TMC

Bengal Polls: ‘দ্বন্দ্ব’ কাঁটা দলে, চর্চায় সংগঠনও

আসানসোল পুরসভার ২৮টি ওয়ার্ড নিয়ে এই কেন্দ্রে। লোকসভা ভোটে ২০১৪-য় ৪০ হাজারে, ২০১৯-এ প্রায় ৫০ হাজারে বিজেপির থেকে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

কুলটি শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ০৭:৪৮
Share:

উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, অজয় পোদ্দার, চণ্ডী চট্টোপাধ্যায়

‘কোন্দল-কাঁটা’য় বিদ্ধ হতে পারে তৃণমূল ও বিজেপি। উল্টো দিকে, কংগ্রেসের বড় সমস্যা, তুলনায় ‘দুর্বল’ হয়ে পড়া সংগঠন।— চুম্বকে কুলটি কেন্দ্রে তিন প্রধান রাজনৈতিক শক্তির এই তিন প্রধান ‘সমস্যা’, মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। তবে তিন দলই এ সব ‘তত্ত্বে’ আমল দিতে চায়নি।

Advertisement

আসানসোল পুরসভার ২৮টি ওয়ার্ড নিয়ে এই কেন্দ্রে। লোকসভা ভোটে ২০১৪-য় ৪০ হাজারে, ২০১৯-এ প্রায় ৫০ হাজারে বিজেপির থেকে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। কিন্তু বিধানসভা ভোট হলেই ফলটা হয় ‘অন্য রকম’, দাবি তৃণমূলের। ২০০৬-এর ভোটে গোটা রাজ্যে তৃণমূলের ২৯টি আসন। তার মধ্যেও এক জন ‘তিনি’। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটেও প্রায় ২০ হাজারে ‘তিনি’ই জেতেন। ‘তিনি’ এ বারেও তৃণমূলের প্রার্থী উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। বিজেপি ও কংগ্রেসের হয়ে ময়দানে নেমেছেন যথাক্রমে পরিচিত চিকিৎসক অজয় পোদ্দার ও ‘পরিচিত’ শ্রমিক-নেতা চণ্ডীদাস চট্টোপাধ্যায়।

এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, এখানে তৃণমূলের সব থেকে বড় ‘প্লাস পয়েন্ট’ ব্যক্তি উজ্জ্বলবাবুর নিজস্ব ‘ক্যারিশমা’। কিন্তু এলাকার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এ বার অন্যতম কাঁটা হতে পারে দু’টি বিষয়— প্রথমত, দলীয় ‘কোন্দল’। কুলটির তৃণমূল ব্লক সভাপতি বিমান আচার্যের সঙ্গে উজ্জ্বলবাবুর ‘সুসম্পর্ক’ সম্পর্কে এলাকায় ও দলের সকলেই কম-বেশি অবহিত। তার বহিঃপ্রকাশও দেখা গিয়েছে, মিঠানিতে দলের নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে কুলটির ২৭ জন বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলরের ন’জন উপস্থিত হওয়ার মতো ঘটনায়। পাশাপাশি, উজ্জ্বলবাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করে সম্প্রতি এলাকার চার জন বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এ যাবৎ, দুই নেতাকে প্রকাশ্যে কোনও কর্মসূচিতে এক সঙ্গে দেখা গিয়েছে বলেও মনে করতে পারেন না কুলটির বাসিন্দারা। এই ‘বিবাদ’ প্রসঙ্গে বিমানবাবু সরাসরি কিছু না বললেও তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘অবশ্যই দলের নিচুতলার কর্মীদের মনোবলে চিড় ধরেছে।’’ ভোটে এর প্রভাব পড়বে কি? তাঁর জবাব, ‘‘আমি আমার কাজ করছি।’’ এ দিকে, উজ্জ্বলবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘কর্মীদের মনোবল খুবই চাঙ্গা আছে। আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক।’’

Advertisement

দ্বিতীয়ত, ‘বেহাল’ নাগরিক পরিষেবা। প্রায় ২৩৯ কোটি টাকায় কুলটিতে পানীয় জলের প্রকল্প তৈরি হলেও এখনও কলেজমোড়, বরাকরের সারদাপল্লি, বালতোড়িয়া, মনবেড়িয়া, রাধানগরের মতো এলাকায় জল-সমস্যা রয়েছে। হয়েছে পথ-অবরোধও। স্থানীয় বাসিন্দা মনোজ যাদবের কথায়, ‘‘গ্রীষ্মে কয়েক কিলোমিটার পথ উজিয়ে সাইকেলে করে পানীয় জল আনতে হয়।’’ পাশাপাশি, বরাকরের রিভারসাইডে নিকাশির, নিয়ামতপুর লাগোয়া রবীন্দ্র মূর্তি থেকে রাধানগর যাওয়ার রাস্তা বেহাল, অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা অভিজিৎ সেনের। তবে বিদায়ী তথা তিন বারের বিধায়ক উজ্জ্বলবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সাধ্যমতো জনগণের সেবা করেছি।’’

‘অপ্রতুল’ পরিষেবার প্রসঙ্গ প্রচারে আনছেন কুলটির বিজেপি প্রার্থী অজয়বাবু। তাঁর কথায়, ‘‘কুলটির প্রত্যন্ত এলাকাগুলি ঘুরলে মনে হয়, এটা যেন শহর নয়। কোনও অনুন্নত পঞ্চায়েতে ঘুরছি।’’ কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, অজয়বাবুরও মূল ‘কাঁটা’, দ্বন্দ্ব। বিজেপি সূত্রেই খবর, এ বার এই কেন্দ্রে প্রার্থিপদের দাবিদার ছিলেন প্রায় ৫৪ জন! গত বার বিধানসভা ভোটে উজ্জ্বলবাবুর বিরুদ্ধে হেরেছিলেন অজয়বাবু। তাই উঠেছিল প্রার্থী বদলের দাবিও। অজয়বাবুর প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হওয়ার পরে, বিজেপির কুলটি ৩ নম্বর মণ্ডল কমিটির সভাপতি অমিত গড়াই স্বয়ং সদলবলে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান। অমিতবাবু এখন অবশ্য বলছেন, ‘‘আবেগের কারণে সাময়িক কিছু সমস্যা হয়েছিল। এখন কোনও বিবাদ নেই।’’ একই কথা বলেন অজয়বাবুও। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুত বিজেপির একাধিক স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে জল্পনা রয়েছে, ভোটের দিন দলের সব অংশ ময়দানে নামবে তো! যদিও অমিতবাবুর কথায়, ‘‘সবাই এক হয়ে প্রার্থীর জন্য কাজ করছি।’’

এ দিকে, এলাকার দীর্ঘদিনের দাপুটে শ্রমিক নেতা চণ্ডীদাসবাবু কংগ্রেসের প্রার্থী। ইস্কো, রেল-সহ নানা ক্ষেত্রের শ্রমিক আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশও ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করছেন, ‘চণ্ডীবাবু ভোট কাটতে পারেন’। তবে ভোট কাটাকাটি নয়, বরং নিজের ‘জয়ের’ বিষয়ে প্রত্যয়ী প্রার্থী বলেন, ‘‘তৃণমূল-বিজেপি, দু’পক্ষকেই মানুষ দেখছেন। বিকল্প, সংযুক্ত মোর্চা।’’ কিন্তু এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিপিএম নেতা-কর্মীদের একাংশের দাবি, কংগ্রেসের সংগঠন বলে এই এলাকায় আর কিছুই কার্যত অবশিষ্ট নেই। এটা প্রার্থীকে ‘বেগ’ দিতে পারে। যদিও সে জল্পনায় আমল দেননি খোদ প্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন