খোদ ‘দিদি’র বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটে ‘দাদা’ কারিকুরি করতে পারেন বলে নালিশ ঠুকে দিয়েছিলেন ‘জোট-বৌদি’।
অভিযোগ পেয়ে কালবিলম্ব করেনি নির্বাচন কমিশন। প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র যাতে কোনও রকম প্রভাব খাটানোর সুযোগ না-পান, সেই জন্য কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে তারা। কমিশনের কড়া নির্দেশে নড়েচড়ে বসে রাজ্য প্রশাসনও। মদনবাবু আপাতত যেখানে আছেন, এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সেই বাতানুকূল এক নম্বর কেবিনকে মুড়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশি ঘেরাটোপে। কেবিনের মধ্যে মোবাইল-সহ সব ধরনের ফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। ইন্টারনেটের ব্যবহারও বন্ধ। সর্বোপরি শুক্রবার সারা দিনে স্ত্রী ছাড়া প্রাক্তন মন্ত্রীর কেবিনে বাইরের অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
বিজেপি, সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলির তরফে কমিশনে আবেদন জানানো হয়েছিল, মদনবাবুকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে রাখা হোক। শুক্রবার রাত পর্যন্ত অবশ্য পিজিতে আধাসেনাকে দেখা যায়নি। নজর রাখার জন্য ক্যামেরা বসানোর তোড়জোড়ও অনেকটা স্তিমিত।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতারের পর থেকে প্রাক্তন ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদনবাবুর অধিকাংশ সময়টাই কাটছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল পিজি-র বিশেষ ওয়ার্ডে। জেল থেকে দফায় দফায় তাঁর ওই হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি নিয়েও বিরোধী শিবির মাঝেমধ্যে কটাক্ষ করছে। ভোট পর্বে প্রাক্তন মন্ত্রীকে ফের পিজিতে ভর্তি করানোর তোড়জোড় শুরু হতেই বিরোধীরা সরব হতে থাকেন।
২৫ এপ্রিল ছিল মদনবাবুর নিজের কেন্দ্র কামারহাটির ভোট। তার আগের দিন, রবিবারেই তাঁকে ভর্তি করানোর জন্য পিজিতে কেবিন সাফসুতরো করা থেকে টিকিট কাটা পর্যন্ত যাবতীয় আয়োজন সারা হয়ে যায়। কিন্তু বিরোধীরা কমিশনে দাবি জানান, মদনবাবু হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁর নাগালে যাতে মোবাইল-সহ কোনও ফোন এবং ইন্টারনেট-সংযোগ না-থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, সে-দিন মদনবাবুকে পিজিতে ভর্তিই করা হয়নি। কামারহাটির ভোট চুকে যাওয়ার পরে, মঙ্গলবার তাঁকে ভর্তি করানো হয় ওই হাসপাতালে।
কিন্তু এ বার অভিযোগ ওঠে, হাসপাতালের কেবিনে বসেই খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রের ভোটে প্রভাব খাটাতে পারেন মদনবাবু। সেটা আটকানোর জন্য কমিশনের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা। বিশেষ ভাবে দরবার করেন ভবানীপুরে মমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, কংগ্রেস-সিপিএম জোটের প্রার্থী দীপা দাশমুন্সি।
রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতর সূত্রের খবর, কমিশনের নির্দেশ আসার পরেই স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে একটি নির্দেশ জারি করেন। তাতে বলা হয়, হাসপাতালের কেবিনে মদনবাবু কোনও মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন না। এমনকী পরিবারের লোকজন ছাড়া আর কাউকে যেন তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতিও দেওয়া না-হয়। আত্মীয়স্বজনদেরও হাসপাতালের সুপারের অনুমতি নিয়ে কেবিনে ঢুকতে হবে। প্রাক্তন মন্ত্রীর স্ত্রী অর্চনা মিত্র এ দিন বিকেলে কেবিনে গিয়ে মদনবাবুর সঙ্গে দেখা করেন। যদিও এই কড়াকড়ির বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
স্বরাষ্ট্রসচিবের নির্দেশ পেয়ে হাসপাতালে প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীর নিরাপত্তায় এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের অধীনে দু’জন ওসি, চার জন এসআই, এক জন এএসআই এবং এক জন ডেপুটি জেলার-সহ ১৫-২০ জন পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করা হয়। স্বরাষ্ট্রসচিব তাঁর নির্দেশ পাঠিয়ে দেন স্বাস্থ্যসচিব, কারাসচিব ও পুলিশের কমিশনারের কাছে।
মদনবাবুর শারীরিক অবস্থা মোটের উপরে স্থিতিশীল বলেই জানান চিকিৎসকেরা। এ দিন সকাল থেকে তাঁর রক্তের বেশ কয়েকটি পরীক্ষা হয়েছে। সেই সঙ্গে করা হয়েছে ইউএসজি, বুকের এক্স-রে। চিকিৎসকেরা জানান, প্রাক্তন মন্ত্রীর শ্বাসকষ্ট এখনও রয়েছে। আছে মানসিক উদ্বেগও। তবে রক্তচাপ ও অন্যান্য শারীরিক মাপকাঠি নিয়ন্ত্রণে।