Syndicate

Bengal Polls: ভোটের বাজারে প্রকাশ্যে নেই, তবে আলোচনার টেবিলে সিন্ডিকেট

দৃশ্যত অদৃশ্য তাঁরা। কেউ বলছেন আগের সেই তেজই নেই। কেউ আবার বলছেন চুপচাপ সব দেখছেন ওঁরা। দলগুলির তালিকা তৈরি হলেই ধাপে ধাপে ওঁরা নেমে পড়বেন। এমন ছবিই ধরা পড়েছে রাজারহাট-নিউ টাউনের সিন্ডিকেট পাড়ায়।

Advertisement

কাজল গুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২১ ০৬:০১
Share:

প্রতীকী ছবি। —ফাইল চিত্র

ঘুমিয়ে আছে পাড়া।

Advertisement

শুধু শোনা যায় ‘ভোটের কড়া নাড়া’।

কড়া নাড়লেও দরজা খুলছে না।

Advertisement

দৃশ্যত অদৃশ্য তাঁরা। কেউ বলছেন আগের সেই তেজই নেই। কেউ আবার বলছেন চুপচাপ সব দেখছেন ওঁরা। দলগুলির তালিকা তৈরি হলেই ধাপে ধাপে ওঁরা নেমে পড়বেন। এমন ছবিই ধরা পড়েছে রাজারহাট-নিউ টাউনের সিন্ডিকেট পাড়ায়।

আপাতত তৃণমূল এবং বাম প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়েছে ওই বিধানসভায়। তৃণমূলের প্রার্থী তাপস চট্টোপাধ্যায়। বাম প্রার্থী প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের পুত্র সপ্তর্ষি দেব।

এই অবস্থায় রাজারহাট-নিউ টাউন বিধানসভায় ভোট এলেও বিভিন্ন এলাকার সিন্ডিকেট অফিসগুলির বাইরে আর আগের মতো ভিড় নেই। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সিন্ডিকেট-চাঁইদেরও। এক সময়ে এলাকায় সিন্ডিকেটের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে যাঁরা খুল্লমখুল্লা রাস্তায় নামতেন, এ বার ভোটের আগে তাঁদের অনেকের ফোনেও সাড়া মিলছে না। তাঁদের দাবি, সিন্ডিকেট এখন নেই বললেই চলে।

তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রশাসন সক্রিয়। কারবার বন্ধ হওয়ার মুখে। আগে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহের ক্ষেত্রে তাঁরা অগ্রাধিকার পেতেন। এখন সেই ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ায় কারবার প্রায় বন্ধ। এখন কাজ মিললেও সময়ে পাওনা মেটার নিশ্চয়তা নেই।

এ সব নিয়ে সিন্ডিকেট পাড়াও যেন দ্বিধা বিভক্ত। কেউ মনে করেন, প্রশাসনের সক্রিয়তা বাড়ায় ভাল হয়েছে। কারও মতে তাঁদের না খাইয়ে মারার উপায় করা হয়েছে। ফলে ভোটে তার প্রভাব পড়বেই।

এক সময়ে সিন্ডিকেট পাড়ার অন্যতম চাঁই বলে পরিচিত ছিলেন ভজাই সর্দার। তাঁর ছেলে প্রসেনজিৎ সর্দার, বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্তের তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে পরেই। প্রসেনজিৎও বিজেপিতে যোগ দেন। সিন্ডিকেট ব্যবসার কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন, ‘‘অবস্থা ভাল নয়। কাজ প্রায় নেই।’’

সিন্ডিকেটের প্রসঙ্গ উঠলেই যে সব চাঁইয়ের কথা ওঠে, তাঁদের অনেককেই আগের মতো সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে না বলেই স্থানীয় সূত্রের খবর। তবে তাঁদের মধ্যে এক জন তৃণমূল নেতা টুটুন গাজি জানান, কো-অপারেটিভ তুলে দিয়ে সিন্ডিকেট চালু হয়েছিল। কিন্তু শৃঙ্খলা ছিল না। জুলুমবাজি, জবরদস্তির ঘটনা ঘটায় সরকার রাশ টানতে বাধ্য হয়। তাতে অনেকেই সমর্থন করেছেন। কিন্তু কিছু অংশ করেনি।

রাজনৈতিক দলগুলির অধিকাংশের দাবি, সিন্ডিকেটের উপরে ভোটের ফলাফল নির্ভর করে না। তবে সিন্ডিকেটের প্রসঙ্গ এড়িয়েও যেতে পারছেন না তাঁরা।

তৃণমূল কর্মীদের দাবি, বাম আমলে এই ব্যবস্থার শুরু। মাঝে সিন্ডিকেটের নামে জবরদস্তি, জুলুমবাজির ঘটনা ঘটায় রাজ্য সরকার কড়া অবস্থান নেয়। রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূল নেতা প্রবীর কর বলেন, ‘‘কেউ নিয়ম মেনে ব্যবসা করতেই পারেন। কিন্তু দলের নাম ভাঙিয়ে সিন্ডিকেটের নামে জুলুমবাজি, জবরদস্তি বরদাস্ত করা হবে না।’’

যদিও বামেদের পাল্টা দাবি, জমিহারা মানুষদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যেই শুরু হয়েছিল কো-অপারেটিভ ব্যবস্থা। তাতে সব দলের লোকজনই সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের আমলে কোঅপারেটিভ তুলে দিয়ে জন্ম হয় সিন্ডিকেটের। জোর করে বাদ দেওয়া হয় বাম সমর্থকদের। রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবসায় জড়িতদের ব্যবহার করা হয়। যদিও বামেদের বিরুদ্ধেও পাল্টা একই অভিযোগ তৃণমূলের।

সিন্ডিকেটের কথা বললেই সবার আগে নাম আসে এই বিধানসভার দু’দুবারের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের। যিনি সিন্ডিকেটের সমর্থনে প্রকাশ্যে সরব হয়েছিলেন। তিনি এক সময়ে বলেছিলেন, সিন্ডিকেটে হাত দিলে সরকার পড়ে যাবে। তাই নিয়ে উত্তাল হয়েছিল বঙ্গ রাজনীতি। বর্তমানে তিনি বিজেপিতে।

বিজেপির শীর্ষ থেকে রাজ্য নেতৃত্ব সিন্ডিকেটের নামে জুলুমবাজি, তোলাবাজির বিরুদ্ধে সরব।

সব্যসাচী দত্ত অবশ্য নিজের অবস্থানে অনড়। তার দাবি, জমিহারাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বাম আমল থেকে শুরু হয়েছিল ওই ব্যবস্থা। কিন্তু গত দশ বছরে তৃণমূল সরকার তাঁদের জমির কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিতে পারেননি। যুব সমাজকে নির্দিষ্ট দিশা দেখাতে পারেনি বলেই তাঁরা ভুল পথে পরিচালিত হয়েছেন।

তাঁর দাবি, আইন মেনে ব্যবসা করলে আপত্তির কিছু নেই। সে কথা তিনি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন। কেউ আইন মেনে ব্যবসা করলে বিজেপি তার বিরুদ্ধে নয়, কিন্তু সিন্ডিকেটের নামে তোলাবাজি, জুলুমবাজি কখনওই বরদাস্ত করবে না। বিগত দিনে বাম আমলে শুরু হয়েছিল। আগ্রাসন দেখা গিয়েছিল তৃণমূল আমলে।

প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পরে রাজনৈতিক তরজা এখন তুঙ্গে। তৃণমূল প্রার্থী তাপস চট্টোপাধ্যায়ের নামের সঙ্গেও সিন্ডিকেটের নাম জড়িয়েছিল। অভিযোগ খারিজ করে তাপসবাবু জানান, কোনও দিনই সিন্ডিকেটের সঙ্গে তাঁর যোগ ছিল না, আগামীতেও থাকবে না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, সিন্ডিকেটের উপরে ভোটের ফলাফল নির্ভর করবে না।

বাম প্রার্থী সপ্তর্ষি দেব বলেন, ‘‘সংযুক্ত মোর্চার প্রধান দাবি, কর্মসংস্থান। এমন কিছু করা হবে না, যাতে কর্মসংস্থানে ব্যাঘাত ঘটে। তা বলে সেই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র রাজনৈতিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে না, বরং গণতান্ত্রিক ভাবেই সকলের সুযোগের ব্যবস্থা করা আমাদের লক্ষ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন