সংবেদনশীল ইতিহাসের যথাযথ উপস্থাপনে দুর্দান্ত এয়ার লিফ্ট

আগস্ট, ১৯৯০। কুয়েতে হামলা চালায় ইরাকের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেনের সেনা। কুয়েতের বিরুদ্ধে ইরাকের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, কুয়েত নাকি ইরাকের তেল চুরি করে বিদেশের বাজারে বিক্রি করছে।

Advertisement

সুদীপ দে

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:৪৬
Share:

আগস্ট, ১৯৯০। কুয়েতে হামলা চালায় ইরাকের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেনের সেনা। কুয়েতের বিরুদ্ধে ইরাকের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, কুয়েত নাকি ইরাকের তেল চুরি করে বিদেশের বাজারে বিক্রি করছে। এই নিয়ে দীর্ঘ বাদানুবাদের পর কুয়েতে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন সাদ্দাম। হামলা চালানোর কিছুদিন আগেই কুয়েতকে ইরাকের উনিশতম প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করেন সাদ্দাম। ইরাকি সেনার অতর্কিত হামলায় একেবারে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে কুয়েত। বিশ্বের আর পাঁচটা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কুয়েতের। আড়াই দশকেরও আগে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যায় ভারতের নামও। এই সময় যুদ্ধ বিদ্ধস্ত কুয়েতে আটকে পড়েন প্রায় ১,৭০,০০০ ভারতীয়। এই দেড় লক্ষাধিক ভারতীয়কে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার জটিল, সংবেদনশীল ইতিহাসকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে অক্ষয় কুমারের সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবি ‘এয়ার লিফ্ট’। ঘটনার সংবেদনশীলতাকে মাথায় রেখে বেশ যত্ন এবং গুরুত্বের সঙ্গেই ছবিটি তৈরি করেছেন পরিচালক রাজা মেনন।

Advertisement

‘এয়ার লিফ্ট’-এর গল্পে রঞ্জিত কটেয়াল কুয়েতের একজন বিত্তশালী ভারতীয় ব্যবসায়ী। ব্যবসার সূত্রে কুয়েত এবং ইরাকের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল এই ভারতীয় ব্যবসায়ীর। মূলত এই প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর কাঁধে ভর করেই লক্ষাধিক ভারতীয় ঘরে ফেরার জন্য আশায় বুক বাঁধে। আর দেশে ফেরার আগে পর্যন্ত এতগুলো মানুষের জন্য খাবার, ওষুধ, নিরাপদে রাখার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়ে নেন রঞ্জিত। তাঁর লড়াইটা মোটেই সহজ ছিল না। কারণ, তাঁর উপর নির্ভর করে থাকা মানুষের সংখ্যাটাও তো ১,৭০,০০০। তাই চরম বিপদের মুখে অসহায় এতগুলো ভারতীয়র কাছে তিনিই হয়ে ওঠেন ‘সরকার’ বা অভিভাবক। বাস্তবভিত্তিক এই চিত্রনাট্যে যেখানে পৃথিবীর এক যুদ্ধ বিদ্ধস্ত ইতিহাস উঠে এসেছে সেখানে রঞ্জিত কটেয়ালের ভূমিকায় অক্ষয় কুমারের অভিনয় একেবারে নিখুঁত। তবে শুধু অক্ষয় নয়, রঞ্জিত কটেয়ালের স্ত্রীর ভূমিকায় নিমরত কউরের অভিনয়ও অনবদ্য। ‘লাঞ্চবক্স’ ছবিতেও অবশ্য তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন কেড়েছিল। এ ছাড়া কুয়েতে ইরাকি সেনার দায়িত্বে থাকা মেজর খালাফ বিনের ভূমিকায় ইনামুল হক অসাধারণ। সত্যি বলতে কী, এ ছবিতে প্রত্যেকেই নিজেদের চরিত্রে যথেষ্ট যত্ন এবং গুরুত্ব দিয়েই কাজ করেছেন। প্রত্যেকেই নিজেদের সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

না হলে পৃথিবীর যুদ্ধবাজ কিছু দেশের সৌজন্যে এখনও মানবসভ্যতাকে যে ‘উদ্বাস্তু’ সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তার জটিল এবং অবশ্যই সংবেদনশীল দিকগুলো এত নিখুঁত ভাবে এ গল্পে ফুটে উঠত না। তা ছাড়া প্রায় ছাব্বিশ বছর আগের এয়ার ইন্ডিয়ার সেই দৃষ্টান্তমূলক অভিযান, যার মাধ্যমে কুয়েতে আটকে পড়া ১,৭০,০০০ ভারতীয়কে ৪৮৮ টি ফ্লাইটের মাধ্যেমে দেশে ফিরিয়ে আনার এই ঘটনা ফুটে উঠেছে এই গল্পে। এ ছবি মনে করিয়ে দিল বেন অ্যফ্লেক অভিনীত হলিউডের ছবি ‘অর্গো’র কথা।

Advertisement

পরিচালনা, অভিনয়, অ্যাকশন— প্রায় সবকটি ক্ষেত্রেই বেশ সফল ‘এয়ার লিফ্ট’। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই বাণিজ্যিক ভাবেও সাফল্যের মুখ দেখছে ছবিটি। ২২ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়া ‘এয়ার লিফ্ট’-এর ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট বক্স অফিস কালেকশন ৫৪.৭ কোটি টাকা। ছবির আয় মোটেই মন্দ নয়! নিখুঁত চিত্রনাট্য, অসাধারণ অভিনয়, দুর্দান্ত সিনেমাটোগ্রাফি এবং সংবেদনশীল ইতিহাসের যথাযথ উপস্থাপন ‘এয়ার লিফ্ট’ ছবিটিকে একটা অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।

আরো খবর : ঘুষ দিয়েছি, প্রতারণা করেছি... বলি-তারকাদের ৮ স্বীকারোক্তি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন