সন্ত্রাসের স্মৃতি এখনও টাটকা

সন্ত্রাসের স্মৃতি বয়ে বেড়ানোর দিন ফুরোল না এ তল্লাটের। বামফ্রন্ট আমলে তৎকালীন শাসক দলের সঙ্গে বিরোধীদের রক্তক্ষয়ী সংঘাত দেখেছে পটাশপুর। একসময় পটাশপুর এলাকার বড়হাট, ব্রজলালপুর, নৈপুর, চিস্তিপুর, গোকুলপুর, মথুরা, আড়গোয়াল প্রভৃতি অঞ্চলে শাসক দল সিপিএমের দাপটের পাশাপাশি বিরোধীদলের নেতা–কর্মী-সমর্থকদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠত । এমনকি রাজনৈতিক রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে প্রাণ গিয়েছে কয়েকজনের।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

পটাশপুর শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০২:২০
Share:

সন্ত্রাসের স্মৃতি বয়ে বেড়ানোর দিন ফুরোল না এ তল্লাটের।

Advertisement

বামফ্রন্ট আমলে তৎকালীন শাসক দলের সঙ্গে বিরোধীদের রক্তক্ষয়ী সংঘাত দেখেছে পটাশপুর। একসময় পটাশপুর এলাকার বড়হাট, ব্রজলালপুর, নৈপুর, চিস্তিপুর, গোকুলপুর, মথুরা, আড়গোয়াল প্রভৃতি অঞ্চলে শাসক দল সিপিএমের দাপটের পাশাপাশি বিরোধীদলের নেতা–কর্মী-সমর্থকদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠত । এমনকি রাজনৈতিক রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে প্রাণ গিয়েছে কয়েকজনের।

২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর সেই রক্তক্ষয়ী লড়াই বন্ধ হলেও সন্ত্রাসের আবহের সেই ঐতিহ্যে ছেদ পড়েনি বলে অভিযোগ। তারই ফলশ্রুতিতে বাম নেতা-কর্মীদের একাংশের ঘরছাড়াও ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

এ বার বিধানসভা ভোট ঘোষণার পর পটাশপুর- ১ ব্লকে সিপিএমের সিংদা জোনাল কমিটির অফিস খুলেছে সবে মাত্র কয়েকদিন আগে দলের নেতা-কর্মীরা ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরছেন। এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল রয়েছে। তবু শঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছে নির্বিঘ্নে সবাই ভোট দিতে পারবে তো?

যদিও শাসক দল তৃণমূলের তরফে বামেদের তোলা এইসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। বিধানসভা ভোটের প্রচারে বর্তমান শাসক দলের প্রচারে এসেছে বন্যারোধে কেলেঘাই নদী সংস্কার-সহ এলাকার নানা উন্নয়নের কাজের খতিয়ান ও বাম আমলে সিপিএমের সন্ত্রাস। পাল্টা হিসেবে বামেদের প্রচারেও এসেছে বর্তমান শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ। ফলে এ বারও বিধানসভার ভোটে যুযুধান দুই শিবিরের কাছে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে সেই সন্ত্রাস।

২০১১ সালের মত এবারও পটাশপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন জ্যোতির্ময় কর আর বিরোধী বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী হয়েছেন সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাখনলাল নায়েক। মাখনলালবাবুর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে বিরোধী রাজনৈতিকগুলি কোনও কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। দলীয় কার্যালয় বন্ধ রাখা ছাড়াও সন্ত্রাসের কারণে অনেকেই ঘরছাড়া হয়ে বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছিল। নির্বাচনের আগে কিছু ঘড়ছাড়া মানুষ বাড়িতে ফিরলেও আতঙ্কে রয়েছে।’’

সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল প্রার্থী জ্যোতির্ময়বাবুর উত্তর, ‘‘পটাশপুরে এখন সন্ত্রাসের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ উল্টে তাঁর দাবি, ‘‘মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কেলেঘাই-বাগুই নদী সংস্কার করে বন্যা রোধ। বর্তমান সরকারের সময়েই কেলেঘাই, বাগুই নদী সংস্কারের ফলে বন্যা রোধ হয়েছে। সাব-মার্সিবল বসিয়ে জমিতে জলসেচ করার ফলে কৃষিতে উন্নতি হয়েছে।’’

এই কেলেঘাই-বাগুই নদ সংস্কার কার আমলে হয়েছে সেটা নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন করে দড়ি টানাটানি। মাখনবাবুর দাবি, বাম সরকারের আমলেই প্রথম কেলেঘাই -বাগুই নদীসংস্কার প্রকল্প শুরু হয়েছিল। তৃণমূল সরকার সেই কাজটাকেই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কাজ এখনও শেষই করতে পারেনি।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

এ বিষয়ে আর পাল্টা কিছু না বলে জ্যোতির্ময়বাবুর অভিযোগের তির বামেদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।

গতবারের মত এবারও পটাশপুর বিধানসভায় প্রধান দুই প্রতিপক্ষ একই রয়েছে। কিন্তু বদলে গিয়েছে ভোটের সমীকরণ। গতবার ভোটে জ্যোতির্ময়বাবু ছিলেন বিরোধী তৃণমূল-কংগ্রেস জোট প্রার্থী। পালা বদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রীসভায় সমবায় দফতরের দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যোতির্ময়বাবু। ফলে এ বার শাসকদলের হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক জ্যোতির্ময়বাবু। আর বিরোধী শিবিরের বামফ্রন্ট শরিক সিপিআই প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত হাইস্কুল শিক্ষক মাখনবাবুদের এবার জোট সঙ্গী হয়েছে কংগ্রেস। ফলে গতবার তৃণমূলের কাছে পরাজিত হলেও এবার জোটের প্রার্থী হিসেবে বাড়তি জনসমর্থন পেয়ে জেতার আশায় রয়েছেন মাখনবাবু।

গত বিধানসভা ও লোকসভা ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে শাসক দল তৃণমূলের দাপট এখানে কিভাবে বেড়েছে। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট প্রার্থী জ্যোতির্ময় কর বামফ্রন্ট প্রার্থী মাখনলাল নায়েককে প্রায় ৭ হাজার ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। দু’বছরের ব্যবধানে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ভোট এক ধাক্কায় বেড়ে যায় প্রায় ১০ শতাংশ।

তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, শাসক দলের এগিয়ে থাকার মধ্যেও এবার জোটের কাঁটা জয়ের পথে অন্যতম বাধা হবে। আর সন্ত্রাসের আবহ দূর করে ভোট হলে ফলের রঙ বদল হতে পারে আশা বিরোধীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন