিওগ্রাফি করতে বাধা দেওয়া হয় প্রশাসনের প্রতিনিধিকে। পুরভবনের বাইরে তখন লাঠি, বাঁশ নিয়ে জড়ো হয়েছেন অনেকে। পুরপ্রধান ও মল্লিকাদেবীকে গালিগালাজ করছিলেন তাঁরা।

পরে নিজের ছেঁড়া জামা দেখিয়ে নিত্যানন্দবাবুর অভিযোগ, “আমাকে মহকুমাশাসকের সামনে পুরপ্রধান মেরেছেন। তাঁর অনুগামীরা বৈঠকে ঢুকে আমাদের কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল ও রাখী মাজিকে মারধর করেছে। আর একটা কলঙ্কিত দিন হয়ে থাকল গুসকরা পুরসভা।” এ দিন অনাস্থা-বৈঠকের পরে প্রাক্তন পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াই থানায় অভিযোগ করেন।

বৈঠক চলাকালীন পুরপ্রধানের ঘরে বসে ছিলেন বুর্ধেন্দুবাবু, উপ-পুরপ্রধান চাঁদনিহারা মুন্সী ও কাউন্সিলর মল্লিকা চোঙদার। বুর্ধেন্দুবাবু দাবি করেন, “এই বৈঠক অগণতান্ত্রিক। এ নিয়ে মামলা চলছে। তা ছাড়া আমাদের দু’জন কাউন্সিলরকে অপহরণ করা হয়েছে। মারধর বা বোমাবাজির কোনও ঘটনা ঘটেনি।” পুরপ্রধান আউশগ্রাম থানায় কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও মৃত্যুঞ্জয় মন্ডলের নামে অপহরণের অভিযোগ করেছেন। যদিও নিত্যানন্দবাবু বলেন, “আমি নিজে ওই দুই কাউন্সিলরকে পুরপ্রধানের ঘরে বসে থাকতে দেখেছি। পুরপ্রধানের পদ থেকে অপসারিত হচ্ছেন জেনে এই সব নাটক করা হচ্ছে।”

দলের নির্দেশ অমান্য করলেন কেন? নিত্যানন্দবাবু বলেন, “দল সিপিএমের সঙ্গে যেতে নিষেধ করেছিল। অনাস্থা বৈঠক নিয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি।” চঞ্চলবাবুর কথায়, ‘‘ন্যায়ের জয় হল। মৌখিক নির্দেশের কোনও দাম আছে না কি!’’ পুরপ্রধান বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি দলকে জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন