জুজু আরাবুল, রেজ্জাকের রক্ষী বেড়ে ১১

বাম আমলে সিপিএমের মন্ত্রী থাকার সময়েও তিনি এমন নিরাপত্তা পাননি! তৃণমূলে আসার পরে যেমনটি পাচ্ছেন! প্রাক্তন মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে মাস কয়েক আগে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার জন্য বরাদ্দ ছিল সাকুল্যে এক জন সশস্ত্র রক্ষী।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০৪:২০
Share:

বাম আমলে সিপিএমের মন্ত্রী থাকার সময়েও তিনি এমন নিরাপত্তা পাননি! তৃণমূলে আসার পরে যেমনটি পাচ্ছেন! প্রাক্তন মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে মাস কয়েক আগে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার জন্য বরাদ্দ ছিল সাকুল্যে এক জন সশস্ত্র রক্ষী। জার্সি পাল্টে রেজ্জাক এখন তৃণমূলে। শুধু তা-ই নয়, ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রে শাসকদলের প্রার্থীও তিনি। সেই ভাঙড়, যেখানে তাঁকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই আমলে। তখনও কিন্তু বর্ষীয়ান নেতার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়নি।

Advertisement

যা এখন হল। এই মুহূর্তে রেজ্জাককে ঘিরে থাকছে ইনস্যাসধারী জওয়ানের দল! দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের খবর, ওঁর জন্য রাজ্য প্রশাসন ‘ওয়াই ক্যাটেগরি’ সুরক্ষার বন্দোবস্ত করেছে। তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১১ জন রক্ষী।

নেতা, ভিআইপি বা ভিভিআইপি’দের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ বলয় ‘জেড প্লাস।’ প্রধানমন্ত্রীর জে়ড প্লাস সুরক্ষা-ব্যূহে থাকেন এনএসজি কম্যান্ডো ও এসপিজি-র ৩৬ জন। এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ‘জেড প্লাস’ বলয়ে সুরক্ষিত। মমতাকে ঘিরে রাখেন বিশেষ নিরাপত্তা শাখা (স্পেশ্যাল সিকিওরিটি উইং) ও রাজ্যের কম্যান্ডোরা। জেড প্লাসের নীচে নিরাপত্তা বলয়ের আরও তিনটে ধাপ— জেড, ওয়াই, এক্স। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির গুরুত্ব ও প্রাণহানির আশঙ্কা যাচাই করে ঠিক হয়, তাঁকে কোন স্তরের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। ‘ওয়াই’ ক্যাটেগরিতে ১১ জন রক্ষী বরাদ্দ।

Advertisement

তবে ভাঙড়ে শাসকদলের প্রার্থীকে এ ভাবে রক্ষী পরিবেষ্টিত হয়ে প্রচার করতে দেখে স্থানীয় মানুষ ঘোর ধন্দে। কারণ, ভাঙড় মাওবাদী এলাকা নয়। উপরন্তু এ তল্লাটে দূরবিন দিয়েও বিরোধীদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার। গত লোকসভা ভোটের হিসেব অনুযায়ী, ভাঙড় বিধানসভায় তৃণমূল নয় নয় করে ৬০ হাজার ভোটে এগিয়ে। এমন জায়গায় তৃণমূল প্রার্থীর ‘সিকিওরিটি’র বহর দেখে অনেকের প্রশ্ন— প্রার্থীর নাম আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা বলেই কি এত সতর্কতা? বাম জমানার দাপুটে মন্ত্রী কি নতুন দলে এসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন? তা-ই যদি হয়, তা হলে ভয়টা কাদের নিয়ে? ভাঙড়ে তৃণমূলের সামনে খাপ খোলার ক্ষমতা তো তৃণমূল ছাড়া কারও নেই!

এবং এই প্রেক্ষাপটেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে আর একটি নাম। আরাবুল ইসলাম। ভাঙড়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা। ২০১২-য় ভাঙড়ের মাটিতে রেজ্জাককে পেটানোর মামলায় তাঁর দিকেও আঙুল উঠেছিল। কিন্তু এখন তো রেজ্জাক তৃণমূলে! সেই দলের টিকিটেই প্রার্থী। আরাবুল ইসলাম বা কাইজারের মতো ওখানকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতারা এখন ওঁর সতীর্থ। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটছেন, এক সঙ্গে জনসভা করছেন, পাশাপাশি বসে চা-টাও খাচ্ছেন। তা হলে ভয়টা কাদের?

তৃণমূলের অন্দরমহলে কান পাতলে অবশ্য মালুম হচ্ছে, ‘সমীকরণ’ এত সোজা নয়। ভাঙড়ে রেজ্জাককে টিকিট দেওয়া নিয়ে দলের একাংশের ক্ষোভ রয়েছে। অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, রেজ্জাকের পাশে পাশে থাকছেন যাঁরা, তাঁদেরই কেউ কেউ নাকি ‘সুযোগ’ খুঁজছেন। ‘‘মওকা পেলে আক্রমণ হতেই পারে। তাই সাবধানের মার রাখা হচ্ছে না।’’— মন্তব্য এক নেতার।

বস্তুত ভাঙড়ে এখনও আরাবুল ইসলামই যে তৃণমূলের শেষ কথা, দল বদলে আসা প্রার্থী তা পদে পদে টের পাচ্ছেন। রেজ্জাকের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি: ভাঙড়ের বদলে উনি চেয়েছিলেন তৃণমূলের হয়ে ক্যানিং (পূর্ব) কেন্দ্রে দাঁড়াতে। ভাঙড়ে প্রার্থী হলে আরাবুল ঝামেলা পাকাতে পারে— এই আশঙ্কাও তিনি প্রকাশ করেছিলেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে। আর্জি ধোপে টেকেনি। তৃণমূল নেতৃত্ব রেজ্জাককে যেমন ভাঙড়ে লড়তে পাঠিয়েছেন, তেমন আরাবুলকে করে দিয়েছেন ভাঙড়ের নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান।

অর্থাৎ, রেজ্জাকের জিতিয়ে আনার ভার বর্তেছে আরাবুলের কাঁধে। কিন্তু দলের একাংশের কথায় পরিষ্কার, এতেও ফাঁড়া কাটেনি। এক নেতার পর্যবেক্ষণ, ‘‘আরাবুল রেজ্জাককে সহ্য করতে পারে না। ওর দলবল আচমকা যাতে হামলা চালাতে না পারে, তাই রেজ্জাকের জন্য ওয়াই ক্যাটেগরির সিকিওরিটি।’’

নিরাপত্তাবৃদ্ধি প্রসঙ্গে রেজ্জাক কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আরাবুল কী বলেন? রেজ্জাকের উপরে হামলার আশঙ্কা বেবাক উড়িয়ে দিয়ে আরাবুলের মন্তব্য, ‘‘দল রেজ্জাক সাহেবকে প্রার্থী করেছে। মানুষ ভোট দেবে। অবাধে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন