ভোটের আগে সরলেন এসপি

ইঙ্গিত মিলেছিল মঙ্গলবারই। কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সঙ্গে বৈঠকে যে সব জেলার পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা বেশি বকাঝকা করা হয়েছিল, বর্ধমান ছিল তাদের অন্যতম। শেষমেশ ভোটের আগে বর্ধমানের পুলিশ সুপার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল কুণাল অগ্রবালকে। সরানো হল জেলার পাঁচ ওসি এবং আইসি-কেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০২:১১
Share:

ইঙ্গিত মিলেছিল মঙ্গলবারই। কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সঙ্গে বৈঠকে যে সব জেলার পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা বেশি বকাঝকা করা হয়েছিল, বর্ধমান ছিল তাদের অন্যতম। শেষমেশ ভোটের আগে বর্ধমানের পুলিশ সুপার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল কুণাল অগ্রবালকে। সরানো হল জেলার পাঁচ ওসি এবং আইসি-কেও।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়ছিল। সে জন্যই মঙ্গলবারের বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর তোপের মুখে পড়তে হয় পুলিশ সুপারকে। কী ধরনের অভিযোগ ছিল পুলিশের বিরুদ্ধে? জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, বছরখানেক আগে পুরভোটের দিন কাটোয়া শহর জুড়ে তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা। শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই কাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ করেছিল বিরোধীরা। সে দিন ওই শহরে হাজির ছিলেন পুলিশ সুপার নিজে। থানায় বসেছিলেন তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। সেই ঘটনার সিডি জমা পড়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে।

গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে এমন অভিযুক্তদের ধরার ক্ষেত্রে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। বর্ধমান জেলায় এমন অনেক অভিযুক্তের ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে কমিশনে নালিশ করেছিল সিপিএম। পুলিশ সুপার অবশ্য বরাবরই দাবি করেছেন, অভিযুক্তেরা ফেরার থাকায় তাদের ধরা যাচ্ছে না। কিন্তু সিপিএম অভিযোগ করেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে এমন অনেককে নানা সরকারি দফতরে দেখা যাচ্ছে। একাধিক খুনে অভিযুক্ত কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখ নানা সরকারি কর্মসূচি, এমনকী পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে হাজির থাকলেও তাঁকে ধরা হয়নি। ভোট ঘোষণার পরে নির্বাচন কমিশনের চাপে জাহের-সহ বেশ কয়েক জন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

বর্ধমান জেলায় দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধে বারবার বৈঠক করেছেন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু তার পরেও কোন্দল বন্ধ হয়নি। শেষে গত বছর নানা এলাকায় তৃণমূলের বিভিন্ন পক্ষের নেতাদের থানায় ডেকে বৈঠক করে পুলিশ। পুলিশ সুপারের নির্দেশেই শাসক দলের দ্বন্দ্ব মেটাতে থানায়-থানায় এই বৈঠক হয়েছিল বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এ ব্যাপারে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনের কাছে জমাও দেয় তারা। পুলিশ সুপার শাসকদলের জেলা সভাপতির ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়।

প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছে যাওয়ার পরেও তাদের টহলে পাঠানোর ব্যাপারে পুলিশের গাফিলতি ধরা পড়েছে কমিশনের নজরে। সিপিএমের অভিযোগ, সম্প্রতি খণ্ডঘোষে কেন্দ্রীয় বাহিনী রুট মার্চে গেলে শাহজাহান চৌধুরী নামে দলের এক প্রবীণ কর্মী তাদের কাছে অভিযোগ করেন, গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি তিনি। বাহিনী ফিরে যাওয়ার পরেই তৃণমূলের লোকজন ওই সিপিএম কর্মীকে মারধর করে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবারও দুর্গাপুরে এক সর্বদল বৈঠকে সিপিএমের তরফে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হয়, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে উপদ্রুত এলাকাগুলির পরিবর্তে তুলনায় শান্ত অঞ্চলে টহলে পাঠানো হচ্ছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, বাহিনীকে ব্যবহারে গাফিলতির এই সব অভিযোগ নিয়েও জেলা পুলিশের উপরে অসন্তুষ্ট হয়েছে কমিশন। এ ছাড়া অস্ত্র উদ্ধারে তেমন সাফল্য না মেলা ও নানা এলাকায় মোটরবাইক বাহিনীর দাপটের অভিযোগও উঠেছে বর্ধমানের পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশ সুপার ছাড়াও সরানো হয়েছে মঙ্গলকোটের ওসি পার্থ ঘোষ, জামুড়িয়ার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী, রানিগঞ্জের ওসি অরূপ সরকার, পূর্বস্থলীর আইসি সোমনাথ দাস, উখড়ার আইসি সঞ্জীব দে-কে।

বৃহস্পতিবার রাতে নির্বাচন কমিশন সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পরে পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement