জোটই আসছে: সনিয়া

আজ বৃহস্পতিবার, জেলায় এ বারের ভোটে প্রচারে প্রথম আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়ার সভা ভাসল জোটের জনস্রোতে!

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

মুরারই শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৪
Share:

জোটের প্রার্থীদের সঙ্গে। (ডান দিকে) জোরাল জোট-বার্তার ছবি।

আজ বৃহস্পতিবার, জেলায় এ বারের ভোটে প্রচারে প্রথম আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়ার সভা ভাসল জোটের জনস্রোতে!

Advertisement

বুধবার শেষ বিকেলে সনিয়ার কপ্টার মুরারইয়ের মাটি ছাড়তেই, জোটের সভায় ভিড়ের বহর নিয়ে জল মাপতে শুরু করছে তৃণমূল। কয়েক ঘণ্টা আগেও বোলপুরের পার্টি অফিসে বসে, শাসকদলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল মুরারইয়ে যে মার্জিনের কথা বলেছিলেন, সন্ধের পর হিসাবে হোঁচট খাচ্ছেন তিনিও।

এ দিন সকাল থেকেই মুরারই পশু হাটের মাঠের দিকে লোকের মিছিলের ঢল দেখা যায়। বেলা যতো বাড়ে, ভিড় তত বাড়তে থাকে। সাড়ে এগারটা থেকে সভা স্থলে লোক ঢুকতে থাকায় দুপুর দেড়টাতে সাংবাদিকদের বসার জায়গার দিকেও জনতা ঢুকতে থাকে। কোথাও কোথাও বিশৃঙ্খলাও দেখা যায়। একসময় পিছন থেকে চেয়ার তুলে দেওয়া হয়। এবং কংগ্রেস কর্মীদের দেখা যায় প্রায় চেয়ার সরিয়ে পরে আসা কর্মী-সমর্থকদের বসার জায়গা করে দিতে। ইতিমধ্যে পুলিশ, কংগ্রেস কর্মীরা, প্রার্থী আলি মোর্তাজা খান নিজে এসে সভার জনতাকে শান্ত করার জন্য ব্যরিকেডের ধারে চলে আসেন।

Advertisement

একসময় ভিড়ের চাপে সনিয়া গাঁধী আসার আগেই হেলিপাডের বাঁশের বেড়ার একাংশ ভেঙে যায়। ফের নতুন করে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। ভিড়ের বহর দেখে, অনেকে মাঠের মধ্যেকার গাছের ডালে উঠতে থাকেন। কেউ কেউ মাঠ লাগোয় বাড়ির ছাদে উঠে পড়েন। সকলেই সনিয়াকে দেখতে চায়। জোটের সভার এই ভিড়ের বহর নিয়ে দুপুর থেকেই জল্পনা ছড়ায় জেলায় জেলায় শাসকদলের ফোনে ফোনে। কেউ কেউ বলতে থাকেন, বাইরে থেকে লোক এনে মাঠ ভরানো হয়েছে।


উঁকিঝুঁকি গাছে চড়েও।

এ দিন সনিয়া মুরারইয়ে জেলায় জোট প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে এসেছিলেন। সনিয়ার সভা শুরুর ঘোষণা করা হয় একটার সময়। সেই জন্য কেউ বাসে কেউ ভ্যানে তার আগেই মাঠে চলে আসেন। কংগ্রেসের দাবি, বারোটার মধ্যে প্রায় তিরিশ হাজার লোক সভাস্থলে ঢুকে পড়েছে। সভা যখন শেষ হয়, মাঠে জনসংখ্যা ছিল পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি। যদিও পুলিশের দাবি, হাজার চল্লিশের মতো লোক হয়েছিল এ দিনের সভায়।

ভিড়ের মেজাজ দেখে, সনিয়ার সঙ্গে আসা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘‘হাতে নিয়ে হাতুড়ি সঙ্গে সিংহ হাত, তৃণমূল এবার হবে চিৎপাত।’’

সভায় সনিয়া এসে পৌঁছন নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা দু’য়েক পরে। তাঁকে দেখেই অনেক এগিয়ে আসতে থাকেন। সনিয়াও এগিয়ে যান ব্যারিকেডের ধারে। অনেকের সঙ্গে হাত মেলান। তিনি বলেন, ‘‘বাংলার সরকার পরিবর্তনের সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা ক্ষমতা আসার পর ভুলেই গিয়েছে, করেনি। কিছু লোক ক্ষমতা দখলের পরে অহঙ্কারী হয়ে যায়। নিজেকে ভগবান ভাবতে লাগে। যে অহঙ্কার করে সেই প্রথমে মানুষের নজরে আসে। বাংলার জনতাকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। কিছু লোক ক্ষমতাটাকে অধিকার করার পরে বারবার ভুলে যায়।’’ বলেন, ‘‘গরিবকে এই সরকার ধোঁকা দিয়েছে। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাঁচ বছরে বহু মত নিয়ে যে কাজ করেছে, দিল্লিতে মোদি সরকার একই রকম কাজ দু’ বছর ধরে করছে। তৃণমূল সরকারের আকাশ চুম্বি অহঙ্কারের সীমা গরিব লোকদের ধোঁকা দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের বিধায়ক ও কর্মকর্তাদের ধোঁকা দিয়েছে। তৃণমূল সরকার মমতার সরকার আমআদমির ভোটে জিতেছিল। কিন্তু অমানবিক তৃণমূল সরকার দুর্নীতির চরম সীমায় পৌঁছেছে।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, ‘‘৬০ হাজার লোক সভায় এসেছিলেন। এতেই বোঝা যায়, মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন।’’

জোটের এই ভিড়ের সমালোচনা করে তৃণমূলের মুরারই ১ ব্লক সভাপতি বিনয় ঘোষ বলেন, ‘‘কত হবে, খুব জোর কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজার লোকের সমাগম ঘটেছিল।’’ বস্তুত, মুরারই কেন্দ্রে কংগ্রেসের বরাবরই জনসমর্থন রয়েছে। রাজ্যের বিধানসভা আসনগুলির মধ্যে শেষ আসন মুরারই। এ বার এই আসনে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া হয়েছে বামফ্রন্টের। প্রার্থী রয়েছে কংগ্রেসের। বামফ্রন্টের সঙ্গে গাটছড়ার আবহে কংগ্রেস পুরনো আসনে জয় চাইছে। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে শাসকদলের ভোটের একটা অংশ জোটের পালে আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। অন্য দিকে, কংগ্রেস, সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, বিজেপি-র ভোট ভাঙিয়ে জয়ের আশায় তৃণমূলও। দল সাংগঠনিক দিক থেকেও শক্তিশালী, দাবি তৃণমূল নেতাদের। দ্বিতীয়বার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তৃণমূল নেতারা। এ বার তৃণমূল প্রার্থী করেছে মুরারই ১ ব্লক কংগ্রেসে প্রাক্তন সভাপতি তথা ২০১৩ সালে নলহাটি বিধানসভার উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী আবদুর রহমানকে (লিটন)। কংগ্রেসের ভোটে ভাগ বসাতেই এমন কৌশল মনে করছেন অনেকেই।

সনিয়া এ দিন যেভাবে মমতাকে বিঁধলেন, তার জবাবে আজ মমতা কি বলেন সেটাই দেখার। দেখার, জোটের ভিড়ের টেক্কা দিতে অনুব্রত কোন দাওয়াই দেন! ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন