West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: অনুপস্থিত কাণ্ডারী, দিনভর দৌড় ‘ভাইস ক্যাপ্টেনের’

বুথ দখল, ছাপ্পা, ভোট পড়ে যাওয়া, কর্মীদের উপরে হামলার মতো অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের আবহেই এ দিন ভোট-যুদ্ধ চলেছে খড়দহে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৩৭
Share:

নিরাপত্তা: কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে চলছে ভোট। খড়দহের একটি বুথে। তবে লাইনে নেই পারস্পরিক দূরত্ব। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

‘রান তুলতেই হবে’!

Advertisement

বলছিলেন, মাঠের চার দিকে ছড়িয়ে থাকা খেলোয়াড়েরা। কারণ একটাই। বৃহস্পতিবার খড়দহের ফাইনাল ম্যাচে মাঠ পুরো তৈরি থাকলেও পিচে অনুপস্থিত জোড়া ফুলের ‘ক্যাপ্টেন’। বদলে তাঁর হয়ে সকাল থেকে মাঠের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে চষলেন ‘ভাইস ক্যাপ্টেন’। বললেন, ‘‘উনি নিজে নেই। তাই রান তো আমাদেরই তুলতে হবে।’’

করোনায় আক্রান্ত হয়ে বুধবার রাতে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খড়দহের তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিংহ। এ দিন সকালেও ভোট শুরু হওয়ার পরে হাসপাতালের চার নম্বর কেবিনে শুয়েই এলাকার খোঁজ নিয়েছেন তিনি। কিন্তু বেলা বাড়তেই অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে আইসিইউয়ে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পুরোপুরি অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছেন কাজল। আর তাই সকাল থেকে তাঁর বিকল্প হিসেবে ‘মাঠ’ আগলাতে নেমেছিলেন বিশ্বস্ত সহচরেরা। যেমন, ‘ক্যাপ্টেন’ কাজল অনুপস্থিত থাকলেও মাঠে যাতে ব্যাটে-বলে এক হয়ে ছক্কা হাঁকানোর হার ঠিক থাকে, তা দেখতে ঘুরছিলেন ১৫ বছর ধরে খড়দহ পুরসভার কাউন্সিলর তথা মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট নীলু সরকার। আবার ওয়ার রুমে ছিলেন কাজলের ভাইপো।

Advertisement

সারা দিন চরকি পাক দিয়ে বিকেলে নীলুদেবী এলেন বন্দিপুর এলাকায়। বুথে ঢুকে খোঁজ নিলেন, কত শতাংশ ভোট পড়েছে। তার পরেই বাইরে এসে বললেন, ‘‘উনি (কাজল) নিজে না থাকায় একটু সমস্যা তো হচ্ছেই। আসলে বিধানসভা, পুরসভা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত— সব ভোটে তো উনিই আসল কাণ্ডারী। আজ তিনি নিজে হাসপাতালে।’’ একদা জোড়া ফুলের বিধায়ক, অধুনা দল বদলে পদ্ম শিবিরের খড়দহের প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত বলছেন, ‘‘রাজনীতির বাইরে, ব্যক্তিগত জীবনে কাজল আমার বড় বন্ধু। আজ ওঁর না থাকাটা আমাকে দুঃখ দিচ্ছে।’’ তবে ভোটের লড়াইয়ে প্রার্থীর থেকে দল বড় বলেই মত শীলভদ্রের।

একদা সতীর্থের টিম মেম্বারদের মতো এ দিন সকাল থেকে খড়দহের রহড়া, বন্দিপুর দোপেড়িয়া, কল্যাণনগর, ঈশ্বরীপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় ছুটে বেড়ালেন শীলভদ্রও। তবে তিনি স্থানীয় দুষ্কৃতীদের নিয়ে ঘুরছেন বলে দুপুরে অভিযোগ করেন স্থানীয় সাংসদ সৌগত রায়। বলেন, ‘‘গাড়ির নম্বর দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছি।’’ এ দিন শাসক দলের তরফে অভিযোগ করা হয়, সাত নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণনগরে বিজেপি প্রার্থী দুষ্কৃতীদের নিয়ে গিয়ে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুর করেছেন। পাল্টা হিসেবে শীলভদ্র বলেন, ‘‘আমি তো একটা গাড়ি নিয়েই ঘুরছি। পিছনে যদি সংবাদমাধ্যমের গাড়ি থাকে, তা হলে আমি কী করতে পারি? সকলে দেখেছেন, আমি কোথাও মারামারি করেছি কি না।’’

বড় কোনও অশান্তি ছাড়া বুথ দখল, ছাপ্পা, ভোট পড়ে যাওয়া, কর্মীদের উপরে হামলার মতো অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের আবহেই এ দিন ভোট-যুদ্ধ চলেছে খড়দহে। এজেন্টদের উপরে হামলা কিংবা কেন্দ্রীয় বাহিনীর অতি সক্রিয়তার অভিযোগ পেয়ে যেমন নীলুদেবী ছুটেছেন, তেমনই ছুটে বেড়িয়েছেন শীলভদ্রও। তাঁদের দু’জনের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন খড়দহের সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম প্রার্থী দেবজ্যোতি দাসও। বললেন, ‘‘শাসক দলের রোল মডেলরা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন, আর আমাদের কর্মীরা মরিয়া হয়ে প্রতিরোধ করছেন। খড়দহের মানুষ ২০১১-তে শেষ শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিয়েছিলেন।’’ বুধবার শীলভদ্রর গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ার অভিযোগে এ দিন এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। অন্য দিকে, শেষ বিকেলে পানশিলা এলাকায় পদ্ম শিবিরের প্রার্থীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়েরা।

বাম-তৃণমূল দুই জমানাতেই খড়দহ হল রাজ্যের নায়েবের কেন্দ্র। যদিও দুই অর্থমন্ত্রীর কেউই এখানকার বাসিন্দা ছিলেন না। তাই বাসিন্দাদের দাবি মেনে ভূমিপুত্র কাজলকে প্রার্থী করেছে দল। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচের দিন ‘বন্ধু’ মাঠে না থাকায় কি তা হলে সুবিধাই হল? ‘‘উনি না থাকলেও, দলের নেতারা তো রয়েছেন’’— বলছেন শীলভদ্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement