অদ্ভুত ভাবে সৌরভের সঙ্গে আমার নামটাও জুড়ে গেল

সে দিন স্কোরবোর্ডে লেখা ছিল গাঙ্গুলি বোল্ড অ্যালান মুলালি। ২০ বছর পর অধুনা অস্ট্রেলিয়ার পারথ নিবাসী সেই ইংরেজ বোলারকে ফোনে ধরলেন সায়ন আচার্য।কুড়ি বছর পরও সেই চাউনিটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। হেলমেটের আড়ালে সৌরভ গাঙ্গুলি মনের কোনায় রাগটা পুষছে। মিনিট কয়েক আগেও তাকে ফুঁসতে দেখেছি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ০৬:১০
Share:

২২ জুন ১৯৯৬। সৌরভের উইকেট নিলেন মুলালি। অবশ্য তার আগে ১৩১ করে ফেলেছেন সৌরভ।

কুড়ি বছর পরও সেই চাউনিটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। হেলমেটের আড়ালে সৌরভ গাঙ্গুলি মনের কোনায় রাগটা পুষছে। মিনিট কয়েক আগেও তাকে ফুঁসতে দেখেছি। অবাক হয়ে দেখেছি কী করে আমারই সমবয়সী একটা ছেলে এক মুহূর্তে চুপ করিয়ে দিতে পারে অ্যালেক স্টুয়ার্টের মতো সিনিয়রকে।

Advertisement

১৯৯৬-এর ২১ জুনের মেঘলা সকাল সেটা। প্রথম ইনিংসের ৩৪৪-এর জবাবে ভারত তখন প্রথম উইকেট হারিয়ে সমস্যায়। আমাদের অধিনায়ক মাইকেল আথারটন সবে ফিল্ড টাইট করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমন সময় ময়দানে আবির্ভাব ছোটখাটো চেহারার সৌরভ নামক তরুণের।

কানাঘুষোয় শোনা, সে তরুণ তত দিনে ইন্ডিয়া ডিসকার্ড — ১৯৯২এর পর দলছুট। আজ কি না তার ব্যাটিং অভিষেক। তাও আবার ফার্স্ট ডাউনে। লর্ডসে! লং অফ থেকে ডমিনিক কর্ক হাসছে তখন। বল হাতে তৈরি আমি। আরেকটা ইন্ডিয়ান উইকেট ফর লাঞ্চ। মন্দ কী!

Advertisement

অমন সময় স্টুয়ার্টের নির্মম রসিকতা: ‘‘ওহে অ্যালান। এ ছোকরাকে একটু অভ্যর্থনা জানাও দেখি। মুখটায় না হয় একটু লাগলোই। তুমি পারবে অ্যালান।’’

ক্রিকেট বিশ্বে এটাকে বলা হয় জেন্টলম্যান্স র‌্যাগিং। সিনিয়ররা তাদের হাঁটুর বয়সী জুনিয়রদের একটু ভয় দেখায়, যাতে তারা একটু চাপে থাকে। চুপ করে থাকাটাই এখানে দস্তুর। কিন্তু সৌরভ, সৌরভই। চুপ থাকা তার ধাতে নেই। স্টুয়ার্টের কথা শেষ হয়েছে কী হয়নি, হঠাৎ শুনলাম তার গনগনে উত্তর। ‘‘এই যে মিস্টার স্টুয়ার্ট। আপনি খুব সম্মানীয় ক্রিকেটার। চুপ করে আমায় অভিষেকটা করতে দিন তো মশায়।’’

তারপর সেই চাউনি। বলতে দ্বিধা নেই, বোলিং ক্রিজে দাঁড়িয়ে মনে মনে কুর্নিশ জানাচ্ছিলাম কলকাতার এই তরুণকে। বাকিটা তো ইতিহাস। খেলার শেষে যখন ছেলেটির সঙ্গে দেখা হল, তার মুখে তখন হাসি। ততক্ষণে সৌরভ ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন তারকা — অভিষেকেই শতরান, লর্ডসে তখন নতুন নায়ক কোথাকার এক ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’।

তবু ওর সঙ্গে আমার নামটাও অদ্ভুতভাবে জুড়ে গেছিল। স্কোরবোর্ড বলছিল, এস সি গাঙ্গুলি বোল্ড অ্যালান মুলালি ১৩১। সৌরভের ওই ইনিংস আমার কেরিয়ারে একটা মাইলস্টোন। দেখতে দেখতে সেই দিনটাও বছর কুড়ি পুরনো হয়ে গেল। ভাবলে এখনও মনে হয়, এই তো সে দিন চোখের সামনে দুই তারকাকে জন্মাতে দেখলাম — সৌরভ আর রাহুল দ্রাবিড়। অভিষেকে একজনের শতরান। অন্যজনের ৯৫। এদের জুটিটা অনেকটা ডেভিড গাওয়ার আর জেফ্রি বয়কটের মতো। যদি ওয়ান ডে তে ম্যাচ জিততে হয়, আপনার প্রয়োজন সৌরভ, যদি চারদিনে ম্যাচ বাঁচাতে হয় ভরসা একমাত্র দ্রাবিড়।

হতে পারে ওর অভিষেকের উইকেটটা আমিই নিয়েছিলাম কিন্তু তা সত্ত্বেও সৌরভের ফ্ল্যামবয়েন্স আমাকে মুগ্ধ করেছিল। ব্রায়ান লারা ছাড়া এত ফ্ল্যামবয়েন্স আর কোনও ক্রিকেটারের মধ্যে দেখিনি। সচিন তেন্ডুলকর বা ওয়াসিম আক্রমের মতো গিফটেড প্লেয়ার সৌরভ নয়। তার স্ট্রাগলটা অনেক বেশি। আজ মনে হচ্ছে বেশ হয় যদি এক সন্ধ্যায় ফের দেখা হয় ‘ওল্ড ফো’‌য়ের সঙ্গে। ব্যস্ত শিডিউলে সময় বের করে একটু স্মৃতি রোমন্থন। খুব শিগগির আবার ভারতে যাব, সৌরভ। দেখা করার ইচ্ছে রইল। টিল দেন...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন