দেবাশিস মণ্ডল যখন বড় পর্দার ‘কানহো মুর্মু’। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতের স্বাধীনতার আট দশক আগের কথা। তখনও জাতীয় কংগ্রেসের জন্ম হয়নি ভারতের রাজনীতির মানচিত্রে। ব্রিটিশদের অত্যাচারে শোষিত সাঁওতাল সমাজ থেকেই কিন্তু প্রথম আওয়াজ উঠেছিল, ‘আর না, যথেষ্ট হয়ে গিয়েছে, যথেষ্ট!’ অধুনা ঝাড়খণ্ডের ভোগনাডিহি-র দুই ভাই সিধো আর কানহো মুর্মু। এঁদের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম বিদ্রোহ রাঙা হয়েছিল। তাঁদের খবর কে রাখে?
“কারণ, ইতিহাস ওঁদের কথা লেখেনি। ভারতের স্বাধীনতায় সাঁওতালেরা অচ্ছুত। সাঁওতাল বিদ্রোহ জায়গা করে নিতে পারেনি স্কুলের পাঠ্যবইয়ে”, স্বাধীনতার দিন বড় পর্দার ‘কানহো’ দেবাশিস মণ্ডল আনন্দবাজার ডট কম-এর কাছে আক্ষেপ করলেন। কেন করলেন? কারণ, আবীর রায়ের ‘হুল’ ছবিতে বিপ্লবী সাঁওতাল নেতার ভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ্যে এসেছে ছবির দ্বিতীয় ‘লুক’। তখনই কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, “একটা ভিডিয়ো নেই। ওঁদের নিয়ে কোনও তথ্য নেই। কী কষ্ট করে যে পর্দায় কানহো হয়ে উঠতে হয়েছে, সেটা কেবল আমরাই জানি।” কিছু লোককথা, আর দুই শহিদ ভাইয়ের পরিবারদের থেকে সংগ্রহ করা সামান্য তথ্য— সিধো-কানহোর জন্য এ টুকুই!
আর একটি বিষয় দেবাশিসকে ‘কানহো’ হয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছে। তাঁর বাড়ি কাঁচরাপাড়ায় একটি সাঁওতালপল্লি রয়েছে। তিনি ছোট থেকে সেখানে যেতেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন তিনি। সাঁওতালি ভাষাও জানেন তাই অল্পবিস্তর। বিশদে জানতে গিয়ে এই বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষদের আরও কাছ থেকে দেখেছেন অভিনেতা। দিনকয়েক আগে ছবির শুটিং শেষ হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসে তাই তাঁদের না পাওয়ার যন্ত্রণা নতুন করে ব্যথিত করেছে তাঁকে। দেবাশিসের আশা, তাঁদের ছবি হয়তো কিছুটা হলেও সাঁওতাল বিদ্রোহের উপরে আলো ফেলতে পারবে।
সাঁওতালদের মতো এই বিশেষ শ্রেণির ভাষাও সমাজে অচ্ছুত। সম্প্রতি সেই যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে বাংলা ভাষাকেও। নিজের রাজ্যের পাশাপাশি ভিন্ রাজ্যেও ক্রমশ কোণঠাসা এই ভাষা। ইতিমধ্যেই মাতৃভাষা বাঁচাতে পথে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেহেতু স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রথম সূত্রপাত সাঁওতাল জাতির হাত ধরে, ‘বাংলা ভাষা বাঁচাও’ আন্দোলনেও কি তাঁদের প্রতিবাদী রূপ আর একবার দেখবে দেশ?
দেবাশিসের মতে, সারা রাজ্যে বাংলা ভাষার নানা রূপ। অঞ্চল বিশেষে তাতে সামান্য বদল এসেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাষা এসে বাংলার সঙ্গে মিশে গিয়েছে। সারা বিশ্বে এই ভাষাভাষীর মানুষ অগুনতি। সেই জায়গা থেকে তিনি মনে করেন না, বাংলা ভাষা এখনও খুব সঙ্কটাপন্ন। এও জানান, সাঁওতাল ভাষাও তাদের অঞ্চলে কিন্তু এখনও যথেষ্ট প্রভাবশালী।