বিধানসভা ভোটের আগে এ বার আর আর্থিক অনুদান পায়নি কোনও ক্লাব। বিগত দিনে পাওয়া ‘অনুদানের কৃতজ্ঞতা’ কি ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হবে?
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: ‘টাকা নিয়েছি, ভোটে খাটার দাসখত তো লিখে দিইনি’

চাবিকাঠি কি সত্যিই ধরে রাখা গিয়েছে? ক্লাবগুলিকে দেওয়া সরকারি খয়রাতির টাকা কি আদৌ ক্লাবের সদস্যদের তৃণমূল সরকারের পক্ষে ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে?

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

এলাকার আটটি ক্লাবের মাথা এক জনই! কোথাও তিনি সভাপতি, কোথাও সম্পাদক। দু’টি ক্লাব আবার এমন রয়েছে, যেখানে তিনিই সম্পাদক, তিনিই কোষাধ্যক্ষ। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এত ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত থাকার এই কৃতিত্ব নেই এলাকার বিধায়কেরও!

Advertisement

বিধাননগর রোড স্টেশন সংলগ্ন বাসন্তী কলোনি, গুরুদাস দত্ত গার্ডেন লেন, মুচিবাজার হয়ে ক্যানাল ইস্ট রোড পর্যন্ত উত্তর কলকাতার ওই এলাকায় ঘুরলেই শোনা যায়, ‘‘থানার বড়বাবুর চেয়েও ওই দাদার ক্লাবের এলাকা বড়!’’ তিনি নিজেই আবার বলেন, ‘‘সব ক্লাবকে আমিই যখন সরকারি খয়রাতির টাকা পাইয়ে দেব, তখন অন্য কারও হাতে চাবিকাঠি ছাড়ব কেন?’’

চাবিকাঠি কি সত্যিই ধরে রাখা গিয়েছে? ক্লাবগুলিকে দেওয়া সরকারি খয়রাতির টাকা কি আদৌ ক্লাবের সদস্যদের তৃণমূল সরকারের পক্ষে ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে? ভোটবঙ্গে এই মুহূর্তে এই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। কারণ, তৃণমূল সরকারের আমলে এই প্রথম কোনও ভোট হচ্ছে যেখানে ক্লাবগুলিকে আর নতুন করে খয়রাতির টাকা দেওয়া হয়নি। এই টাকা দেওয়া বন্ধের কারণ হিসেবে অনেকেই দায়ী করেন গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ‘খারাপ’ ফলাফলকে। বহু জায়গাতেই বিজেপি-র উত্থানের পরে তৃণমূলের অন্দরেই এক রকম প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল যে, তবে কি বহু ক্লাবের সদস্যই সরকারি খয়রাতি নিয়ে ভোট-বাক্সে অন্য ফুল ফোটাচ্ছেন?

Advertisement

টাকা পাওয়া বিভিন্ন ক্লাবকর্তাদের অনেকেরই অবশ্য বক্তব্য, ‘‘সরাসরি রাজনীতির নাম করে তো টাকা দেওয়া হয়নি! টাকা নিয়েছি, ভোটে খাটার দাসখত তো লিখে দিইনি!’’ উল্টোডাঙার ওই দাদার ক্লাবেরই এক সদস্য বললেন, ‘‘যিনি টাকা এনেছেন, তিনিই পকেটে ভরেছেন। ফলে ভোট কোথায় যাচ্ছে, সেই প্রশ্নেরও উত্তর তিনিই দেবেন। আমরা কখনওই টাকার হিসেব পাইনি।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওই দাদার মুখেও আর এত বছর পরে টাকা খাওয়ার স্বাদ আছে কি না, খোঁজ করা দরকার। ওই সরকারি টাকা তো কবেই শেষ!’’

২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই রাজ্যের ক্লাবগুলিকে ঢালাও অর্থসাহায্য দেওয়া শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সূত্রের দাবি, তৃণমূলের বিধায়ক ও কাউন্সিলরদের বাছাই করা সেই সব ক্লাবকে টাকা দিতেই ২০১৫ সাল পর্যন্ত সরকারের প্রায় ২২৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রথম দফার দু’লক্ষ এবং আরও তিন দফায় এক লক্ষ করে, মোট পাঁচ লক্ষ টাকা পেয়েছিল কলকাতা পুর এলাকার প্রায় ১০৫০টি ক্লাব। মুখ্যমন্ত্রী সেই সময়ে বলেছিলেন, ‘‘ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নতির জন্যই ক্লাবগুলোকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া, ক্লাবের ছেলেরাই আমাদের সংস্কৃতি ধরে রেখেছে।’’ ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত নথিভুক্ত থাকা ক্লাবগুলিকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় দফার এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হলেও ফল প্রকাশের পরে সে সব বন্ধ হয়ে যায়। স্রেফ বকেয়া থাকা কয়েকটি ক্ষেত্রে টাকা দেওয়া হয়েছে। এর পরেও অবশ্য টাকা ঘিরে নয়ছয়ের নানা অভিযোগ উঠেছে।
যাদবপুর শ্রীকলোনি এলাকার একটি ব্যাঙ্কের শাখায় গত লোকসভা ভোটের আগেই অভিযোগ জানিয়েছিলেন স্থানীয়েরা। তাঁদের দাবি, পাড়ার একটি বাড়ির ঠিকানাকে ক্লাব ধরে সরকারি টাকা জমা পড়ছে ব্যাঙ্কে। তা তুলে নিচ্ছেন স্থানীয় এক নেতা-দাদা। ব্যাঙ্কের একটি চিঠি ওই ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়ায় ব্যাপারটি তাঁরা জানতে পেরেছেন।
নেতাজিনগর এলাকার আর এক পাড়ায় আবার এক ব্যক্তি ছ’জনের ভুয়ো নাম লিখে ক্লাবের রেজিস্ট্রি করিয়ে টাকা হাতিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। যে জনপ্রতিনিধি টাকা পাইয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে টাকার ভাগ দেওয়ার চুক্তি ছিল অভিযুক্তের। অনেকের দাবি, এর জেরে যে টাকা দিচ্ছে, তার প্রতি আনুগত্য তো পাওয়া যায়ইনি, উল্টে ক্ষোভ জন্মেছে।

তা হলে কি এ ভাবে টাকা দেওয়ার পরিকল্পনাতেই ভুল ছিল? ক্লাবগুলিকে নিয়ে কাজ করে সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা পাওয়া মন্ত্রী তথা এ বারের ভোটপ্রার্থী অরূপ বিশ্বাসকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি। তৃণমূলের কেউই প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মধ্য কলকাতার টিকিট না পাওয়া এক প্রাক্তন বিধায়ক অবশ্য বললেন, ‘‘সাত বছর আগে কাউকে কাউকে টাকা দিয়েছিল। এখনও তার সুফল মিলবে! সুফলের সময় তো কবেই ফুরিয়ে গিয়েছে।’’

শ্যামপুকুর এলাকার একটি ক্লাবের এক সদস্যের আবার মন্তব্য, ‘‘ক্লাব কোনও রাজনৈতিক কার্যালয় নয়। টাকা দিলে আবারও নেব। কিন্তু ভোট কাকে দেব, সেটা একান্তই সকলের নিজস্ব ব্যাপার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন