WB Assemble Election 2021

Bengal polls: তৃণমূল ‘ললিপপ’ নেবেন না ভোটারদের সতর্ক করে বললেন মিঠুন

চমক দেওয়া সংলাপে বরাবরই মুন্সিয়ানা মিঠুনের। এর আগে বিজেপির মঞ্চে নিজেকে ‘জাত গোখরো’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন মিঠুন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২১ ০০:২৭
Share:

ডুয়ার্সের ধূপগুড়িতে ভোটের প্রচারে মিঠুন চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।

প্রতিশ্রুতির ‘ললিপপ’ দেখিয়ে ভোটারদের ভোলাচ্ছে তৃণমূল। এমন অভিমত সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া ‘বাংলার ছেলে’ মিঠুন চক্রবর্তীর। তাঁর মতে, বিজেপি কোনওরকম অতিরঞ্জনে বিশ্বাস করে না। যেটুকু পারবে সেটুকই বলবে। বুধবার বিজেপির হয়ে ভোটের প্রচার করতে ডুয়ার্সের ধূপগুড়িতে এসেছিলেন মিঠুন। সাত বছর আগেও এসেছিলেন। তবে তৃণমূলের হয়ে লোকসভা ভোটের প্রচারে। বিজেপির মঞ্চ থেকে বুধবার ‘বাংলার ছেলে’ জানালেন, ২রা মে-র পর আবারও আসবেন যদি মানুষ সেখানকার বিজেপি প্রার্থীকে জয়ী করেন।

Advertisement

বুধবার কার্যত প্রচার মঞ্চ থেকে তৃণমূলের বিদায় ঘণ্টার ঘোষণা করেন মিঠুন। বলেন, যেভাবে আজ থেকে ১০ বছর আগে একটা ৩৪ বছরের সরকার আপনারা ফেলেছেন, এই সরকারের পতনেরও আর কুড়ি পঁচিশ দিনের অপেক্ষা। তৃণমূলকে কটাক্ষ করে মিঠুন বলেন, ‘ভোটের আগে মানুষকে ললিপপ দেখাবেন না’।

চমক দেওয়া সংলাপে বরাবরই মুন্সিয়ানা মিঠুনের। এর আগে বিজেপির মঞ্চে নিজেকে ‘জাত গোখরো’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন মিঠুন। মন্তব্য করেছিলেন ‘এক ছোবলেই ছবি’। কারা সেই ছোবল খাবে, কেই বা ছবি হবে তা মুখে না বললেও অনেকেই বুঝেছিলেন আদতে শাসক দলই লক্ষ্য মিঠুনের। ডুয়ার্সেও তাঁর জনসভায় তৃণমূলের ভোটের প্রতিশ্রুতিকে ভোটারদের মন ভোলানোর ‘ললিপপ’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Advertisement

বাংলার জন্য তাঁর কাজ করার ইচ্ছের কথা আগেও বলেছেন মিঠুন। বুধবারও বললেন, ‘‘বাংলার সবকিছুতে বাংলার মানুষের অধিকার রয়েছে। যদি কেউ তাদের অধিকার ছিনিয়ে নেয় আমার মত কিছু মানুষ তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। আমার নিজের কিছু চাইনা। বাংলার মানুষ খুব কষ্টে আছে। আমি তাদের জন্য কিছু করতে চাই। আর আমরা যেটা করতে পারবো সেটাই বলবো।’’

বুধবার মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক তথা দ্বিতীয় বারের বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গার সমর্থনে গয়েরকাটা শ্মশানের মাঠে জনসভা করেন মিঠুন। সেখানেই অভিনেতা বলেন, ‘‘আমি মনোজকে বলেছি মিথ্যে কথা বলে ভোট চাইবে না, তুমি ১০ কিমি রাস্তা করতে পারলে সেটাই মানুষকে বলবে, ভোটের সময় এসে ললিপপ দেবে না।’’ এরপরই পরোক্ষে তৃণমূলকে কটাক্ষ করে ভোটারদের প্রশ্ন করেন মিঠুন, ‘‘ভোটের সময় ললিপপ দেখতে পাচ্ছেন তো? ৬ কোটি লোককে রেশন দেবে বলছে, ৬ কোটি লোক কি আছে? ৬ কোটি লোককে রেশন দিতে গেলে তো আগে ৬ কোটি লোক চাই!’’

ডুয়ার্সের চা বাগান অধ্যুষিত এলাকায় এদিন ভোটের প্রচার করেন মিঠুন। পরে মেঘলা আকাশ থাকায় নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পরে হেলিকপ্টারে গয়েরকাটা শ্মশান মাঠে নামেন তিনি। মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘‘ওই ললিপপ খাবেন না। আমরা ক্ষমতায় এলে সমস্ত জেলার হাসপাতালে সমস্ত জেনারেল বেড শীততাপ নিয়ন্ত্রিত করে দেব, গরীব বোনটাও ঠান্ডা বেডে থাকবে, সরকারি বাসে চাপলে সমস্ত মহিলাদের বাসের ভাড়া ফ্রি, সমস্ত শিশু থেকে কলেজে যাওয়া পর্যন্ত সবার পড়াশুনা ফ্রি।’’ এমনকি চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি। বলেন, ‘‘সমস্ত চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ছিল ২০২ টাকা সেটা সরকারে এলেই ৩৫০ টাকা হবে। যা নিয়ে আপনারা আন্দোলন করছেন সেটা বন্ধ হয়ে যাবে, কথা দিলাম আবার আসবো মনোজকে জেতান।’’

বিজেপির হয়ে আরও প্রতিশ্রুতি দেন মিঠুন। বলেন, ‘‘আয়ুস্মাণ ভারত যেটা এখানে আনতে দেয়নি সেটা আমরা চালু করব। ৫ লক্ষ টাকার বিমা। এই বার পরিবর্তন হবে। বিজেপি সরকার এলে কোনও সন্ত্রাস হবেনা, নিরাপত্তার দায়িত্বে আমরাই থাকবো, আমরা এলে বিদ্যুতের দামও কমে যাবে।’’

দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী নিশীথ প্রামানিক এবং সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে দিনহাটা এসেছিলেন মিঠুন। বুধবার তিনি দিনহাটার সাহেবগঞ্জ এর খারুভাজ এলাকায় একটি জনসভা করেন। দুপুরে হেলিকপ্টারে করে খারুভাজ এলাকায় পৌঁছান। সেখান থেকে যান তুফানগঞ্জ এর বিজেপি প্রার্থী মালতি রাভা রায় এবং নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মিহির গোস্বামী কে নিয়ে একটি রোড শো করেন মিঠুন। তবে প্রচারে দলীয় কর্মী সমর্থকরা সিনেমার সংলাপ শুনতে চাইলেও নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী তিনি মিঠুন সেই অনুরোধ রাখেননি। বদলে হাতের ঈশারায় ছোবলের ভঙ্গি করে দেখান তিনি।

বুধবার মিঠুনের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রার্থী মনোজ টিগ্গা সহ মাদারিহাট ব্লক ও জেলাস্তরের নেতারা। দিনহাটার জনসভায় মিঠুন চক্রবর্তীর হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন যুব তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক অজয় রায় সহ বেশকিছু তৃণমূল নেতা। তাদের হাতে বিজেপির দলীয় পতাকা তুলে দেন মিঠুন চক্রবর্তী। এ বিষয়ে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক রাহুল রায় বলেন, ‘‘দল বিরোধী কাজ করার জন্য অজয় রায় কে বেশ কিছুদিন আগেই শোকজ করা হয়েছে, তাই তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করলেন। তাই তাতে দলের কিছু আসে যায় না। মিঠুন বাবু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, বিজেপির নেতারা মিঠুন বাবুকে সেই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেটা কোনদিনও সত্যি হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন