বন্দর শহরে বাজিমাত আটপৌ়রে তাপসীরই

আটপৌরে এই মহিলাকে ভ্যানে চেপে পুরসভায় যেতে দেখেছেন অনেকেই। একেবারেই সাদামাটা। কিন্তু তিনি যে এমন লড়াই করতে পারেন সেটা এ বার দেখল হলদিয়া।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০১:২৪
Share:

হলদিয়ায় প্রার্থীকে নিয়ে সিপিএমের জয়োল্লাস। — নিজস্ব চিত্র

আটপৌরে এই মহিলাকে ভ্যানে চেপে পুরসভায় যেতে দেখেছেন অনেকেই। একেবারেই সাদামাটা। কিন্তু তিনি যে এমন লড়াই করতে পারেন সেটা এ বার দেখল হলদিয়া।

Advertisement

একদিকে শুভেন্দু অধিকারীর স্নেহধন্য মধুরিমা মণ্ডলের মতো প্রতিপক্ষ অন্য দিকে হলদিয়ায় বামেদের হারানো জমি পুনরুদ্ধার। নাম ঘোষণার পর থেকেই দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এলাকা চষে বেরিয়েছিলেন তাপসী। হলদিয়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তিনি। আর তিনি যে কাজ করেছেন, তার উপহারস্বরূপ এই ওয়ার্ড তাকে ‘লিড’ দিয়েছে ১৫০০ ভোটের। আর লড়াই শেষে ২১ হাজার ভোটে বিজয়ী হলেন তিনি। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল তৃণমূলের গড়।

লড়াইটা সহজ ছিল না তাপসীর। লক্ষ্মণ শেঠের খাসতালুক এই হলদিয়ায় গত কয়েক বছরে বামেদের কোনও হদিসই ছিল না। ২০১২ সালে সিপিএমের দখলে থাকা হলদিয়ার পুরবোর্ড হাতছাড়া হয়। একাধিক বাম কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। এমনকি তমালিকা পণ্ডা শেঠও স্বামীর প্রতি সিপিএম অন্যায় হয়েছে বলে দল ছাড়েন। কিন্তু দল ছাড়েননি তাপসী। বিরোধী দলেত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। সেই প্রচারে আসা তাপসীর।

Advertisement

তারপর নিজের মতো করে একটু একটু করে এগিয়ে চলা। এর মধ্যেই হলদিয়া ছেড়েছে বন্দরের পণ্য সরবরাহকারী সংস্থা এবিজি। অভিযোগ উঠেছে শাসকদেলর বিরুদ্ধে। কারখানাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনেক। এর মাঝেই আবার নতুন দল গড়ে নিজের সংগঠন তৈরি করেছেন লক্ষ্মণ শেঠ।

আর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর নতুন করে লড়াই শুরু করেছেন তাপসী। প্রতিদ্বন্দ্বী মধুরিমা মণ্ডলের জন্য হলদিয়ায় প্রচারে এসেছেন তৃণমূলের বড় বড় নেতারা। খোদ শুভেন্দু অধিকারী বারবার প্রচারে এসেছেন মধুরিমার জন্য। লক্ষ্ণণ শেঠও ভারত নির্মাণ পার্টির প্রার্থী দাঁড় করিয়ে বেগ দিতে চেয়েছিলেন তাপসীকে। কিন্তু তিনি তো হারার মেয়ে নন। লড়াইটা করে গিয়েছেন চুপচাপ। প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে উন্নয়নের কথা শুনিয়েছেন। বলেন, ‘‘আমাদের দলে কেউ নেতা নয়। আমি শুধু সকলকে নিজের কথা বলেছি। এই শহরটা তো আমার। এলাকার সমস্যা গুলোই মেটাব, কথা দিয়েছি।’’

বৃহস্পতিবার জয়ের সার্টিফিকেট নিয়ে লাল আবির খেলেছেন তাপসী। বাড়ি ফিরেই পুকুরে স্নান সেরে নিয়েছেন। ভিড় সামলেছেন হাসি মুখে। বলেন, ‘‘আমার ওপর আস্থা রেখেছেন যাঁরা তাদের সবাইকেই ধন্যবাদ।’’ এতো মার্জিন হবে জানতেন? তাপসীর জবাব, ‘‘আশা করেছিলেম ১০–১২ হাজার ভোটে জিতব। কিন্তু হলদিয়ার মানুষ আমাকে উজাড় করে ভালোবাসা দিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞ।’’ সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘১৯৯৭ সালে প্রথম পুরসভায় দাঁড়িয়েছিলাম। পরপর চারবার জিতেছি। এবার বিধানসভায় জিতলাম। হলদিয়ার মানুষের কথা বলতে চাই বিধানসভায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement