Aindrila Sharma Death

‘হাসি আর চিৎকার জানান দিত মিষ্টি এসে গেছে’, ঐন্দ্রিলাদের ফাঁকা বাড়ির সামনে বিষণ্ণ পড়শিরা

ইন্দ্রপ্রস্থের সেই সাদা রঙের তিন তলা বাড়িটা। লোহার ফটকের উপর নামফলক। তাতে লেখা উত্তম শর্মা, ঐশ্বর্য শর্মা, শিখা শর্মা, ঐন্দ্রিলা শর্মা। সব শেষ নামটা এ বাড়ির ছোট মেয়ের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২২ ১৯:৩০
Share:

এখনও ফলকে লেখা রয়েছে ঐন্দ্রিলার নাম। — নিজস্ব চিত্র।

এখনও নামফলকে বাড়ির বাকি সদস্যদের সঙ্গে জ্বলজ্বল করছে নামটা। ঐন্দ্রিলা শর্মা। বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থের সেই তিন তলা সাদা বাড়িটায় রবিবার শুধুই নিস্তব্ধতা। সেই খিলখিল হাসি, সেই চিৎকার নেই। আর কোনও দিন শোনাও যাবে না। সন্ধ্যার রাস্তায় তখন একে একে আলো জ্বলছে। আর বাড়িটা ক্রমেই ডুবে যাচ্ছে অন্ধকারে। সামনে দাঁড়িয়ে স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন শিপ্রা কাকিমা, অরবিন্দ কাকুরা।

Advertisement

বহরমপুর মোহনা বাস স্ট্যান্ড থেকে রানিবাগান মোড় হয়ে ইন্দ্রপ্রস্থের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমের পাশের গলি। সেখানেই রয়েছে সেই সাদা রঙের তিন তলা বাড়িটা। লোহার ফটকের উপর নামফলক। তাতে লেখা উত্তম শর্মা, ঐশ্বর্য শর্মা, শিখা শর্মা, ঐন্দ্রিলা শর্মা। সব শেষ নামটা এ বাড়ির ছোট মেয়ের। এই বাড়িতেই কেটেছে যাঁর ছোটবেলা। দীর্ঘ রোগভোগের পথ পেরিয়ে রবিবার দুপুরে চিরশান্তির পথে পাড়ি দিয়েছেন। দুপুর নাগাদ ঐন্দ্রিলার দিদি ঐশ্বর্যা পাড়ায় কয়েক জনকে ফোন করে মৃত্যুসংবাদটা দেন। বলেন, ‘‘বোনকে আর ফেরাতে পারলাম না গো!’’ দুপুর ১টা ৪৫মিনিট নাগাদ ফোনটা আসে দীর্ঘ দিনের প্রতিবেশী শিপ্রা কাকিমার কাছে। ঐশ্বর্যা ফোনে বলেন, ‘‘মিষ্টি আর নেই !’’ খবরটা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে গোটা পাড়ায়। সাদা বাড়ির সামনে আস্তে আস্তে ভিড় জমতে শুরু করে।

খবর পেয়েই ঐন্দ্রিলার বাড়ির সামনে ছুটে আসেন তাঁর দীর্ঘ দিনের নাচের শিক্ষক অভিজ্ঞান ভট্টাচার্য। বলেন, ‘‘পুজোর আগে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী গানে আমরা একটা মিউজিক ভিডিয়ো করেছিলাম। মিষ্টির সেই পারফরম্যান্সটা আজও মনে পড়ে। পেশাদারি অভিনয় শুরুর পরেও কলকাতা থেকে এতটা পথ পেরিয়ে বহরমপুরে পৌঁছেই আবার রিহার্সালে চলে আসত।’’

Advertisement

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা। মনে করেন তাঁর ছোট বেলার গৃহশিক্ষিকা অঙ্কিতা দাস। ছোটবেলায় যাঁর কাছে আঁকার হাতে খড়ি, সেই প্রসেনজিৎ জানালেন, ‘‘ওকে নিজের মতো আঁকতে দিলে সব অদ্ভুত ছবি এঁকে দিত! এক জন আর্টিস্টের যা যা গুণ থাকা প্রয়োজন, ঈশ্বর তাঁকে ঢেলে দিয়েছিলেন।’’ ঐন্দ্রিলাদের সঙ্গে আত্মীয়তা রয়েছে প্রসেনজিতের। বহরমপুরে এলেই অভিনেত্রী ছুটে আসতেন তাঁদের বাড়িতে। প্রসেনজিতের কথায়, ‘‘একটি রিয়েলিটি শোতে প্রথম হয়েই ওঁর কাকিমাকে ফোন করেছিল। বলেছিল, বাড়ি গিয়ে কিন্তু তোমার হাতের চিকেন পকোড়া খাব। এই তো পুজোর মধ্যে এসেও কত গল্প করে গেল, বয়াম থেকে নিজের হাতে তুলে নাড়ু খেল।’’

ঐন্দ্রিলাদের দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘২০১১ সাল থেকে আমি ওদের প্রতিবেশী। মিষ্টি বাড়ি আছে কি না কাউকে জিজ্ঞেস করতে হত না, অট্টহাসি আর চিল চিৎকার বলে দিত মিষ্টি এসে গেছে। এ রকম প্রাণোচ্ছ্বল, সদা-হাস্য একটি মেয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেল ভাবতেই পারছি না।’’

বহরমপুরে এলে অরবিন্দ কাকুর দোকান থেকে কেক খাওয়া চাই-ই। জানালেন খোদ তিনিই। বলেন, ‘‘কেক বড্ড প্রিয় ছিল ঐন্দ্রিলার, বাড়ি এলেই রানিবাগান মোড়ের দোকান থেকে তার কেক নেওয়া চাই চাই!’’ অরবিন্দ সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছেন প্রিয় ঐন্দ্রিলার মৃত্যুসংবাদ। তাঁর কথায়, ‘‘যতবার বাড়ি আসত, আমার দোকান থেকে কেক নেবেই নেবে! ও নিজে এত অসুস্থ, তবুও কেক কেনার পর জিজ্ঞেস করত, কাকু, শরীর ভাল আছে? কেক নিতে হয়ত অনেকেই আসবেন, কেউ আর এ ভাবে কখনও জানতে চাইবে না, ভাল আছি কি না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন