ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ করে দিলজিৎ দোসাঞ্জকে সমর্থন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ের। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
সাল ১৯৮৪। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর খবর ছড়াতেই অগ্নিগর্ভ দেশ। দুই শিখ নিরাপত্তারক্ষীর হাতে মৃত্যু হওয়ায় শিখ জাতির উপরে ক্ষিপ্ত দেশবাসী। আক্রমণের সেই আঁচ কলকাতাতেও। ৪১ বছর আগে নিজের চোখে শিখদের আক্রান্ত হতে দেখেছিলেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়।
সাল ২০২৫। খালিস্তানিদের কোপে গায়ক দিলজিৎ দোসাঞ্জ। তাঁর ত্রুটি, তিনি পাগড়ি পরে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ অনুষ্ঠানের মঞ্চে পা ছুঁয়েছেন অমিতাভ বচ্চনের। পাগড়ি পরে পা ছোঁয়া শিখ ধর্মবিরোধী। দিলজিৎ শিখ, অথচ নিজধর্ম মানেননি! খবর, দুই খ্যাতনামীই নাকি খালিস্তানিদের কোপে।
এই জায়গা থেকে ভাস্বরের প্রশ্ন, “কোন ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে, ভিন্ধর্মী অন্যের পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে পারবেন না? দিলজিৎ তো অমিতাভ বচ্চনের বয়সকে সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন।”
দু’টি ঘটনার মধ্যে লম্বা সময়ের ব্যবধান। দেশবাসীর মানসিকতা বদলাল কই?
ভাস্বরকে প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। অভিনেতার সপাট জবাব, “বদলায়নি তো! একটুও এগোইনি আমরা। বরং ইদানীং যেন কিছু মানুষের ধর্ম নিয়ে মাতামাতি বেড়েছে। সেই কারণেই যেন পরধর্মসহিষ্ণু দেশে অসহিষ্ণুতা মাথা চাড়া দিচ্ছে।” তাঁর ক্ষোভ, শুধু শিখ বলে নয়, যে কোনও ধর্মের মানুষ অপছন্দের কোনও কাজ করলে তা-ই নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে! দেশবাসী ধর্মসংক্রান্ত ‘বিষয়’ পেলে রে রে করে উঠছে।
এই প্রসঙ্গে তিনি ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবরের ঘটনার কথা জানিয়েছেন।
ভাস্বরের কথায়, “আমি তখন চতুর্থ শ্রেণি। মায়ের সঙ্গে ছবি দেখতে গিয়েছি। হঠাৎ কিছু লোক হলে ঢুকে পড়ে সিনেমা দেখানো বন্ধ করে দিলেন! কিন্তু সঠিক কারণ কেউ বললেন না! উল্টে সকলকে বাড়ি ফিরে যেতে বললেন।” তড়িঘড়ি রাস্তায় বেরিয়েই একটি দৃশ্য দেখে থমকে গিয়েছিলেন ভাস্বর। তত ক্ষণে ঝড়ের বেগে ছড়িয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুসংবাদ। এক মাঝবয়সি শিখ স্কুটারে যাচ্ছেন। পিছনে বাঁশ হাতে তাঁকে তাড়া করেছেন একদল অজ্ঞাতপরিচয়! ভাস্বর বলেছেন, “আমার এক তুতো দাদা সেই সময়ে অহমদাবাদে চাকরি করত। ট্রেনে ফেরার পথে দেখেছিল, প্রাণ বাঁচাতে রেলের বাথরুমে ঢুকে পাগড়ি খুলে দাড়ি-গোঁফ, মাথার চুল কেটে ফেলছেন শিখেরা!”