রক্ষী জানে না বুথের পথ, চাপা গলায় শাসালো শাসক

সকাল ১১ টা। পিংলার মণ্ডলবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৮৩ নম্বর বুথের সামনে বাসিন্দাদের লম্বা লাইন। বুথের ২৫ মিটারের মধ্যেই তৃণমূলের ক্যাম্প। সেখানে মোটরবাইক আর কাপড় মুখঢাকা যুবকের ভিড়।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

পিংলা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০০
Share:

পিংলায় একটি বুথের সামনেই জটলা। ছবি: আরিফ ইকবাল খান।

সকাল ১১ টা। পিংলার মণ্ডলবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৮৩ নম্বর বুথের সামনে বাসিন্দাদের লম্বা লাইন। বুথের ২৫ মিটারের মধ্যেই তৃণমূলের ক্যাম্প। সেখানে মোটরবাইক আর কাপড় মুখঢাকা যুবকের ভিড়। সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরা তাক করতেই মুখের কাপড় সরিয়ে দিল এক যুবক। তারপরেই নিমেষে উধাও ওই বাহিনী। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সকাল থেকেই ওই যুবকেরা গ্রামের ভিতরে ঢুকে ভয় দেখানোর কাজটি সেরে রাখছিল। সংবাদমাধ্যমে তৃণমূল ক্যাম্পের সামনে মুখ-বাঁধা ছবি উঠে যাওয়ার ভয়েই তাঁরা চম্পট দেয়।

Advertisement

দুপুর ১টা। ডাকবাংলোর মোড়ে একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে জনা কয়েক যুবক। সামনে এসে দাঁড়ালো পুলিশের গাড়ি। ভোটের কাজে আসা পুলিশ বাহিনীর হাতে তালিকা। বাজপুর এলাকার ১৭৬ নম্বর বুথে যেতে চাইছেন পুলিশ কর্মীরা। কিন্তু পথ জানা নেই। তাই খোঁজ চলছে।

গাড়িতে বসে থাকা এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘আমরা নদিয়া থেকে এসেছি। এখানকার রাস্তাঘাট জানা নেই। স্থানীয় থানার পুলিশ বিভিন্ন বুথে চলে গিয়েছে। ফলে আমাদের পথ দেখানোর মতো
কেউ নেই।’’

Advertisement

প্রথম ছবিটা যদি ভোটের দিনের খোলা খাতা হয়, তবে দ্বিতীয়টা অবশ্যই প্রচ্ছদ। কারণ অব্যবস্থার সূচনাটা ওই ছবিতেই লুকিয়ে। কিন্তু কেন ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত একদল পুলিশ কেন রাস্তা চেনেন না, কেনই বা তাঁদের সঙ্গে নেই কোনও প্রদর্শক। উত্তর মেলেনি। ফলে সারাদিনের অন্য প্রশ্নগুলোর উত্তরও যে আর মিলবে না। তা জানাই ছিল। হলও তেমনই।

মণ্ডলবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৮৩ নম্বর বুথের ভিতরে ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসারকে জিজ্ঞাসা করা হল সব ঠিকঠাক আছে কিনা। উত্তর আসেনি। অফিসার শুধু জানালেন ৮৩৭ জন ভোটারের মধ্যে ৪৮৩ টি ভোট পড়ে গিয়েছে। বুথের সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনী অবশ্য কড়া নজরদারি বজায় রেখেছে। পাকা রাস্তায় পুলিশের গাড়ির টহল দিয়েছে। তবু পিংলার বিধানসভার এলাকায় দেখা হামেশাই গিয়েছে তৃণমূলের বাহিনীকে। একসময় সিপিএমের শক্তঘাটি জামনা, ক্ষীরাই, পিন্ডুরুই প্রভৃতি এলাকায় এখন তৃণমূল বাহিনীর দাপট।

এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে সব ঠিক আছে। আসলে শাসক দলের হুমকি অগ্রাহ্য করবে সাধ্য কার? আর তাতেই প্রমাদ গুনছেন পিংলার বিদায়ী বাম বিধায়ক প্রবোধ সিংহ। সোমবার দুপুরেও পিংলা বিডিও অফিসে দলের জেলা নেতাদের নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে গিয়েছিলেন ডিএসপি-র রাজ্য সম্পাদক প্রবোধবাবু। অভিযোগ, ‘‘পিংলার ২৭৯ টি বুথের মধ্যে পাঁচ-ছ’টি বুথে পোলিং এজেন্ট দেওয়া যায়নি। বামেদের হয়ে যাঁরাই পোলিং এজেন্ট হতে চেয়েছেন তাঁদের নানাভাবে হুমকি দিয়েছে তৃণমূল।

ডিএসপি-র জেলা সম্পাদক নারায়ণ মান্নার অভিযোগ, ভোটের আগের রাতে বাজপুর, গোপীনাথপুর, করকাই, আমোদচক, বুলাকিচক, দক্ষিণ মহল্লা এলাকায় তৃণমূল কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছে, ভোট দিতে গেলে দেখে নেবে। নারায়ণবাবু বলেন, ‘‘বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে। কিন্তু গ্রামের ভিতর তো টহল হয়নি। পুলিশের কাছে নালিশ জানিয়েও লাভ হয়নি।’’

তমলুক থেকে পিংলায় প্রার্থী হওয়া রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘প্রবোধবাবু ভদ্রলোক। কিন্তু তিনি যাদের ভরসায় এতদিন ছিলেন সেই সিপিএমের লোকেরা এ বার তাঁর পাশ থেকে সরে গিয়েছে। মানুষের সমর্থন না পেলে আমরা কী করব।’’ তাঁর দাবি সন্ত্রাসের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন