স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। এই নামটির আগে বিশেষণ অবান্তর! পর্দার বাইরে তাঁর ব্যক্তিত্ব ও সাজ সব সময় আলোচনার কেন্দ্রে থাকে। সুতির হোক বা ভারী বেনারসি, স্বস্তিকার অঙ্গে যেন নতুন সংজ্ঞা পায় যে কোনও শাড়ি। অভিনেত্রী শাড়ি পরতে ভালবাসেন। সেই শাড়িতেই দিদিকে সাজালেন বোন অজপা মুখোপাধ্যায়। শাড়ি পরার ধরনে যোগ করলে নাটকীয়তা। স্বস্তিকার সাজে উঠে এল দেশের চার প্রদেশের ছবি।
লালপেড়ে সাদা শাড়ি। সাদা জমিতে লাল ডোরা। বাংলার আটপৌরে কায়দায় এই শাড়ি জড়িয়েছেন স্বস্তিকা। সঙ্গত করেছে ‘পরমা’র গাঢ় বেগনি রঙের জমকালো ব্লাউজ়। তার সঙ্গে নাকছাবি, গলায় হার, কানে দুল ও হাতে ভারী বালার সঙ্গে শাঁখা-পলা। সিঁথিতে সিঁদুর। হাতে হাতপাখা ও মাথায় ফুলের মালা।
এই পরিপূর্ণ সাজের আয়োজনে দুই বোন। কোনও ‘ব্র্যান্ডেড’ শাড়ি নয়। নিজেদের শাড়ির সম্ভার থেকেই চার প্রদেশের ‘লুক’ তৈরি করার কথা ভেবেছিলেন ওঁরা। স্বস্তিকা বলেন, “আমাদের শাড়ির সম্ভার বিপুল! এই শাড়িটি দক্ষিণাপণের একটি দোকান থেকে কেনা। ভেবেছিলাম পুজোয় পরব। মাত্র ৯৫০ টাকা শাড়িটার দাম।”
সিঁদুর বা শাঁখা পরা নিয়ে কটাক্ষ শুনতে হয় অভিনেত্রীকে। যদিও চেনা ভঙ্গিতেই সেই সব কটাক্ষ এড়িয়ে যান অথবা সপাটে জবাব দেন স্বস্তিকা। ইচ্ছে হলেই শাড়ির সঙ্গে তাঁর হাতে উঠে আসে শাঁখা-পলা। সবই তাঁর মায়ের শাঁখা-পলা। মায়ের স্পর্শ শরীরে জড়িয়ে রাখতেই এই এ সব যত্নে আগলে রেখেছেন তিনি। জানান স্বস্তিকা।
পরনে লালপেড়ে নীল শাড়ি। বাঁ হাতে ও গলায় ভারী গয়নার সমারোহ। ডান হাতে বাজু। নাকে টানা নথ। মাথার ভরাট খোঁপায় জড়ানো ফুলের মালা। সিঁথি জুড়ে জ্বলজ্বল করছে সিঁদুর। কপাল-ভরা চন্দনের আঁকিবুকি। আলো-আঁধারি ঘরে স্বস্তিকার এই উজ্জ্বল বেশ তুলে ধরে নগর বারাণসীর সাবেকি সাজ। ছবি দেখলেই দর্শকের মনে যেন বেজে ওঠে উত্তর ভারতীয় কোনও রাগের ঠুংরি। চন্দনের আঁকিবুঁকি যদিও বাংলার ছোঁয়া এনেছে অভিনেত্রীর সাজে।
ছবিতে চিত্রনাট্যের কারণে সিঁদুর পরতে হয়। সেই স্বস্তিকার সাজে এ দিন অনিবার্য অঙ্গ শাঁখা-সিঁদুর। সাজের জন্য শাঁখা বা সিঁদুর পরা নিয়ে কোনও ছুতমার্গ নেই অভিনেত্রীর। তাঁর কথায়, “সিঁদুর পরা মানেই যেন জীবন বদলে যায় মহিলাদের! কিন্তু আমাকে তো অসংখ্য অভিনেতা পর্দায় সিঁদুর পরিয়েছে। আবার কখনও রূপটান শিল্পীরা সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছেন। সমকামী রূপটান শিল্পীও পরিয়েছেন। পুজোতেও তো পুরোহিতেরা সিঁদুরের টিপ পরিয়ে দেন। তখন কি বলব, আমার স্বামী জীবিত। কিন্তু খাতায়-কলমে তিনি স্বামী নন। তাই সিঁদুর পরাবেন না? এত কথা কেন বলতে যাব!”
‘এক চুটকি সিঁদুর কি কিমত তুম কেয়া জানো...!’ ‘ওম শান্তি ওম’ ছবির এই সংলাপ তুলে এনে হাসতে হাসতে স্বস্তিকা বলেন, “এত লোকে সিঁদুর পরিয়েছে যে, আমার কাছে ‘কিমত’টা অন্য রকম। অভিনেত্রীর এত ছুতমার্গ থাকলে চলবে না।!”
পরবর্তী সাজ মহারাষ্ট্রের। মরাঠি কায়দায় কমলা রঙের পাড়ে সবুজ রঙের জমি। এমনই একটি পৈঠানি সিল্ক নিজেদের সম্ভার থেকে বেছে নিয়েছেন স্বস্তিকা ও অজপা। দুই হাতে সবুজ রঙের এক গাছা চুড়ি এবং বালা। নাকে মরাঠি নথনি। মাথায় ফুলের মালার উপরে মুকুট। গলায় ভারী গয়না। কপালের অর্ধচন্দ্র টিপেও রয়েছে মরাঠি ছোঁয়া, সিঁথিভর্তি সিঁদুরে।
ছোটবেলা থেকেই সাজতে ভালবাসেন দুই বোন। তবে স্বস্তিকা একটু বেশিই সাজতে ভালবাসেন। সেই সাজে নিজস্বতার ছাপ থাকে। অজপার কথায়, “আমরা বরাবর মায়ের সাজ অনুসরণ করে এসেছি। আর কেয়াপিসিকে (চৈতালি দাশগুপ্ত) দেখেও আমরা অনুপ্রাণিত। দু’জনেই ওই ভাবে সাজতে ভালবাসি। ওর শাড়ি খুব প্রিয়। টিপ পরতেও খুব ভালবাসে। একটা স্কার্টের সঙ্গে অনায়াসে কপালে টিপ পরে নিতে পারে ও। যে কোনও সাজই ওর সঙ্গে খুব সুন্দর ভাবে মানানসই হয়ে যায়।”
স্বস্তিকা নাকি খুব ‘সাজুনি’! দেশের যে কোনও প্রান্তে গিয়ে সেখানকার শাড়ি খুঁজে কিনে আনেন। দেশজ পোশাক পরতেই বেশি পছন্দ করেন অভিনেত্রী। অজপা বলেন, “আমরা দু’জনেই সাজতে ভালবাসি। ও কেনাকাটা করতে খুব ভালবাসে। তবে কেনার পরে যদি মনে হয়, ওকে ভাল লাগছে না, তখন আমাকে সেটা দিয়ে দেয়!”
অন্ধ্রপ্রদেশে এই শাড়ি পরার ধরনকে বলা হয় ‘গোচি কট্টু’। কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত সম্প্রদায়ের মহিলারা সাধারণত এই ভাবে শাড়ি পরতেন। শাড়ি পরার এই ধরন পছন্দ স্বস্তিকারও। দক্ষিণ ভারতের আমেজ আনতে কলাপাতা দিয়ে সেজেছে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’।
কমলা রং ও সর্ষে-হলুদ রঙের মিশেলে একটি শাড়ি পরেছেন স্বস্তিকা। শাড়ি ও ব্লাউজ়ে কাটা ডোরা। পায়ে তোড়া, হাতে ও গলায় ভারী গয়না। কানে টানা দুল। নাকের দু’পাশে নথ। এই সাজের প্রসাধনীতেও রয়েছে নাটকীয়তা। কপালে বেগনি রঙের গুঁড়ো টিপ, চোখে ঘন কাজল। টেনে বাঁধা খোঁপায় জড়ানো ফুলের মালা।
শাড়ি পরতে পারলে আর কিছু প্রয়োজন হয় না স্বস্তিকার। তবে কয়েকটি বিষয়ে নাকি খুব খুঁতখুতে তিনি। অভিনেত্রী নিজেই জানান, শাড়ির পাড়ে পিকো না করা থাকলে তিনি সেই শাড়ি পরেন না। আবার শাড়ি ঠিক ভাবে ইস্ত্রি না করা থাকলেও চলবে না! এমনই একটি ঘটনা জানান স্বস্তিকা। বিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময়ে শাড়ি পরে তৈরি তিনি। দেখেন, আঁচলের কাছে ভাঁজটা ঠিক নেই। অর্ধেক শাড়ি খুলে ইস্ত্রি করে নেন। তার পর ফের সেই শাড়ি পরেন। আর সর্বোপরি ব্লাউজ়ের ফিটিং ঠিক না হলে সাজটাই অসম্পূর্ণ বলে মনে করেন স্বস্তিকা।
বাংলা, মরাঠি, উত্তর ভারতীয় এবং দক্ষিণ ভারতীয়— এই চারটি সাজই বিশেষ ভাবে পছন্দ স্বস্তিকার। কারণ, এই চার সাজেই রয়েছে ফুলের ব্যবহার। ফুল ছাপা অথবা ফুল দিয়ে সাজতে খুব ভালবাসেন তিনি। হাসতে হাসতে দিদি সম্পর্কে অজপার স্বীকারোক্তি, ‘ফুল ছাপা বা ফুলের মালা দিয়ে সাজতে পারলে ওর মতো খুশি আর কেউ নয়। তাই তো ওকে ‘ফুলকুমারী’ বলেও ডাকি!”