পুরুষতন্ত্রের প্রভাব নিয়ে কথা বললেন সুদীপ্তা। ছবি: সংগৃহীত।
পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশে দিনের পর দিন কাজ করছেন মহিলারা। কখনও পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে সেই পুরুষতন্ত্রের প্রভাব পড়ছে। আবার কখনও অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে এই পুরুষতন্ত্রই। কিন্তু এ বার ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে, মনে করেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। প্রমিতা ভৌমিক পরিচালিত ‘অহনা’ ছবিতে এক লেখিকার চরিত্রে অভিনয় করছেন সুদীপ্তা। পুরুষতান্ত্রিক আবহে এক লেখিকার এগিয়ে চলার কথাও রয়েছে এই ছবিতে। সৃজনশীল ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হলে মহিলাদের দাম্পত্যে কী প্রভাব পড়ে, তা-ও উঠে আসবে সেই ছবিতে।
প্রতিনিয়ত ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে মহিলাদের। জীবনে সফল হওয়ার রাস্তা মোটেই মসৃণ নয়। এমনই যেন রীতি। এই বিষয় নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার এক রেস্তরাঁয় বসেছিল আলোচনা সভা। কী কী বাধার সম্মুখীন হতে হয় কর্মজীবনে, তা নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের মহিলারা। এই পুরুষতন্ত্রে শুধুই পুরুষদের দ্বারা কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়, এমন নয়। অনেক সময়ে বহু পুরুষতান্ত্রিক মহিলাও সমস্যার তৈরি করেন। তাই কর্মক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন সুদীপ্তা।
অভিনেত্রী বলেন, “সহকর্মীদের শুধু যেন সহকর্মী হিসেবেই ভাবা হয়। মহিলা সহকর্মী না পুরুষ সহকর্মী— এটা যেন বিষয় হয়ে না দাঁড়ায়। দ্বিতীয়ত, শারীরিক দিক থেকে আমরা দুর্বল হতে পারি। কিন্তু মানসিক দিক থেকে আমাদের কখনওই দুর্বল হওয়া উচিত নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুবিধা নেন অনেকে। যত ক্ষণ বাসে দাঁড়াতে পারছেন, দাঁড়ান। না পারলে তখন অনুরোধ করুন। বরং কোনও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে বা ঋতুস্রাব চলছে, এমন মহিলা থাকলে তাঁদের জায়গা দিয়ে নিজে দাঁড়ান।”
সমাজে মহিলাদের জন্য নানা সুবিধা রয়েছে। সেই সুবিধাগুলি নেওয়ার পরেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অভিযোগ তোলা ঠিক নয় বলে মনে করেন সুদীপ্তা। ‘অহনা’ ছবিতে মূল চরিত্রে স্বামীর ভূমিকা ছবির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অহনার সঙ্গে বাস্তবের সুদীপ্তার কী কী মিল রয়েছে, সেই প্রসঙ্গেও কথা বলেন অভিনেত্রী। তিনি বলেন,“বাস্তবে সুদীপ্তার একটি ছানা রয়েছে। কিন্তু অহনার হয়নি। তাই সমাজ বোঝানোর চেষ্টা করছে, সেটা অহনারই দোষ। অহনার স্বামী কিন্তু জানে, সমস্যা আসলে তার মধ্যে। অথচ, সে-ও অহনাকেই দোষারোপ করছে। এই জায়গাতেও অহনার সঙ্গে সুদীপ্তার কোনও মিল নেই। কারণ আমার স্বামী আমাকে খুবই উৎসাহ দেন সব কিছুতে।”
জীবনে এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে সঙ্গীর পাশে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অভিনেত্রী। সুদীপ্তা বলেন, “পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও পরস্পরের কাজে পাশে থাকাটা ন্যূনতম বিষয়। এগুলি না থাকলে কোনও সম্পর্কই থাকবে না। ভাইবোনের সম্পর্কও টিকবে না। সংসারে ভাইদের জন্য বড় মাছের টুকরো রাখা হত এক সময়ে। পুরুষ না হলে পরিবার এগোবে না। আর মহিলা হলে, প্রথম দায়িত্বই হল তাঁর বিয়ের জন্য টাকা জমানো। আসলে মেয়ের বিয়ে দিতে হয়। আর ছেলেরা বিয়ে করে। কী অদ্ভুত!”
এই ভাবনাচিন্তার বিরুদ্ধে ক্রমশ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন সুদীপ্তা। ছবির পরিচালক প্রমিতাও তাঁর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। তিনি বলেন, “মেয়েদের রাস্তায় সব সময়ে বাধা থাকে। কেউ মেয়েদের সহজে রাস্তা ছেড়ে দেয় না। আমাকেই বলা হচ্ছে ‘মহিলা পরিচালক’। শুধু পরিচালক বলা যায় না! ভাল কিছু করলেও বলা হবে, মেয়েদের মধ্যে ভাল করছেন। সব পেশাতেই মেয়েদের এই বিষয়ের মুখোমুখি হতে হয়। আমাকেও হতে হয়েছে।”