Mamata Banerjee

Bengal Polls: রণং দেহি! পরস্পরকে তাক করেই নন্দীগ্রামে দিনভর চক্কর মমতা-শুভেন্দুর

মমতা নাম না করে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ‘বিভাজনের রাজনীতি’ করার অভিযোগ তোলেন। শুভেন্দু তখন বলছেন ‘মেরুকরণের রাজনীতি মুখ্যমন্ত্রীই শুরু করেছেন’।

Advertisement

উজ্জ্বল চক্রবর্তী

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২১ ২০:৫২
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী।

যুযুধান দুই প্রার্থীর দ্বৈরথেই দিন কাটল নন্দীগ্রামের। সোমবার কাছাকাছি সময়ে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে একের পর এক সভা করলেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। বয়াল হোক বা ঠাকুরচক অথবা ভেটুরিয়া— সকাল থেকেই মমতা এবং শুভেন্দু একের পর এক জায়গায় সভা করলেন। তার মধ্যে মমতা আবার একটি রোড শো-ও করেন। প্রত্যেক জায়গাতেই একে অপরের বিপক্ষে বাছা বাছা শব্দে আক্রমণ শানিয়েছেন। কখনও মমতা বলছেন, ‘‘আমাকে এত দিন ঢুকতেই দেয়নি নন্দীগ্রামে।’’ তো শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘মাননীয়া তো নন্দীগ্রামকে ঘেন্না করেন।’’ কখনও শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘উনি তো ফেরেব্বাজ মুখ্যমন্ত্রী।’’ তো মমতা বলেছেন, ‘‘ভোটের সময় তুই আমার পা জখম করিয়েছিস।’’ দু’জনের ভাষণেই সোমবার সারা দিন ধরে নন্দীগ্রাম টের পেল আগামী পয়লা এপ্রিলের মহারণের আঁচ।

Advertisement

সোমবার মমতা এবং শুভেন্দু দু’জনেই নিজেদের সভার জন্য বেশির ভাগ জায়গাই বেছে নিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের ১ এবং ২ নম্বর ব্লকের সীমানাবর্তী এলাকা। শুভেন্দু সকালে পথসভা করেন বয়াল ১ নম্বর পঞ্চায়েত এলাকায়। তার পর বয়াল ২ নম্বর। সেখানে তিনি যখন পথসভা করছেন, মমতা তখন রেয়াপাড়ার অস্থায়ী আস্তানা থেকে বেরিয়ে ক্ষুদিরাম মোড় পৌঁছেছেন। সেখান থেকে হুইল চেয়ারে চেপে রোড শো। নির্ধারিত পথে না গিয়ে মমতা ঢুকে পড়েন গ্রামের রাস্তায়। আবার খোদামবাড়ি এলাকায় গিয়ে চণ্ডীপুর-নন্দীগ্রাম রোডে ওঠেন তিনি। রোড শো ভেটুরিয়া বাজার ঠাকুরচকে শেষ হওয়ার পর মমতা সেখানে একটি জনসভা করেন। পরে সেখান থেকে তিনি যান বয়ালে। তার পর আমদাবাদ। শুভেন্দু তখন আবার ঠাকুরচকের মমতার সভামঞ্চ থেকে ২ কিলোমিটার দূরের ভাটুরিয়ায়। সেখান থেকে তিনি বিরুলিয়া গিয়ে আরও দুটো পথসভা করেন। আর প্রত্যেক জায়গাতেই একে অপরের বিরুদ্ধে ‘চোখা চোখা’ শব্দ প্রয়োগ করেছেন মমতা-শুভেন্দু।

মমতা যখন শুভেন্দুর নাম না করে তাঁর বিরুদ্ধে ‘বিভাজনের রাজনীতি’ করার অভিযোগ তুলছেন, শুভেন্দু তখন মমতাকেই পাল্টা দোষারোপ করেছেন ‘মেরুকরণের রাজনীতি মুখ্যমন্ত্রীই শুরু করেছেন’ বলে। মমতার বিরুদ্ধে কলকাতার রেড রোডে ইদের দিন মুসলমানদের নমাজে ঢুকে পড়ার অভিযোগ তোলেন শুভেন্দু। ভেটুরিয়ার সভায় তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি না মুসলমানরা চাইতেন কি না। উনি তো রেড রোডের নমাজে ঢুকে পরতেন হিজাব পরে। ইমাম ভাতা দিয়ে উনিই তো মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করেছেন। ইমামরা তো তাঁর কাছে ভাতা চায়নি।’’

Advertisement

অন্য দিকে, মমতাও আক্রমণাত্মক। শুভেন্দুর নাম না করে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমি বাইরের মেয়ে? তুই ব্যাটা কোনও হরিদাস কাঁথির ছেলে, কী করে বেড়াস? তুই কবে নন্দীগ্রামের ছেলে হলি? তুই কী করে ভূমিপুত্র হলি? তোর তো এখানে ভূমিও নেই, জমিও নেই। তুই তো দালালি করে গেছিস। আগে সিপিএমের দালালি করেছিস, এখন বিজেপি-র দালালি করছিস। কী দিইনি তোকে?’’ সোমবারও তিনি বিধায়ক-মন্ত্রী হিসাবে গত পাঁচ বছরে শুভেন্দু যে কোনও কাজ করেননি নন্দীগ্রামে সে অভিযোগও তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও কাজ করেনি। মন্ত্রী ছিল। কী কাজ করেছে! আমাকে ঢুকতে দিত না নন্দীগ্রামে। এ বার থেকে আমিই সবটা করব। চিন্তা করবেন না। ভরসা রাখবেন।’’

দু’জন সোমবার হুমকির পাঠও দিয়েছেন নিজেদের মতো করে। মমতা যেমন বলেছেন, ‘‘আমরা খেলা খেলি ভদ্র ভাবে। কিন্তু আমার সঙ্গে কেউ লাগতে এসো না। আমাকে আঘাত করলে আমি আগুনের মতো ঝরে পড়ি, সিংহের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ি।’’ শুভেন্দু তখন হুমকি দিয়েছেন অন্য ভাবে। যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে ‘লম্ফঝম্ফ’ করছেন, তাঁদের তিনি ভোট মিটে গেলে ‘মিষ্টি’ খাওয়াবেন বলে মন্তব্য করেন শুভেন্দু। ভেটুরিয়ার সভা থেকে তিনি জানান, কিছু দিন আগে এখানে এক কর্মীর বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তাঁর কথায়, ‘‘সে দিন আমি এক ভাইয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেছিলাম এই ভেটুরিয়ায়। যারা পাকিস্তান খেলায় জিতলে বাজি ফাটায়, তারা খুব সে দিন লম্ফঝম্প করেছিল। আমি ছবি তুলে রেখেছি। ১ তারিখ ভোট মিটে গেলে আমি ২ তারিখেই আসব। এসে মিষ্টি খাইয়ে যাব ওদের।’’ তার পর একটা বাঁকা হাসি।

এ ভাবেই সোমবার নন্দীগ্রামে পরস্পরকে তাক করেই দিনভর চক্কর কাটলেন মমতা-শুভেন্দু। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নন্দীগ্রামে ভোটপ্রচার শেষ হবে। তার আগের দিন নীলবাড়ির লড়াইয়ের দুই অন্যতম প্রার্থীর উত্তপ্ত ভাষণ বুঝিয়ে দিল নন্দীগ্রামে এ বার আসলে ‘মহারণ’। রাজায়-রাজায় তারই প্রস্তুতি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন