জখম শাহরুখ। — নিজস্ব চিত্র।
ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসে গুলি চলার ঘটনা এখনও বহাল শহরে। এ বার গুলি-বোমাবাজিতে উত্তপ্ত হল পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়। শহরে এমন অবাধ দুষ্কৃতী-রাজে উদ্বিগ্ন লালবাজার।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে এক যুবককে লক্ষ করে গুলি-বোমা ছোড়ে স্থানীয় এক দল দুষ্কৃতী। গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও বন্দুকের বাটের আঘাতে জখম হন বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দা শাহরুখ নামে ওই যুবক।
শহরে ভোট-পর্ব মিটে যাওয়ার পরে এই নিয়ে তিন বার গুলি চলল। নির্বাচনের পরপরই বেহালায় সিপিএমের এক সর্মথকের বাড়ি লক্ষ করে গুলি চলে। ঘটনায় দুই দুষ্কৃতীকে পাকড়াও করা হয়। তবে শনিবার প্রগতি ময়দান এলাকায় গুলিতে জখম হওয়ার ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। ওই ঘটনায় দুষ্কৃতীরা এক ব্যাক্তিকে লক্ষ করে গুলি চালিয়েছিল। গুলিটি তাঁর হাতে লাগে।
কী হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে?
পুলিশ জানায়, ওই রাতে পৌনে বারোটা নাগাদ পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়ের কাছে একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে ফিরছিলেন শাহরুখ। অভিযোগ, সেই সময়ে দু’টি মোটরবাইকে চেপে তপসিয়ার টারজান, আলতাফ, ফয়জল ও মিরাজুল নামে চার যুবক তাঁর পথ আটকায়। কিছু বোঝার আগেই শাহরুখের মাথায় বন্দুকের বাট দিয়ে মারে টারজান। প্রতিবাদ করলে টারজান ও তার সঙ্গীরা তাঁকে লক্ষ করে চার রাউন্ড গুলি ছোড়ে। অল্পের জন্য গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বেগতিক দেখে শাহরুখ এলাকা ছেড়ে পালাতে চাইলে টারজানরা তাঁকে লক্ষ করে বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। কিন্তু সেটি ফাটেনি। লোকমুখে বোমাবাজি এবং গুলি চলার কথা শুনে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ।
তারা জানায়, এলাকাবাসী গুলি চলার কথা বললেও ঘটনাস্থল থেকে কোনও গুলির খোল উদ্ধার হয়নি। তবে, ঘটনাস্থল থেকে দু’টি তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী উভয় পক্ষের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন থানায় খুনের চেষ্টা-সহ অপরাধের মামলা রয়েছে। পুরনো শত্রুতার জেরেই এই ঘটনা বলে পুলিশের দাবি।
লালবাজার সূত্রের খবর, বেনিয়াপুকুরে একই এলাকায় বাড়ি মিরাজুল এবং শাহরুখের। মিরাজুলের বাবা এলাকায় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হলেও পুলিশের খাতায় তাঁরও নাম রয়েছে। অভিযোগ, গত শুক্রবার মিরাজুলদের বাড়ির সামনে এলাকার একদল কিশোর অভব্যতা করছিল। তাদের এক জনকে মিরাজুলের বাবা মারধর করেন। প্রতিবাদ করায় গত রবিবার এলাকার বাসিন্দারা মিরাজুলদের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। ভাঙচুর করা হয় মিরাজুলদের একটি গাড়িও। পুলিশ জানায়, ওই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিল শাহরুখ। সেই ঘটনার বদলা
নিতেই মিরাজুলরা শাহরুখের উপরে হামলা করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান পুলিশের।
লালবাজার সূত্রের খবর, নতুন সরকার শপথ নেওয়ার আগে খাস শহরের বুকে দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ঘটনায় উদ্বিগ্ন কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তারা। ঘটনার পরেই দুষ্কৃতীদের ধরার জন্য স্থানীয় থানার পাশাপাশি গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার পরেও অবশ্য পুলিশের নিচুতলার একাংশের অভিযোগ, পরপর এমন হামলার ঘটনায় জড়িতদের পুলিশ গ্রেফতার করছে, ঠিকই। কিন্তু দুষ্কৃতীদের অস্ত্রের অভাব হচ্ছে না। অস্ত্র কোথা থেকে আসছে, পুলিশ তার কোন দিশা পাচ্ছে না। কী ভাবে এত সহজে দুষ্কৃতীদের
হাতে আগ্নেয়াস্ত্র পৌঁছে যাচ্ছে, কারা কোন পথে গুলি সরবরাহ করছে— কিছুই গোয়েন্দাদের জানা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। লালবাজারের একাংশের ধারণা, অস্ত্রের জোগানে নিয়ন্ত্রণ আনতে না পারলে নতুন সরকারের পক্ষে এই দুষ্কৃতীরাজ রোখা মুশকিল হবে। ফলে শহরের বুকে নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বাস দিলে তা খাতায়-কলমেই থেকে যাবে বলে মনে করছেন পুলিশের ওই অংশটি।