Shantiniketan

Bengal Polls: ট্রেন থেকে কেন উধাও রবি-ছবি, বিতর্ক সপ্তমে

প্রশ্ন উঠছে, স্টেশনের নাম বদলের আবহে তবে কি এ বার ট্রেনের নামও বদলে ফেলা হল? তা-ও আবার কবিগুরুর শান্তিনিকেতনের নামবাহী গুরুত্বপূর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের?

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম 

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২১ ০৭:০৫
Share:

ছবি সংগৃহীত।

ট্রেনের নাম তো বদলানো হয়েছেই। সেই সঙ্গে কামরার ভিতর থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি, তাঁর আঁকা ছবির প্রতিলিপি এবং শান্তিনিকেতনের ছবি। এই নিয়ে সরগরম সামাজিক মাধ্যম।

Advertisement

প্রশ্ন উঠছে, স্টেশনের নাম বদলের আবহে তবে কি এ বার ট্রেনের নামও বদলে ফেলা হল? তা-ও আবার কবিগুরুর শান্তিনিকেতনের নামবাহী গুরুত্বপূর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের? রাজ্যে বিধানসভা ভোটের লড়াইয়ে নেমে বঙ্গ সংস্কৃতির সঙ্গে নৈকট্য তুলে ধরার মরিয়া চেষ্টায় মজে থাকা কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে নাম বদলের এমনই অভিযোগ এনেছেন সৈয়দ হাসমত জালাল। বহু বছর ধরে শান্তিনিকেতনে যাতায়াত করছেন তিনি। নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, লকডাউনের পর থেকে ‘শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস’ চলছে ‘হাওড়া-বোলপুর স্পেশাল’ নামে।

ওই ট্রেনের বাতানুকূল কামরায় ভিতরের দরজার দু’পাশে এবং চার দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবির প্রতিলিপি ও শান্তিনিকেতন আশ্রমের ছবি লাগানো থাকত। সেই সব ছবি আর চোখে পড়ছে না। এমনকি রেলের কোচের গায়ে ট্রেনের নামের জায়গায় লেখা ‘দীনদয়ালু কোচ’। প্রায় সাড়ে তিন দশকের পুরনো শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস থেকে এ ভাবে কবিগুরুর স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা নিয়েই প্রতিবাদে সরব অনেকে।

Advertisement

দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে ওই পোস্ট। বক্তব্য সমর্থন করছেন অনেকেই। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সঙ্গে উঠে আসছে বহুত্ববাদী সংস্কৃতির চর্চার প্রসঙ্গও। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি রেলের এমন পদক্ষেপের মূলে আছে আসলে সংস্কৃতির একমাত্রিকতা তুলে ধরার প্রয়াস? এক দিকে ভোট পাওয়ার তাগিদে বাংলা, বাঙালি ও বাঙালির সংস্কৃতির প্রতি নিজেদের ভালবাসার প্রমাণ দিতে কেন্দ্রের শাসক দল উঠেপড়ে লেগেছে, অন্য দিকে নীরবে চলছে বঙ্গসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর সৃষ্টির স্পর্শ মুছে ফেলার অপচেষ্টা? অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। শান্তিনিকেতনের সনাতন ভাবধারা থেকে বিশ্বভারতীকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টার কথাও পোস্টে জানিয়েছেন হাসমত জালাল।

পোস্টটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পরেই রেল সূত্রে জানানো হয়, খতিয়ে দেখে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নতুন ট্রেনে পুরনো ছবি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবে তারা। প্রাথমিক ভাবে রেলের দাবি, ট্রেনের নাম বদলের অভিযোগ ঠিক নয়। করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশে মেল ও এক্সপ্রেস শ্রেণির সব ট্রেনকেই বিশেষ ট্রেন হিসেবে চালানো হচ্ছে। ওই সব ট্রেনের ভাড়া পুরনো ট্রেনের চেয়ে বেশি। পুরনো ট্রেনের নম্বরের আগে শূন্য বসিয়ে ওই সব ট্রেনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজধানী, শতাব্দী বা দুরন্ত এক্লপ্রেসের মতো ট্রেনও এখন চলছে বিশেষ ট্রেন হিসেবেই। ফলে পুরনো নামে সেই অর্থে কোনও ট্রেনই চলছে না দাবি রেলকর্তাদের। শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসের নাম বদলকে সেই অর্থে ‘তাৎক্ষণিক’ বলছেন তাঁরা। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে যখন দেশের সব ট্রেন আগের অবস্থায় ফিরবে, তখন ফিরে আসবে তাদের পুরনো নামও।

বছর তিনেক ধরে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসে আধুনিক এলএইচবি (লিঙ্কে হফম্যান বুশে) কোচ ব্যবহার করা হচ্ছে। রেলের বক্তব্য, পুরনো রেকের তুলনায় নতুন রেক অনেক কম দুর্ঘটনাপ্রবণ। এখন দু’টি নতুন কোচ ব্যবহার করে পর্যায়ক্রমে একই দিনে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস এবং কোলফিল্ড এক্সপ্রেস চালানো হচ্ছে। কিন্তু ওই কোচ ব্যবহার শুরু হওয়ার পরে, ট্রেনের কামরা-পিছু ছ’টির বদলে চারটি দরজা থাকায় যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার পরেই এলএইচবি শ্রেণির অন্য কোচ ব্যবহার শুরু হয় ওই ট্রেনে। রেলের দাবি, তখন থেকেই দূরপাল্লার অসংরক্ষিত এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য নির্মিত দীনদয়ালু শ্রেণির এলএইচবি কোচ ব্যবহার শুরু হয়। তার ভিতরে কবিগুরুর ছবি নেই, নেই তাঁর আঁকা বা শান্তিনিকেতনের ছবিও। এই ঘটনা তাই নিতান্তই পরিস্থিতির কারণে। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।

‘রেল প্রেমিক সংগঠন’-এর বিভিন্ন সদস্যের মতে, স্থানীয় বৈশিষ্ট্য, সংস্কৃতি তুলে ধরাই রেলের নীতি। তাই শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা বা কোল্ডফিল্ড এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনে সেই বৈশিষ্ট্যের স্থান পাওয়া উচিত। ‘‘যে-ট্রেনের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের নাম জড়িয়ে আছে, তার বৈশিষ্ট্য রক্ষায় রেলের সতর্ক হওয়া উচিত,’’ বলেন ওই সংগঠনের কৌস্তুভ চৌধুরী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন