এক ছবিতেই তারা

সুপারহিট ডেবিউ ছবির পরও তাঁরা হঠাৎ করে হারিয়ে যান। কিন্তু দর্শক আজও তাঁদের ভোলেননি...সুপারহিট ডেবিউ ছবির পরও তাঁরা হঠাৎ করে হারিয়ে যান। কিন্তু দর্শক আজও তাঁদের ভোলেননি...

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৭
Share:

ভাগ্যশ্রী ও গায়ত্রী

সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’-এর ওই সংলাপটি মনে আছে, যেখানে অরিন্দম মুখোপাধ্যায় (উত্তমকুমার) তার বন্ধু বীরেনকে বলছে, ‘‘আই উইল গো টু দ্য টপ, দ্য টপ, দ্য টপ’’? বাস্তবেও প্রায় সব অভিনেতাই এই স্বপ্ন বপন করেন। কারও স্বপ্ন সফল হয়, কারও হয় না। কেউ আবার ডেবিউ ছবিতেই হয়ে যান সুপারস্টার!

Advertisement

ভাগ্যশ্রী

বলিউডের ওয়ান ফিল্ম ওয়ান্ডার বললেই যাঁর নাম জিভের ডগায় চলে আসে তিনি ভাগ্যশ্রী। হিমালয় দাসানির সঙ্গে মহারাষ্ট্রের এক রাজপরিবারের মেয়ে ভাগ্যশ্রীর প্রেম মেনে নিতে পারেনি তাঁর বাবা। একদিকে বাড়ির আপত্তি, অন্যদিকে বিদেশে পড়তে চলে যায় হিমালয়। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ভাগ্যশ্রী আঁকড়ে ধরেন ‘ম্যাঁয়নে পেয়ার কিয়া’-র অফার। ডেবিউয়ে ছক্কা মারলেন। পুরস্কার আর স্রোতের মতো ছবির অফার আসে তাঁর কাছে। কিন্তু সে সব পাত্তা না দিয়ে বাবার অমতে বিয়ে করেন হিমালয়কে। বিয়ের এক বছরের মধ্যে মা হন তিনি। এর পরে বেশ কয়েকটি ছবি করেছিলেন হিমালয়ের সঙ্গে। সবক’টিই মুখ থুবড়ে পড়ে।

Advertisement

অনু অগ্রবাল

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রী অনু অগ্রবালকে প্রথম বার দেখেই মহেশ ভট্ট বলেছিলেন ‘‘ইউ আর আ স্টার।’’ কথাটা সত্যি হল ১৯৯০-এ অনুর ডেবিউ ছবি ‘আশিকি’-তেই। কিন্তু তার পর আর সাফল্যের মুখ দেখেননি! পাঁচ-ছ’ বছরের মধ্যেই বড় পরদা থেকে ভ্যানিশ। ১৯৯৯-এ এক ভয়ানক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২৯ দিন কোমায় ছিলেন। তার পর দীর্ঘ দিন উত্তরাখণ্ডের এক আশ্রমে সন্ন‌্যাসিনীর মতো জীবন কাটান। মেতে থাকতেন যোগচর্চায়। ২০১৫-তে ‘অ্যানইউজুয়াল: মেমোয়ার অফ এ গার্ল হু কেম ব্যাক ফ্রম দ্য ডেড’-এর লেখিকা অনু নিয়মিত পাওয়ার লিফটিং শুরু করেন এবং জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিয়েছিলেন।

গ্রেসি সিংহ

‘লগান’-এর স্ক্রিন টেস্টের সময় গ্রেসি সিংহকে বলা হয়েছিল ‘জুয়েল থিফ’-এর ‘হোটঁ মেঁ অ্যায়সি বাত...’ গানটির সঙ্গে নাচতে। তা দেখেই পরিচালক স্থির করে ফেলেন ‘লগান’-এর গৌরীকে। ক্লাসিক্যাল ডান্সার গ্রেসি অবশ্য সেই সময় সিরিয়াল ‘আমানত’-এর জনপ্রিয় ‘ডিঙ্কি’। সুতরাং অভিনয় ও নাচের মিশেল দিয়ে প্রথম ছবিতেই সেঞ্চুরি করে ফেললেন। পেলেন অনেক পুরস্কারও। এর পর ‘গঙ্গাজল’ ও ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ঝুলিতে পরপর দু’টি হিট ছবি। কিন্তু ‘লগান’-এর সাফল্য অতিক্রম করতে পারেননি।

গায়ত্রী যোশী

১৯৯৯-এ ‘মিস ইন্ডিয়া’র শেষ পাঁচ সুন্দরীর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিলেন গায়ত্রী যোশী! এর পর বেশ কিছু বিজ্ঞাপন ও একটি মিউজিক ভিডিয়ো। ২০০৪-এ শাহরুখের বিপরীতে ডেবিউ ছবি ‘স্বদেশ’-এ বিপুল পরিচিতি পেলেন। এই ছবির ‘গীতা’ প্রবাসী ‘মোহন’কে বিয়ে করে বিদেশ যেতে চাননি। কিন্তু রিয়্যাল লাইফে হল উল্টো। গায়ত্রী ২০০৫-এ বিয়ে করলেন প্রবাসী ব্যবসায়ী বিকাশ ওবেরয়কে। স্বামী-পুত্র নিয়ে তিনি এখন ঘোর সংসারী।

অন্তরা মালি

জনশ্রুতি, পরিচালক রামগোপাল বর্মা তাঁর নায়িকাদের প্রেমে হাবুডুবু খান, কখনও উর্মিলা মাতন্ডকর, কখনও নিশা কোঠারি । ২০০২-এর পর সেই তালিকায় যোগ হল অন্তরা মালির নাম। তেলুগু ছবিতে তাঁর অভিনয় দেখার পর রামগোপাল তাঁকে কাস্ট করেন ‘কোম্পানি’-র জন্য। তার পর রামগোপালের ‘রোড’, ‘ডরনা মানা হ্যায়’, ‘ম্যায়ঁ মাধুরী দীক্ষিত বাননা চাহতি হু’, ‘গায়েব’, ‘নাচ’... চার বছরে একটার পর একটা হিট। ঠিক যখন বলিউডের মাটি শক্ত হচ্ছে, সেই সময়ই স্বেচ্ছায় ময়দান ছাড়লেন তিনি।

বিজয়েতা পণ্ডিত

১৯৮১ সাল ‘লভ স্টোরি’র ‘বান্টি’ ওরফে কুমার গৌরব ও ‘পিঙ্কি’ ওরফে বিজয়েতা পণ্ডিতের প্রেমকাহিনিতে বুঁদ হয়েছিল দর্শক। কিন্তু বিজয়েতার অভিনয়ের চেয়ে সংগীতের প্রতি অনুরাগ ছিল বেশি। পণ্ডিত যশরাজের ভাগ্নি বলে কথা। বিয়ে করলেন কমপোজার আদেশ শ্রীবাস্তবকে। লভ স্টোরির ছ’বছর পর আবার একটি সুপার হিট ছবি করেছিলেন তিনি। সেটা অবশ্য বাংলা ছবি, ‘অমর সঙ্গী।’ প্রায় তিরিশটি ফিল্মে তিনি প্লেব্যাক করেছেন। কিন্তু আজও মনে পড়েন তাঁর জীবনের দুই হিট ছবির জন্যই।

লক্ষ্মী নারায়ণ

২০০৪-এ ‘হলচল’-এ ‘অঞ্জলি’র (করিনা কপূর) ঠাকুমা লক্ষ্মীকে দেখে অনেকেই বলে ফেলেছিল, ‘আরে জুলি, জুলি!’ ১৯৭৫-এর ব্লকবাস্টার ছবি ‘জুলি’ মুক্তি পাওয়ার পর লক্ষ্মী নারায়ণের নামটা ‘জুলি’ই হয়ে গিয়েছিল। ‘জুলি’র জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। প্রথম মলয়ালম ছবি ‘চাট্টাকারি’র জন্য প্রচুর পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। এই ছবির গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছিল ‘জুলি’। কিন্তু এই সুপারহিট ছবির পর বলিউডে দেখা যায়নি তাঁকে।

মন্দাকিনী

ফরসা, কটা চোখের সুন্দরী মেয়েটি নায়িকা হতে চায়। উত্তরপ্রদেশ থেকে মুম্বই এসেছে সেই আশায়। কিন্তু তিনজন পরিচালক তাঁকে রিজেক্ট করেছেন। মনোবল ভাঙতে শুরু করেছে যশমিন জোসেফের। সেই সময় রাজ কপূর শেষ করে ফেলেছেন ‘রাম তেরি গঙ্গা ময়লী’র স্ক্রিপ্ট, ছেলে রাজীব কপূরকে লঞ্চ করবেন। অথচ ছবির নায়িকা ‘গঙ্গা’র খোঁজ চলছে। তখনই তাঁর চোখ আটকে যায় এই বাইশ বছরের মেয়েটিতে। যশমিনের নাম বদলে রাখা হয় মন্দাকিনী। ৩২ বছর পরও ঝরনার জলে স্নানরত ‘গঙ্গা’ আজও ঘুম উড়িয়ে দেয়। ‘রাম তেরি...’ পর কাজ করলেও মন্দাকিনী আর ‘গঙ্গা’ হতে পারেননি। দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে নাম জড়িয়ে যাওয়ায় ইন্ডাস্ট্রির দরজাও আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায় তাঁর কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন