Dev on Bagha Jatin

এককালে আমার ছবি হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হত, আমি কারও ক্ষতি না করেই ‘বাঘা যতীন’-এর শো বাড়াব

পুজোর ছবির লড়াইয়ে ‘বাঘা যতীন’-এর স্থান নিয়ে সংশয় ছিল অনেকের। ছবি মুক্তির পর কিছুটা বদলেছে সেই চিত্র। আত্মবিশ্বাসী দেব আনন্দবাজার অলাইনকে শোনালেন তাঁর মনের কথা।

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৩৩
Share:

দেব। ছবি: সংগৃহীত।

পুজোয় মুক্তি পেয়েছে চারটি বাংলা ছবি। মুক্তির আগে সিনেপ্রেমীদের এক রকম অনুমান ছিল। টলিপাড়ার অন্দরে বলা হচ্ছিল, জোর ‘খেলা হবে’। কিন্তু ময়দানে নেমে এক দিনের মাথায় যাবতীয় অনুমান কিন্তু বদলে গিয়েছে। দৌড়ে এগিয়ে গিয়েছে দেব অভিনীত ‘বাঘা যতীন’। ছবি পছন্দ হয়েছে দর্শকদের। ছবি ঘিরে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখে হল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেব। শুক্রবার জাতীয় স্তরে হিন্দিতে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। দেবের মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। দিল্লি থেকে ফোনে ধরা দিলেন তিনি।

Advertisement

সকাল থেকে একের পর এক রিভিউ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করছিলেন দেব। ছবি ঘিরে এতটা উৎসাহ কি তিনি সত্যিই আশা করেছিলেন? একটু ভেবে দেব বললেন, ‘‘সত্যি বলছি আমি আশা করেছিলাম। কারণ স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে ছবি বাংলায় খুব কম তৈরি হয়েছে। মন দিয়ে কাজ করলে জানতাম সাফল্য আসবেই।’’ একই সঙ্গে দেব জানালেন, এই ছবির সঙ্গে তিনি দীর্ঘ দিন জড়িয়ে রয়েছেন। পরিচালক অরুণ রায়ের গবেষণা ছবির মেরুদণ্ড। দেবের কথায়, ‘‘এটুকু জানতাম, দর্শক এক বার যদি হলে আসেন তা হলে পুরো ছবিটা না দেখে বেরোতে পারবেন না। আর সেটাই হয়েছে।’’

‘বাঘা যতীন’ ছবির একটি দৃশ্যে দেব। ছবি: সংগৃহীত।

অভিনেতার কাছে প্রতিটি ছবিরই আলাদা মর্ম থাকে। কিন্তু ‘বাঘা যতীন’কে কি নিজের কেরিয়ারের সেরা ছবি বলবেন দেব? অভিনেতার সপাট উত্তর, ‘‘আমার সেটাই মনে হচ্ছে। ৪০-৪৫টা ছবি করেছি। কিন্তু আজকে নিঃসন্দেহে বলতে পারি এটাই আমার সেরা ছবি।’’ কারণ এর নেপথ্যেও রয়েছে পারিবারিক সমর্থন। সম্প্রতি ছবির প্রিমিয়ারে সপরিবারে ছবিটি দেখেছেন দেব। অভিনেতা বললেন, ‘‘আমার মায়েরও খুব পছন্দ হয়েছে ছবিটা।’’ মা ছেলেকে বিশেষ প্রশংসা বার্তাও দিয়েছেন। দেবের কথায়, ‘‘মা ছবি দেখে বললেন, ‘এত দিন তুই যা ছবি করেছিস তার মধ্যেই এটাই আমার সবথেকে ভাল লেগেছে’।’’ তখন অভিনেতা মায়ের কাছে কারণ জানতে চান। দেবের কথায়, ‘‘মা বললেন, ‘বর্তমান প্রজন্মের তরফে আমাদের পূর্বসূরিদের এই ভাবেই শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো উচিত’।’’ দেবের মতে, কেউ এই ছবিকে ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের দলিল’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। দর্শক বন্দেমাতরম বলতে বলতে হল থেকে বেরোচ্ছেন। দেবের কথায়, ‘‘এটা যে কত বড় প্রাপ্তি, সেটা ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না।’’

Advertisement

দেব শুরু থেকেই বলেছেন তিনি ‘সেফ’ খেলতে পছন্দ করেন না। ‘বাঘা যতীন’-এর পর আগামী দিনে তাঁর ছবি নির্বাচন প্রক্রিয়া কি আরও কঠিন হতে চলেছে? অভিনেতা হেসে বললেন, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ নিতেই পছন্দ করি। কারণ, সহজ কাজ আমার করতেও ভাল লাগে না। তাই সব প্রজেক্টে সহজে রাজিও হই না।’’ অগস্ট মাসে মুক্তি পেয়েছিল দেব অভিনীত ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’ ছবিটি। ষষ্ঠীর দিনেও নন্দনে ছবির টিকিট বিক্রি ইতিবাচক। সেই প্রসঙ্গ টেনে দেব বললেন, ‘‘একই সঙ্গে পুরনো এবং নতুন ছবি হাউসফুল! এটা খুবই কম অভিনেতার জীবনে হয়েছে। যে ব্যোমকেশ এত দিন বাঙালি দেখেছেন তার থেকে অন্তত নতুন কিছু তো পেয়েছেন। আসলে প্রচেষ্টাই মূল বিষয়।’’

‘বাঘা যতীন’ ছবির একটি দৃশ্যে সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে দেব। ছবি: সংগৃহীত।

দেবকে নিয়ে ‘ট্রোলিং’ নতুন কিছু নয়। কখনও তাঁর উচ্চারণ, কখনও অভিনয় থেকেছে আতশকাচের নীচে। অভিনেতা নিজে তা সাদরে গ্রহণ করেও এসেছেন। ‘বাঘা যতীন’ কি অভিনেতা দেবকে নতুন জীবন দিল? যাবতীয় সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিল? দেব বললেন, ‘‘আমার নিজের উপর বিশ্বাস ছিলই। মানুষ এখন বিশ্বাস করছেন। আমার মনে হয়, একটা চরিত্র বা ছবির পিছনে আমি যে পরিমাণ পরিশ্রম করি, সেটা খুব কম অভিনেতাই করেন। আমি যে আমার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সিরিয়াস ছিলাম সেটা আজকে মানুষ বুঝতে পারছেন দেখে আমি সত্যিই খুশি।’’ একই সঙ্গে দেব জানালেন, ‘বাঘা যতীন’-এর পর তাঁর কাঁধে যে ভবিষ্যৎ দায়িত্ব বেড়ে গেল, সেটাও ভাল মতোই টের পাচ্ছেন অভিনেতা।

‘বাঘা যতীন’ ঘিরে দর্শকদের উচ্ছ্বাসকে চলতি বছরের পুজোর সেরা উপহার হিসাবেই উল্লেখ করতে চাইলেন দেব। রাজ্যে ৩৬২টা শো দিয়ে ‘বাঘা যতীন’-এর যাত্রা শুরু হয়। শুক্রবার থেকে ছবির শোয়ের সংখ্যাও বাড়ছে বলে সমাজমাধ্যমে ঘোষণা করেছেন দেব। দেব বললেন, ‘‘প্রতি দিনই এখন থেকে চেষ্টা করব যাতে শো বাড়াতে পারি। এক সময় জোর করে আমার ছবি হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি কারও ক্ষতি না করে সাধ্যমতো যাতে শো বাড়াতে পারি সেই চেষ্টাই করব।’’

ইন্ডাস্ট্রি বা সমাজমাধ্যমে ঢুঁ মেরে দেখা গিয়েছিল পুজোর ছবির তালিকায় প্রথম পছন্দ ছিল ‘দশম অবতার’। কিন্তু ছবি মুক্তির পর তালিকায় অদলবদল হয়েছে। দেব কি খুশি? ঘাটালের সাংসদের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর, ‘‘আপনারাই বলুন। আমি চাই সব ছবিই চলুক। দর্শককে আর বোকা বানানো যাবে না। আমার ছবির উপর আমার বিশ্বাস ছিল। কনটেন্ট ইজ় দ্য কিং। আজকে সেটাই প্রমাণিত হল।’’

দিল্লি থেকে ফিরে শনিবার থেকে কলকাতায় পুজো এবং ছবির প্রচারেই ব্যস্ত হয়ে যাবেন দেব। পুজোর পর শেষ করবেন ‘প্রধান’-এর বাকি শুটিং। বড়দিনের ছবির ভিড়ে তিনিই সিনেপ্রেমীদের প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠেন কি না দেখা যাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন