ছবি: প্রদীপ আদক
‘‘ভাগ্যিস আজ ফ্যাটবয় বার করিনি,’’ নিজেই বাইক মুছতে মুছতে বলছিলেন ঋষি কৌশিক। বাংলা ছোট পরদার ব্যস্ত স্টার। এতটাই ব্যস্ত যে, সাক্ষাৎকারের সময় বদলাতে হয়েছে দু’-দু’বার। প্রায় প্রতিদিন শ্যুটিং। তাই বাইরে কোথাও বসার পরিকল্পনা বাতিল করে, স্টুডিয়োতেই কথাবার্তা।
শ্যুটে আসেন নিজের বাইকে। বৃষ্টিতেও সে নিয়মের অন্যথা হয় না। ছবি তোলার আগে সেই কথাগুলো বলছিলেন ঋষি। অসমের তেজপুরে জন্ম। কলেজের পড়া শেষ করে অসমে কিছু দিন মডেলিং। ২০০২ সালে চলে আসেন কলকাতা। ‘‘প্ল্যান বলতে তেমন কিছু ছিল না। ভাবতাম মডেলিংয়ে যদি বড় কোনও প্ল্যাটফর্ম পাওয়া যায়। তিন বছর কোনও কাজ পাইনি। ফিরেই যাব ভাবছিলাম,’’ বলছিলেন ঋষি। তার পর হঠাৎ ডাক ছোট পরদায়। ‘একদিন প্রতিদিন’। পরের ধারাবাহিক ‘এখানে আকাশ নীল’-এর পর আর পিছনে ফিরতে হয়নি। একের পর এক হিট টিভি সিরিয়ালের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋষি কৌশিক।
যেখানে প্রায় সব অভিনেতা-অভিনেত্রীকে একটা সিরিয়ালে কাজ করার পরই সরে যেতে হচ্ছে, সেখানে পরপর এতগুলো হিট ধারাবাহিকে সুযোগ পেলেন কী করে? ‘‘কপাল!’’ হাসতে হাসতে বলছিলেন তিনি। তবে তাঁকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির অনেকের অভিযোগ, তিনি নাকি বেশ কুঁড়ে! সিরিয়ালের বাইরে আর কিছু করার চেষ্টা করেন না। বেশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলেন, ‘‘কমার্শিয়াল ছবি করতে তো আমিও চাই। কিন্তু প্রযোজকরা না চাইলে সিনেমা করব কী করে?’’
আরও পড়ুন:
আমাকে নিয়ে ছবি তৈরিতে সীমাবদ্ধতা আছে
তাঁর মতে, কাজ পাওয়ার জন্য যোগাযোগটা ভীষণ দরকারি। আর সেই যোগাযোগ তাঁর নেই। কিন্তু তিনি তো পার্টিতেও যান না! ‘‘নিজে অনেক পার্টি করি। কিন্তু কাজের চাপে ফিল্মি পার্টিগুলোতে যাওয়ার সময় পাই না। আর পার্টিতে গেলেই যে কাজ পাওয়া যাবে, এমনটা কিন্তু নয়। এই পার্টিগুলো আমার বেশ নকল-নকল লাগে। প্রযোজকদের অ্যাপ্রোচ করেও ভাল কোনও ফিডব্যাক কোনও দিন পাইনি। সিরিয়াল অন্তত আমাকে বসে থাকতে দেয়নি। নিয়মিত কাজ দিয়ে গিয়েছে। পার্টিতে না গিয়ে ঘুমিয়ে যদি ভাল কাজ করি, তা হলে অসুবিধা কোথায়!’’
তবে কাজের চাপে আর হঠাৎ করে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়া হয় না। বাইক নিয়েই গিয়েছিলেন লাদাখ, গোয়া। ‘‘ছুটির সময়টা এখন তিন ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। বাইকিং, অসমে মায়ের কাছে যাওয়া আর পরিবারকে সময় দেওয়া। একটা সুবিধা, বউ-ও বাইকে ইন্টারেস্টেড। তাই দু’জনে মিলে মাঝে মাঝে কাছাকাছি বেরিয়ে পড়ি।’’ তাঁর ইঞ্জিনিয়ার স্ত্রী দেবযানী চাকরির পাশাপাশি এখন সিরিয়ালেও অভিনয় করেন।
ঋষি কৌশিক আর অপরাজিতা ঘোষ দাসের প্রেম এক সময় বাংলা বিনোদন মিডিয়ায় ছিল অন্যতম অলোচনার বিষয়। এখন তো তাঁরা সহকর্মীও। অসুবিধা হয় না? ‘‘বাব্বা, লোকে পারেও। একদিন তো শুনলাম আমাদের বাচ্চাও আছে। খেলাম না, দেলাম না, গ্লাস ভাঙলাম আমি! ভাবলাম যাক যে, এই সুযোগে মিডিয়ায় নিয়মিত নাম তো আসছে। এটাই বা কম কী,’’ হাসতে হাসতেই বললেন ঋষি! বলছিলেন, কখনও কোনও সহ অভিনেত্রীর প্রেমে পড়েননি। ‘‘হার্টব্রেকের সময় হাফপ্যান্টে কাটিয়ে এসেছি।’’ কিন্তু কেউ প্রেম নিবেদন করেনি? ‘‘সেটা তো আপনার ওদের জিজ্ঞাসা করা উচিত,’’ মুচকি হেসে বলেন তিনি।
অসমের তেজপুরে বড় হলেও ছোটবেলা থেকেই বাংলায় সাবলীল ঋষি কৌশিক। উচ্চারণে জড়তা ছিল। সেটা কেটে যায় কাজ করতে করতে। ‘‘হলফ করে বলতে পারি, অনেক বাঙালির চেয়ে ভাল বাংলা বলি আমি।’’ বাইকের মতোই আগ্রহ শরীরচর্চায়। ‘‘প্রাইমারি শিক্ষক প্রতুল বড়ুয়ার কাছে আমার শরীরচর্চায় হাতেখড়ি। সেই ভাল লাগাটা আজও যায়নি।’’ কিন্তু চরিত্রের প্রয়োজনে যদি সাধের চেহারা ঝরাতে হয়? ‘‘চাইলেই তো হবে না, যুক্তিযুক্ত হতে হবে। সাত দিনের কোনও টেলিফিল্মের জন্য বললে কিছুতেই করব না। সিনেমায় বড় প্রজেক্টের জন্য অবশ্যই করা যায়। দেব-জিতদের যেমন সেটা মানায়,’’ সটান উত্তর তাঁর।
সিনেমা মানে তাঁর কাছে হার্ডকোর কমার্শিয়াল ছবি। ‘‘আমি আর্ট ফিল্মের লোক নই। টিকিট কেটে দেখতে হলে পয়সা উসুল ছবিই দেখব। ‘চাঁদের পাহাড়’ দেখে মনে হয়েছিল, ইস এই ছবিটা যদি আমি করতে পারতাম!’’ বড় পরদায় না হলেও, তিনি তো বাংলা ছোট পরদার নামী অভিনেতা। কখনও ন্যাশনাল টেলিভিশনে যাওয়ার চেষ্টা করেননি? ‘‘পরিকল্পনা আছে বলব না। তবে ইচ্ছে আছে। আসলে আমার ক্ষেত্রে প্ল্যান অনুযায়ী কোনও দিনই কিছু হয়নি। তাই প্ল্যান করা ছেড়ে দিয়েছি। স্বপ্ন দেখি... অবশ্যই বড় স্কেলে কিছু করব। যা করছি সেটাকে ছোট করছি না। কিন্তু শুধু সিরিয়াল করতে করতে মরে যাব না।’’
‘কুসুম দোলা’য় পরের শটের জন্য ডাক পড়েছে। উঠতে উঠতে বললেন, ‘‘স্বপ্ন নিয়ে মরব না, স্মৃতি নিয়ে মরব। আমি ভীষণ ভাবে মনে করি, গডস ডিলে ইজ নট ডিনায়াল। সময়কে সময় দিলে, সময়ও ভাল
সময় দেবে।’’