পর্দার ‘মা’ সুচন্দ্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিতিপ্রিয়া রায়। ছবি: ফেসবুক।
মেয়ের থেকে আর কতই বা বড় হবেন মা? পাশাপাশি বসলে মনে হবে, বছরকয়েকের ছোট-বড়! মেয়েও মা-কে তুই-তোকারি করেন। হইহই করে আড্ডা দিতে দিতে মায়ের সঙ্গে খেতে বেরোন। এঁরা দিতিপ্রিয়া রায়, সুচন্দ্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধারাবাহিক ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর নায়িকা অপর্ণা আর তার ‘মা’ সুস্মিতা।
চিরাচরিত মায়ের সাজে সাজলেই কয়েক বছরের তফাতে দুই চরিত্রের বয়সের কত ব্যবধান! কখনও মনখারাপ করে সুচন্দ্রার? তিনিও নায়িকা হওয়ার যাবতীয় গুণ নিয়েই তো অভিনয়দুনিয়ায় পা রেখেছেন!
প্রশ্ন ছিল আনন্দবাজার ডট কম-এর। বিষয়টি তুলতেই মিষ্টি হাসলেন সুচন্দ্রা। বললেন, “চরিত্রটা যে কী ভাল! ধারাবাহিকের গল্পও অন্য রকম। আমার অভিনয় করে ভাল লাগছে। দর্শকও আমায় পছন্দ করছেন।” একটু থেমে বোধহয় নিজের ভিতর উঁকি দিলেন। ফের বললেন, “সকলের জন্য তো সব নয়। ইন্ডাস্ট্রিতে ভাগাভাগি আছে, কারা নায়িকা হবেন, কারা চরিত্রাভিনেত্রী। সেই অনুযায়ী আমি বরাবর চরিত্রাভিনেত্রী। আর তাতেই আমি খুশি।” তার পরেই হাসতে হাসতে জানালেন, দিতিপ্রিয়া যখন ‘রাণী রাসমণি’ হয়েছিল তখন তিনি অভিনেত্রীর ‘শাশু়ড়ি’! “পর্দায় ও-ও বুড়ো হচ্ছে। তাল মিলিয়ে আমিও। তখন থেকে ওকে চিনি। খুব মিষ্টি। ভীষণ পরিশ্রমী। তখন ও অভিনয়, পড়াশোনা— একসঙ্গে করত। ওর মা সিদ্ধ ভাত রেঁধে আনতেন। আমরা গোল হয়ে বসে খেতাম।”
চলতি ধারাবাহিকে সুচন্দ্রা ওরফে সুস্মিতা যথেষ্ট ইতিবাচক। মেয়েকে বোঝে। অপর্ণাকে সারা ক্ষণ আগলায়। তার কাজকর্মে সায়ও আছে পর্দার ‘মা’-এর। বাস্তবেও সুচন্দ্রা কি এতটাই উদার মানসিকতার? এত নরম? অভিনেত্রীর কথায়, “যে যেমন, তার সঙ্গে তেমন ব্যবহার করি। যিনি নরম মনের, তাঁর সঙ্গে বাস্তবেও নরম ভাবেই কথা বলি। যিনি গরম দেখান, তিনি সেই ব্যবহারই ফেরত পান।” একটু থেমে যোগ করলেন, আদতে তিনি সকলের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে মিলেমিশে চলতে ভালবাসেন।
‘পর্দার মেয়ে’র নাকি যথেষ্ট মাথাগরম! তাকে ‘তুষ্ট’ রাখতেই কি মাঝেমধ্যেই ভালমন্দ খাওয়াদাওয়ার আয়োজন? অস্বীকার করেননি ‘অপর্ণার মা’। জানিয়েছেন, তিনি নিজে খেতে খুব ভালবাসেন, প্রিয় মানুষদের খাওয়াতেও। “যেমন ধরুন জন্মাষ্টমী। ওই দিন আমার তাড়াতাড়ি শুটিং হয়ে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরে গোপালের পুজো করব বলে খিচুড়ি, তালের বড়া রেঁধেছিলাম। দিতির কথা মনে পড়ল। ওকে গুছিয়ে পাঠিয়ে দিলাম। মেয়েটা খেয়ে কী খুশি!” অভিনেত্রীর মতে, ঠিক একই ব্যবহার ধারাবাহিকের নায়িকাও তাঁর সঙ্গে করেন। হয়তো সুচন্দ্রার কোনও কারণে মনখারাপ, দিতিপ্রিয়া তাঁর মেজাজ ঠান্ডা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন!
আর ‘জামাই’? পর্দায় তো হবু শাশুড়ি, নায়ক ‘আর্য সিংহ রায়’ বলতে অজ্ঞান! এ বার জোরে হেসে ওঠেন সুচন্দ্রা। নায়ক ওরফে জীতু কমলের সহ-অভিনেত্রীর দাবি, “শুনেছি, আমার পর্দার জামাই নাকি অন্যের কাছে রাশভারী। আমার সঙ্গে কিন্তু মন খুলে মেশে। কথা, হাসিঠাট্টা— সবই হয়।” তাঁর কথায়, এক জায়গায় থাকলে ঠোকাঠুকি হবেই। সেটা ধরে কেউ বসে না থাকলেই হল।
তা হলে ‘মেয়ে-জামাই’-এর ভুল বোঝাবুঝি মেটাতে সুচন্দ্রা নিশ্চয়ই বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন? এ বার মৃদু স্বরে উত্তর এল, “সবাই যখন কথা বলেন, তখন কাউকে চুপচাপ দেখতে হয়। সেই মুহূর্তে ওটাই মস্ত কাজ। আমি সেটাই করেছি। দেখুন, এখন সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। এই মিটমাট হওয়ারই ছিল। এখন আমরা সব ভুলে, আবার সকলে মিলে দিব্যি কাজ করছি।” তাঁর মতে, কিছু জিনিস সময়ের হাতে ছেড়ে দিতে হয়। এ-ও বললেন, “দিতিপ্রিয়া ভীষণ ভাল। কারও কোনও জিনিস খারাপ লাগলে, তিনি প্রতিক্রিয়া তো জানাবেনই। সেটাই স্বাভাবিক। তার মানে কি আদতে দিতিপ্রিয়া সে রকমই?” তাঁর উপলব্ধি, দু’জন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি নিজেদের ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আগামী দিনে নায়িকা হওয়ার দৌড়ে নিজেকে শামিল করতে সুচন্দ্রাও কি ওজন ঝরিয়ে নিজের প্রতি আরও মনোযোগী হবেন? “ভাল চরিত্র দিয়ে আমাকে কেউ চ্যালেঞ্জ জানাক! শুধু ওজন ঝরানো কেন, ক্যারাটেও শিখে ফেলব। তার আগে কেন শুধু শুধু খাওয়া ছাড়ব?”, হাসতে হাসতে বললেন পর্দার ‘সুমি’।