কাননে কি বিঁধছে নারদ-হুল

সেই ১৯৮৫ সাল থেকে নির্বাচনে লড়ছেন। কখনও পুরসভা, কখনও বিধানসভা। কোনও দিন হারেননি। তাঁর সম্পর্কে মজা করেই বলা হয়, এমনকী ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এক বার (১৯৮৯) ভোটে হেরেছেন, জয়ভাগ্য বদলায়নি শুধু তাঁর ‘স্নেহের কানন’-এর।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫৫
Share:

শোভন চট্টোপাধ্যায়

সেই ১৯৮৫ সাল থেকে নির্বাচনে লড়ছেন। কখনও পুরসভা, কখনও বিধানসভা। কোনও দিন হারেননি। তাঁর সম্পর্কে মজা করেই বলা হয়, এমনকী ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এক বার (১৯৮৯) ভোটে হেরেছেন, জয়ভাগ্য বদলায়নি শুধু তাঁর ‘স্নেহের কানন’-এর। এ বারের বিধানসভা ভোটেও জয় নিয়ে তিনি এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে, প্রতিদ্বন্দ্বী অম্বিকেশ মহাপাত্র সম্পর্কে সোজাসাপ্টা বলছেন— ‘‘ওই নির্দল প্রার্থীর প্রতীক চেনাতে যে সময় লাগবে, তত দিনে ভোটের ফল বেরিয়ে যাবে।’’

Advertisement

এ হেন শোভন চট্টোপাধ্যায়কে কেন ভরসা রাখতে হচ্ছে তারকাখচিত প্রচারে? টলিউডের নায়ক-নায়িকারা তো বটেই, প্রচারে আনা হচ্ছে ৭০ দশকের বলিউড নায়িকা জিনাত আমনকেও।

নারদের ভিডিওয় পুরসভায় নিজের চেম্বারে বসে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। বেহালার অলিগলিতে ‘আমরা আক্রান্তে’র প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্রকে জেতাতে প্রচারে জোট-কর্মীরা লিখছেন ‘স্টিং অপারেশন কাণ্ডে মুখ পুড়েছে কলকাতার মেয়রের’।

Advertisement

আত্মবিশ্বাসে ‘ঘাটতি’র পিছনে তবে কি নারদ-কাঁটার ভয়? ম্যাথু স্যামুয়েলের স্টিং অপারেশনে ‘বিদ্ধ’ হয়ে কোথাও কি তবে বেসুর বাজছে জয়ের ঘণ্টা?

শোভনের ‘ভাইয়েরা’ অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন সে কথা— ‘‘দাদার হাতে ঘড়িটা দেখেছেন? ওমন চারটে স্টিং-কাণ্ডের টাকা এক করেও ওই ঘড়ির দাম হবে না।’’

কেউ কেউ বলছেন, ত্রিফলা থেকে লেক মল— শহর জুড়ে বেআইনি নির্মাণ-সহ নানা অভিযোগ-দুর্নীতি-অনিয়ম অনায়াসেই ‘ট্যাকল’ করেছেন যিনি, সেই শোভন ‘স্টিং কাণ্ডে’ কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে। তবে সেই অস্বস্তি তাঁর ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে, এমনটা মনে করছেন না শোভন নিজে। তবু ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন পথে যাবে, হয়তো তা নিয়েই মেয়র বেশি চিন্তিত বলে মত অনেকের।


বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে প্রচারে অভিনেত্রী জিনাত আমন।
বুধবার টালিগঞ্জে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

ভোট-রাজনীতি তাঁর ‘গুলে খাওয়া’। কথায় কথায় বুঝিয়েও দেন সব সময়ে। কংগ্রেসে রাজনৈতিক জীবন শুরু হলেও তাঁর উত্থান মূলত তৃণমূলের ঝান্ডাতেই। মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আমলে ‘জল শোভন’ (জল সরবরাহ দফতরের মেয়র পারিষদ) হয়ে ওঠা। পরে ‘কানন’কে কলকাতার মেয়র পদেই অভিষিক্ত করেন তাঁর ‘মমতাদি’। দু’বার। তৃণমূলের সকলেই জানেন, দলনেত্রীর কতখানি ঘনিষ্ঠ তিনি। দলে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ তাঁর ঝুলিতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতার মতো দু’টি বড় জেলায় তৃণমূলের সভাপতি। গত পুরভোটে প্রার্থী বাছাই-সহ সব ভার তাঁর উপরেই ন্যস্ত করেছিলেন নেত্রী। বিশ্বস্ত সেনাপতি হিসাবে।

বাম আমলেও বেহালা থেকে জিতে এসেছেন। দখল নিয়েছেন বরোর আধিপত্যও। সম্পর্ক ভাল বিরোধীদের সঙ্গেও। এলাকায় শোনা গেল সিপিএমের সঙ্গে তাঁর ‘হবনবিং’য়ের গল্প। বামফ্রন্টের নেতাকর্মীদের নিজের ‘কব্জা’য় রাখতে ওস্তাদ। অভাব নেই অর্থবলেরও।

বিধানসভা ভোটে বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে এ বারও প্রার্থী শোভন। সেই রণক্ষেত্রেই ছড়িয়ে পড়েছে ঘুষ-কাণ্ড। অম্বিকেশও বলছেন, ‘‘ভিডিও দেখেই বোঝা যায়, পেশাদার ঘুষখোরের মতো টাকা নিচ্ছেন মেয়র!’’ শোভন অবশ্য এই অভিযোগ নিয়ে মাথা ঘামাতেই রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে যাঁরা চেনেন, জানেন, তাঁরা এ সব বিশ্বাসই করবেন না।’’ তাঁর ধারণা, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এটা বড় ষড়যন্ত্র। ভোটে ফায়দা তোলার চেষ্টা। ভোটের ফলাফল তা প্রমাণ করবে।’’

কিন্তু লোকে তাঁকে ভোট দেবে কেন?

শোভনের দাবি, কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যুক্ত হওয়া জোকার দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন দলের ইউএসপি। বললেন, ‘‘এই বিধানসভা কেন্দ্রের সব ওয়ার্ড তৃণমূলের দখলে। সিপিএম সমর্থকেরাও আমাকে পছন্দ করেন।’’ জোটের অন্দরেও ভাগ বসাতে পারেন মেয়র, এমন খবরও রয়েছে বাম মহলে। মেয়র অবশ্য একে রাজনীতির ‘চাল’ বলেই মনে করেন।

তবে ভোট-ময়দানে আনকোরা হলেও প্রতিবাদী মুখ অম্বিকেশকে ‘হাল্কা’ করে দেখছেন না একটুও। বললেন, ‘‘প্রতিপক্ষকে কখনও দুর্বল ভাবতে নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন